তের পার্বণ শস্যদাত্রী তুষূ ব্রত

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

এপার ওপার দুই বাংলাতেই তৃষু বা তোষলাব্রত অনুষ্ঠিত হয়, সার মাটি দিয়ে ক্ষেতের উর্বরতা বৃদ্ধিই এই ব্রতের উদ্দেশ্য৷ ব্রতের শুরু অগ্রহায়ণের সংক্রান্তি থেকে, আর শেষ পৌঁষের সংক্রান্তিতে!

তুষু পূজা আদতে শসাদাত্রী লক্ষ্মীরই পূজা! কারণ পৌষ মাস লক্ষ্মী মাস! ধানের খোসা অর্থাৎ তুষ থেকে তুষুর উৎপত্তি৷ অথবা পৌষ মাস পুষ্যা  নক্ষত্রের অপর নাম ‘তষ্য’৷ অনেকের মতে তিষ্যা নক্ষত্রকালীন উৎসব বলেই এর নাম তুষু৷’’

 এই ব্রতটি মেয়েরা এলোচুলেই সম্পন্ন করে৷ ‘‘গাইয়ের গোবর, সরষে ফুল/আসন পিঁড়ি এলোচুল৷’’ এই ‘‘এলো চুল’’ গোছা গোছা অঢেল শস্যের প্রতীক৷

‘প্রতিদিন সকালে ব্রতধারিণী মেয়েরা স্নানান্তে আলোচালের তৃষ আর গোবর সহযোগে ছবুড়ি ছ-গণ্ডা অর্থাং ১৪৪ খানি গুটি তৈরি করে৷ নতুন সরা বা তিজেলে বেগুন পাতা বিছিয়ে তার ওপরে প্রতিদিন ৪ খানি করে গোবরের গুটি রাখতে হয়৷ প্রতিটি গুটিতে পাঁচ গাছি করে দুর্বঘাস গুঁজে দিতে হয়৷ তার ওপর ছড়িয়ে দিতে হয়  নতুন আতপচালের তুষ আর কুঁড়ো৷ এছাড়া সরষেফুল,, মূলোরফুল, শিমফুল, বেগুনফুল ইত্যাদি দিয়ে বলতে হয় -

তূঁষ তুঁষলি, তুমিকে৷

তোমার পূজা করে যে -

ধনে ধানে বাড়ন্ত,

সুখে থাকে আদিন্ত৷

পৌষ সংক্রান্তিতে সূর্যোদয়ের আগেই ব্রতধারিণী মেয়েরা একটি সরায় ঘিয়ের প্রদীপ জেলে সেগুলি, সারি সারি মাথায় করে নদীতে যায়৷স্নানান্তে তুষুর সরা নদীতে ভাসিয়ে, পুজোর সারমাটি আর সূর্য - চাষের এই দুই অপরিহার্য উপাদানের বন্দনায় মেয়েরা কত-না গান গায়, নদীর জলে ঝাঁপাঝাঁপি করে৷ আর খেলে বালি খেলা৷