স্বাস্থ্য বলতে সাধারণতঃ মানুষের ধারণা শরীরটা সুস্থ থাকা৷ না, শুধু শরীর সুস্থ থাকলেই তাকে স্বাস্থ্য বলা হয় না৷ ধরা যাক, একজন শারীরিক ভাবে সুস্থ কিন্তু প্রচণ্ড ধরণের মানসিক বিষাদে ভুগছে৷ তাকে কী করে সুস্থ বলতে পারি! কিছুদিন পর মানসিক বিষাদ থেকে তার পরিপাক ক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দেবে, ও তারপর নানান দৈহিক রোগেরও শিকার হবে৷ তাই ট্টবলছি, কেবল শারীরিক সুস্থতাকে স্বাস্থ্য বলে না৷
আসলে মানুষের তিনটি দেহ৷ স্থূল দেহ–যাকে আমরা শরীর বলি, মানস দেহ বা মন আর আা৷ একটা ফুলের ধরা যাক চারটি পাঁপড়ি৷ ফুলটিকে সুন্দর তখন বলব, যখন তার সমস্ত পাঁপড়িগুলি সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে৷ ঠিক তেমনি, মানুষের প্রকৃত স্বাস্থ্য বা সার্বিক স্বাস্থ্য মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক স্বাস্থ্য– এ তিনের সমষ্টি৷ যোগীশ্বর শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী বলেন, ‘‘ন্দ্ব ড়্ত্র্লন্দ্ব ব্ধপ্স ত্ব্ন্দ্ব হ্মড়ম্ভব্দন্ন্তুত্রপ্ত্ ন্দ্রন্ব্ধ, প্পন্দ্বুব্ধ্ত্রপ্তপ্তম্ভ্ ব্দব্ধব্জপ্সুন্ধ স্তু ব্দহ্মন্ব্জন্ব্ধব্ভ্ত্রপ্ ন্দ্বপ্তন্দ্ব্ল্ত্রব্ধন্দ্ব্’’ (আমাদের শারীরিকভাবে সুস্থ, মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে সমুন্নত হতে হবে৷’’)
মানুষ মন প্রধান জীব৷ পশুরা শরীর প্রধান৷ তাই পশুর স্বাস্থ্য বলতে তার শারীরিক সুস্থতাকেই বোঝানো হয়৷ কিন্তু মানুষের মন যদি উন্নত না হ’ল, বিকশিত না হ’ল তাহলে সে তো পশুর সমান৷ মনের উন্নতি ও বিকাশ বলতে কী বোঝায়
মন নানান ধরণের চিন্তাধারার সমষ্টি৷ এগুলোর যোগের ভাষায় বলা হয় ‘বৃত্তি’৷ যেমন ক্রোধ, লোভ, মোহ, ঘৃণা–মনে এ ধরণের ‘বৃত্তি’ যেমন রয়েছে, তেমনি সদিচ্ছা, বিবেক, দয়া প্রভৃতি উন্নত ‘বৃত্তি’ও রয়েছে৷ প্রথমে যে সমস্ত বৃত্তির নাম বললুম, সাধারণতঃ এগুলোকে আমরা কু–বৃত্তি বলি, কারণ, এগুলো মানুষের মনকে নীচের দিকে নিয়ে যায়৷ আর বলা হয়, ‘মনো করোতি কর্মাণি’–মনই কাজ করে৷ মন যেমন চায়, মানুষের কাজকর্ম তেমনি হয়৷ আবার সদিচ্ছা, বিবেক, দয়া বা সেবা ভাব–এই সমস্ত মানসিক ভাবনা বা বৃত্তি হ’ল শুভবৃত্তি৷ এগুলি মানুষকে শুভপথে পরিচালিত করে৷
আমাদের দেখতে হবে, কীভাবে কু–বৃত্তির ওপর আমরা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারি ও শুভবৃত্তিগুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারি৷ যোগের প্রধান লক্ষ্য কিন্তু এইটাই৷ মনে কু–বৃত্তিকে সংযত করে ও মনকে শুভের দিকে পরিচালিত করা৷ আর সমস্ত ভাবনার উৎস হ’ল আত্মা৷ আত্মা সম্বন্ধীয় যে বিকাশ বা উন্নতি তাই হ’ল আধ্যাত্মিক উন্নতি৷
যোগ সাধনা–যার মধ্যে যেমন রয়েছে যোগাসন, তেমনি রয়েছে মানসিক একাগ্রতা ও ধ্যানের অনুশীলনও৷ তাই যোগ প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের পদ্ধতি, যা উপযুক্ত আচার্যের কাছ থেকে শিখে নিয়ে অভ্যাস করতে হয়৷ যোগ পুরোপুরি বৈবহারিক৷ পরে এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে বিস্তারিত আলোচনা করব৷
- Log in to post comments