১০০ দিনের কাজ নয়, ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

১০০ দিনের কাজের নামে নানান অভিযোগ ওঠে৷ একে কেন্দ্র করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার গরীব মানুষের টাকা বন্ধ করে দিয়ে তাদের, সাথে সাথে রাজ্য সরকারকেও বিপদে ফেলেছে বলে খবরে প্রকাশ৷ যদিও বকেয়া মজুরি রাজ্য সরকার মিটিয়ে দিয়েছে বলে তারা দাবি করছে৷ রাজ্যের শাসকদল কেন্দ্রীয় সরকারের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জোরালো আওয়াজ তুলে বাজিমাত করতে চাইবেই৷ কাজ করিয়ে মজুরি দেওয়া না হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন করার অধিকার অবশ্যই আছে তাদের৷ এছাড়াও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বছরে ২কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল৷ কিন্তু গত ৫ বছরে কত কোটি বেকার যুবক যুবতী চাকরি পেয়েছে তার একটা হিসেব কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও জানানো উচিত ছিল৷তবে তারা জানাবে কিনা বা কী বলবে সেটা তাদের ব্যাপার, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার জন্য বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের আন্দোলন ন্যায় সঙ্গত৷ আমাদের দেশে নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নানান ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে৷ সেগুলো সব পালন করা হয় কিনা তা দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই৷আর প্রতিশ্রুতি পালন না করলেও কোনো শাস্তির মুখে তাদের পড়তে হয় না৷ এটা রাজনৈতিক দলগুলো ভালো ভাবেই জানে৷ তাই ছাতি ফুলিয়ে গলার জোরে অনেক নেতাই অনেক কথা বলে থাকেন৷ সাধারণ মানুষ সেসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে অকারণে ঝগড়াঝাঁটি ও মারামারি করে মূল্যবান সময় নষ্ট করেন৷ রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব জানে ও সাধারণ মানুষকে এসবে মাতিয়ে রেখে তাদের বোকামি উপভোগ করে৷

৭৫ বছরের অধিক হয়ে গেল আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে৷ দেশের সাধারণ নাগরিকদের আর্থিক পরিস্থিতি কেমন তা বোঝা যায় বিনামূল্যে রেশন দ্রব্য সহ নানান অনুদান দেওয়ার বহর দেখে৷ ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বুঝি মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল থাকলেই তো তাকে অনুদান দিতে হয়৷ একসময় দেশে শোনা যেত’ গরীবি হটাও’ এর শ্লোগান৷ এখনও যখন দেশবাসীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুদান দিতে হচ্ছে, তা দেখে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে গরীবি হটানো সম্ভব হয়নি৷ আবার এখন যাঁরা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন তাঁরা বলছেন ’ আচ্ছে দিন’ এর কথা৷ এই আচ্ছে দিন এসে গেছে না ভবিষ্যতে আসবে তা অবশ্য জানা যায় নি! তবে নেতারা যখন বলেছেন তখন অবশ্যই ভরসা রাখতে হবে দেশবাসীকে ! দেখা যাক এটাও গরীবি হটানোর মত হয় কিনা!!

আমাদের দেশে নানান ধরনের রাজনৈতিক দল আছে৷ থাকতেই পারে গণতান্ত্রিক দেশে৷ তারা তাদের আদর্শ দেশবাসীর কাছে প্রচারও করতে পারে৷ সেসব নিয়ে কোনো সমস্যাও নেই৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের মুখ থেকে কী কেউ শুনেছেন-’ আমরা ক্ষমতায় এলে ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টী দেব’৷ মনে হয় এভাবে কেউ শোনেননি৷ আসলে এই নিশ্চয়তা মানুষকে দেওয়ার জন্য যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার সে সম্পর্কে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হয় জানেন না অথবা তাঁরা জানলেও রূপায়িত করার হিম্মত দেখাতে পারেন না৷ কারণ পুঁজিপতিদের অর্থে লালিত পালিত এইসব রাজনৈতিক দলের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়৷

বড়ো বড়ো কথার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আর অসৎ উপায় অবলম্বন করে যাঁরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে চায় তাঁরা দেশবাসীর প্রকৃত কল্যাণ মূলক কাজ করবে তা ভাবাও ভুল৷ তারা অনুদান দিয়ে কিনে রাখতে চাইবে, মাথা উঁচু করে মানুষকে বাঁচতে শেখাবে না৷ প্রকৃত মানব দরদী কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা যদি ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে আগ্রহী হন তাঁর বা সেই দলের সর্র্বেচ্চ নেতৃবৃন্দের উচিত মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এর প্রাউট তত্ত্ব ও তার অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করা৷ তাহলেই জানতে পারবে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা বাস্তবে সম্ভব৷ মানুষের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে আর অনুদানের প্রয়োজন হবে না৷ নিজের উপার্জনেই সম্মানের সঙ্গে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা সে নিজেই করে ফেলবে৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে তাই সর্বত্র আওয়াজ উঠুক---’ ১০০ দিনের কাজ নয়, ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে’৷