যুদ্ধবাজদের স্বর্গরাজ্য পৃথিবীতে শান্তির পরশ দিতে পারে---একমাত্র প্রাউটের আর্থসামাজিক তত্ত্বের বাস্তবায়ন

লেখক
প্রভাত খাঁ

মানুষের জীবনে শান্তি কোথায়! এর সন্ধানই হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড়ো খোঁজা৷ তবে সেটা শুধু পারে আত্মবিশ্বাসী মানুষজন অন্য কোন প্রাণী নয়৷ এর একমাত্র সদুত্তর পাওয়া যায় প্রাণী মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বে, যদি এই তত্ত্বকে কোন মানুষ বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে ব্রতী হয়৷ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষই পারে শান্তি পেতে যদি সে এটার সাধনায় ব্রতী হয়৷ মানুষের তিনটি দিক আছে যথা দেহ, মন ও আত্মা এই তিনের যে অভাব তাদের পূর্ত্তির জন্য আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হয়৷ দেহের প্রয়োজন অন্ন,বস্ত্র,শিক্ষা,চিকিৎসা ও বাসস্থান এই পাঁচ বিষয় তার চাইই চাই৷ তা না হলে দেহের অভাব বোধ তাকে অশান্তির আগুনে পোড়াবে৷ এই অভাব যদি না থাকে তা হলে সেই মানুষ এগুতে পারবে আর শান্তিও পাবে৷ তাই কথায় আছে পেটের জ্বালা বড় জ্বালা৷ এই স্থূল জগতে ঐ পাঁচটি জিনিস নিয়েই চলছে ছল চাতুরী ও লাঠালাঠি৷ এই পাঁচটি জিনিষ নিয়ে চলছে নানা ধরণের   কারচুপী৷ নিম্নমধ্যবিত্ত, দারিদ্র্যসীমার নীচে যারা পড়ে আছে তারা শিকার হচ্ছে বঞ্চনার৷ অভাবের তাড়ণায় তাদের রাতের ঘুমই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস না পাওয়াতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে৷ তাদের কাছে শান্তি দূরস্ত৷

মানুষ মননশীল জীব, তাই তার মনের অভাবপূরণ হওয়াও জরুরী৷ তার দরকার স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা পাওয়া, তাছাড়া মনের খাদ্য হলো নাচ গান খেলাধূলা, সু-সাহিত্য কবিতা পাঠ যার মধ্য দিয়ে মন তৃপ্তি পায় তার যোগান, তাছাড়া তার মনের মধ্যে  যে সব সম্পদ আছে তাদের বিকাশের সুযোগ পাওয়া৷ আর তার দ্বারা সে সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জনের  সুযোগ  পায়ে শান্তি লাভ করবে৷ এই অভাবপূরণের ব্যবস্থা করাটা হলো সমাজের দায়িত্ব আর শাসকদলের৷

তৃতীয়টি হলো মানুষ এর আত্মজ্ঞানকে পূর্ত্তির সুযোগ দান করা৷ এটি পাওয়া যায় সৎগুরুর সান্নিধ্যে৷ এটাই হলো আধ্যাত্মিক জীব মানুষের সবচেয়ে অতি প্রয়োজনীয় সম্পদ শান্তি লাভের৷ এটি হলো অসীম ও অনন্ত সম্পদ৷ এর কোন খামতি নেই৷ তাই মানব জীবনে ত্রয়ীর বিকাশ ঘটলে অর্থাৎ অভাবপূরণ হলেই তার জীবনে পূর্ণ শান্তির অভাব ঘটবে না৷

আমি কে? এইটি হলো সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ণ মানুষের জীবনে৷ নিজেকে আধ্যাত্মিক সাধনার মধ্যে যুক্ত করে যতো জানবে সে ততই শান্তি পাবে অর্থাৎ আনন্দলাভ করবে৷ তখন তার জীবনে কোন অভাব থাকবে না৷ ধীরে ধীরে সে হয়ে উঠবে সার্থক মানুস এর সার্থক মানুষ অর্থই হবে সার্থক মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ৷ আজ মানুষ হাঁৎড়ে বেড়াচ্ছে---শান্তি পেতে কিন্তু শান্তি কোথায় তার জানা নেই৷ গীতায় তাই বলা হয়েছে আত্মানাং বিধি---অর্থাৎ আত্মাকে জান৷ পরমাত্মা হলেন সকলেরই আপন, তিনি শ্বাশ্বত ও অনন্ত৷ আর পূর্ণ শান্তি লাভ তাকে পেলেই৷ তাই বলা হয় আমরা যথা হতে আসি তথায় ফিরিয়া যাই দীর্ঘ প্রবাসের পর৷ খুব সোজা কথা হলো মানুষের জীবনটাই সেই পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়া৷ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের কথা মায়ার সংসারে মানুস সেটা  ভুলে যায়৷ তাঁর কথা শুণতেই ভয় পায়৷ বর্ত্তমান জগতে  বস্তুবাদে, ভোগবাদেই, আটক পড়েছে মানুষ৷ ওসবের  ধার ধারে কাছে যায় না তাই স্থূলবস্তু পেয়ে ও তার মনে শান্তি নেই৷ শুধু পাই পাই রব আর হারাই হারাই আতঙ্ক৷ তাই রবীন্দ্র বলেছেন তাঁর অন্তিম কবিতায়---‘‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছো আছন্ন করি বিচিত্র ছলনা জালে হে ছলনাময়ী৷’’

