ঊষক ঃ ঊষ+ কন্= ঊষক৷ ভাবারুঢ়ার্থে নোনা জল সংক্রান্ত, যোগারূঢ়ার্থে নোনা জলে বসবাসকারী শুশুক porpoise of saline water)৷ যদিও ‘‘ঊষক’’ মানে নোনা জলের শুশুক কিন্তু লৌকিক সংস্কৃতে যে কোন জলের শুশুক সম্বন্ধেই ‘ঊষক’ শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ শুশুকের অন্য নাম ‘শিশুমার’৷ প্রাণীতত্ত্ববিদ্রা বলেন, প্রাণের প্রথম আবির্ভাব জলেই ও জল থেকেই বিভিন্ন প্রাণী আত্মরক্ষার তাগিদে স্থলচর বা খেচর হয়েছিল৷ সেকালের জলচর প্রাণীরা সবাই ছিল অণ্ডজ৷ তাই জলচর থেকে যারা স্থলচর বা খেচর হয়েছিল তারা সকলেই প্রারম্ভিক স্তরে অণ্ডজ্ প্রাণী ছিল৷ যারা স্থলচর হয়েছিল, প্রারম্ভিক স্তরে তারাই হয়েছিল সরীসৃপ reptile যেমন ডাইনোসর, কক্টেসিয়াস প্রভৃতি)৷ প্রাচীনকালে ডাইনোসর, কক্টেসিয়াস সবাই ছিল অণ্ডজ৷ তাদের যে সকল প্রত্যক্ষ ৰংশধর বিভিন্ন প্রজাতির মাধ্যমে আজও পৃথিবীতে রয়েছে, যেমন কুমীর, টিকটিকি, গিরগিটি, সাপ,---তারা সবাই অণ্ডজ৷ জলচর থেকে যারা খেচর হয়েছিল অর্থাৎ পাখীরা সবাই অণ্ডজ্৷ স্থলচর হবার পরে সরীসৃপেরা বিবর্তিত অবস্থায় যখন ৰুকে ভর দিয়ে চলা ছেড়ে দিল চলতে শুরু করেছিল পায়ে ভর দিয়ে বা হাতে-পায়ে ভর দিয়ে তখন তারা তাদের অণ্ডজ-বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করে স্তন্যপায়ী হয়ে গেল৷ এই স্তন্যপায়ী হবার মাধ্যমিক স্তরে কিছুকালের জন্যে তাদের মধ্যে উভয় স্বভাবই অল্পবিস্তর থেকে গেছল৷ যেমন, কেউ অণ্ডজ ছিল ও তৎসহ ছিল স্তন্যপায়ী কেউ অণ্ডজ ছিল না, আবার স্তন্যপায়ীও ছিল না৷ বর্তমান পৃথিবীর কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আজও এই ধরণের মাধ্যমিক প্রজাতির জীব অল্পবিস্তর আছে৷ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দ্বীপে বসবাসকারী ডাকৰিল এই ধরণের জীব৷ এরা বিড়াল জাতীয় কিন্তু অণ্ডজ, অথচ স্তন্যপায়ী তৰে প্রাকৃতিক নিয়মে এই সমস্ত জীব পৃথিবীতে আর বেশী দিন থাকৰে না৷ কিছু স্থলচর জীব হাতের বা শরীরের পর্দার সাহায্যে হাওয়া কেটে ওড়ে৷ তারা স্থলচর, অণ্ডজ্ ও স্তন্যপায়ী৷ উড়তে পারলেও তারা পাখী নয়৷ যেমন বাদুড়, চামচিকে, উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী flying squirrel)৷ কিছু জীব-জন্তু সরীসৃপ স্বভাব ছেড়ে দিয়ে স্থলচর ও স্তন্যপায়ী হবার পরে আত্মরক্ষার তাগিদে আৰার জলে নেবেছে৷ আজ জলচর হলেও তাদের মধ্যে স্থলচরত্বের অনেকগুলো স্বভাব রয়ে গেছে৷ এদের মধ্যে আমাদের পরিচিত জীব রয়েছে তিমি whale) ও শুশুক৷ এরা জলচর হলেও মৎস্যগোত্রীয় নয়৷ এরা অণ্ডজ ও এদের শাবকেরা স্তন্য পান করে৷ অনেকে তিমি-কে মাছ ৰলে ভুল করেন৷ তিমি তিমি-ই৷ তিমি মাছ নয়৷ সিন্ধুঘোটক walrus), সীল seal) -এরাও মাছ নয়৷ চিংড়ি, অক্টোপাস, কাঁকড়া, কচ্ছপ আংশিকভাবে জলচর, আংশিকভাবে স্থলচর হলেও তারা মাছ নয় ও অণ্ডজ্৷
মাছের আদি পুরুষ সীলাকন্থের সঙ্গে চিংড়ি, অক্টোপাস, কচ্ছপ ও কাঁকড়ার কোন দিক দিয়েই মিল নেই৷ তবে তাদের মধ্যে একটি মিল রয়েছে যে তারা সবাই অণ্ডজ৷ অক্টোপাসের সঙ্গে স্থলচর মাকড়সার বেশ কয়েকটি বিষয়ে মিল আছে৷ তাই অনেকের মতে অক্টোপাস জলচর হলেও তারই একটি শাখা মাকড়সায় রুূপান্তরিত হয়েছিল কোন সুদূর অতীতে স্থলচর হবার পরে৷ তবে চিংড়ির সঙ্গে উচ্চিংড়ের উড় + চিংড়ে= উচ্চিংড়ে অর্থাৎ উড়ুক্কু চিংড়ে) ৰড় একটা মিল নেই৷
যাই হোক, শুশুকের কথায় আসা যাক৷ শুশুক কোনসুদূর অতীতে ডাঙ্গার জানোয়ার ছিল৷ আজ হয়ে গেছে জলের জানোয়ার ৷ কিন্তু প্রশ্বাস নেবার সময় তাকে হুশ করে জলের ওপর ভেসে উঠতে হয়৷ স্বভাবে মোটামুটি শান্ত হলেও শুশুক সাধারণতঃ আত্মরক্ষার তাগিদেই কাউকে কামড়ায়, অন্যথায় নয়৷ শিশুকে মারা তার স্বভাব নয়৷ তাই ‘শিশুমার’ শব্দটি তার যথার্থ পরিচিতি বহন করে না৷
কিছু মাছ আছে যারা জলচর হলেও লক্ষ লক্ষ বছর ধরে স্থলচর হৰার প্রয়াসে রত রয়েছে৷ এ জন্যে তাদের শারীর সংস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে৷ ডাঙ্গায় তারা দীর্ঘ সময় ৰেঁচেও থাকে৷ এই ধরণের মাছকে আমরা জীয়ল মাছ ৰলি-ন্যাটা, কই (সং, ‘কর্তকী’, মৈথিলীতে ‘কবঈ’), শিঙ্গী (শৃঙ্গিকা), মাগুর (মদ্গুর) প্রভৃতি৷ আরও কয়েক লক্ষ বছর বেঁচে থাকলে হয়তো বা এরা ডাঙ্গার জানোয়ারে পরিণত হৰে৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)