মনে রাখা দরকার মানুষ ভোগ সর্বস্ব জীব নয়, মানুষ আধ্যাত্মিক জীব৷ তাই বলা হয় মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব৷ তার কাজই হলো নিজেকে জানা৷ সেটা জানতে পারলেই অনন্ত শান্তি  আর অনন্ত আনন্দ৷ আনন্দমার্গই হলো সবার পথ৷ কারণ শ্রষ্ঠা সেই পথে বিচরণ করেন৷

তাই দেহকে কেন্দ্র করে তিনটি দিকের পূর্তি ঘটাতে হবে৷ তা হলেই অনন্ত শান্তি৷ স্থূল ভোগে ও প্রাপ্তিতে আছে দুঃখ৷ মানব জীবন লাভের মূল লক্ষ্যই হলো সেই মঙ্গলময় ঈশ্বর সম্প্রীতি, কিন্তু মায়ার সংসারে এসে সাধারণ মানুষ বিষয়, আশায়ে মুগ্দ হয়েই থাকে৷ এই টানাটানির মধ্য দিয়েই যেতে হয় মানুষকে৷

ভারতবর্ষের মুনি ঋষিগণ আমাদের জীবনের লক্ষ্যটা কি তার সন্ধান দিয়ে গেছেন৷ তাই তাঁরা ঘোষনা করেছেন--- মানুষ হলো অমৃতের সন্তান৷ তাই তাকে সেই অমৃতকে লাভ করতেই হবে৷ তাঁরাই ঘোষণা করেছেন ভূমাকে লাভ করাই  হলো জীবনের লক্ষ্য৷ তাতেই সুখ অর্থাৎ শান্তি৷ তাছাড়া কিছুতেই সুখ অর্থাৎ শান্তি নেই৷

মানুষের ছয় রিপু আছে যেমন কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসয্য৷ এটা যদি মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে৷ তা হলে মানুষের ভাগ্যে জুটবে নানা অশান্তি৷ মানুষকে সংযত হয়ে চলতে হয়৷ কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়৷ যেমন যম ও নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে হয়৷ এগুলি অত্যন্ত আবশ্যিক৷ মানুষ হয়ে যদি যা পাই তাই খাই  আর যা ইচ্ছে তাই করি তা ঠিক নয় আর মানুষের কাজ করাটা যে শুধু নিজের প্রয়োজন মেটানো তা নয়৷ মানুষ সমাজ বদ্ধজীব তাই সমাজকে কিছুটা সেবা দিয়ে নিজেকে কিছুটা পরোপকারী হিসাবে, উদার হিসাবেই তৈরী করতে হয়৷ তবেই মানুষ নামের সার্থকতা৷ আসল কথা হলো সৎ সঙ্গ জীবনে বিশেষভাবে জরুরী৷ যারা নিজেদের সম্বন্ধে বেশী সচেতন আর অন্যের কথা ভাবে না বা ভাববার প্রয়োজনই মনে করে না তারা অতি অনুদার ও স্বার্থপর৷ তারা জীবনে  শুধু অভাব বোধ করে অসন্তোষ জাত অশান্তিতে জ্বলে মরে৷

তাই বলা হয় ভোগে নয় ত্যাগেই শান্তি৷ ত্যাগ সেই করতে পারে যে পরোপকারী মানসিকতার অধিকারী৷ তারাই  শান্তি পায়৷ মানুষ যেহেতু মননশীল প্রাণী তাই কিছুটা অন্তরমুখী হওয়াটা অতীব জরুরী৷ অন্তরমুখী হওয়ার মূল অর্থ হলো আত্মসাধনা করা অর্থাৎ আধ্যাত্মিক পথে যাওয়া৷ এর জন্য সৎগুরু খুঁজতে হয় যিনি শিষ্যের সার্বিক কল্যাণ চিন্তা করেন ও জোর করে তাকে সেই আত্মজ্ঞান লাভের পথে টেনে নিয়ে যান৷ মোদ্দা কথা হলো আধ্যাত্মিক সাধনার পথই হলো মুক্তির পথ যে পথে সেই জগৎ গুরুর সন্ধান পাওয়া সম্ভাবনা আছে৷

এই সাধনাটি ২৪ ঘন্টায় দু’বার করতে হয় আর এই পথের সন্ধান পেতে কিছু কিছু বই পড়তে হয়৷ যেমন বাংলার গীতা পাঠ করে তার অর্থবোঝার চেষ্টা করতে হয়৷ বর্ত্তমানে এদেশে তো আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান দিতে তো অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংঘটন আছে তার মধ্যে তো আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ অন্যতম৷ এই মহান পথের সন্ধান দেন৷ ভৌতিক জগতের মধ্যে থেকে শুধু টাকার পশ্চাতে ছুটে, দৈহিক ভোগে ডুবে থাকলে আর মানসিক ও আত্মিক দিককে অন্ধকারে রেখে ফাঁকিবাজী করলে হবে না৷ তাই মহান আধ্যাত্মিক সৎগুরু ও দার্শনিক শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের উক্তি--- প্রণিপাত, পরিপ্রশ্ণ, সেবা--- এই তিনটি তত্ত্বকে মেনে চললে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রগতি হবেই৷