বিভেদ ভুলে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যে নতুন করে ভাবতে হবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

যদি গভীরভাবে চিন্তা করা যায় তাহলে অবাক হতে হয় এই বিশাল ভারত দীর্ঘ ৭৭ বছরের মধ্যে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! বিশাল হিমালয় পর্বত ও তিন দিকে সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত এই দেশ৷ নদীমাতৃক ও উর্বর এই দেশ৷ বনজ, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ও উর্বর এই দেশ৷ এ দেশ সুপ্রাচীন কাল থেকে বাইরের ভাগ্যানুসন্ধিৎসুদের আকর্ষণ করে আসছে৷ তারা এই মহামানবের সাগরতীরে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে৷ ভারত ভৌগোলিক দিক হতে প্রায় পৃথিবীর চক্রনাভিতে অবস্থিত এক বিরাট উপমহাদেশ৷ প্রায় ৭৫০ বছর এদেশ বিদেশীদের দ্বারা শাসিত হয়েছে৷ তবে তারা এদেশের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে৷ তারপরে সমুদ্রপাড়ের শ্বেত মানুষেরা (ইংরাজ শাসক) এদেশকে কব্জা করে৷ তারা গত ১৯৪৭ সালে ১৫ই আগষ্টে বাধ্য হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে ভারতকে স্বাধীনতা দেয়৷ মহান দেশটিকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করে অদূরদর্শী নেতারা ইংরেজের কূটনীতির কাছে হার মেনে নেন৷ ভারত স্বাধীন হয়৷ ১৯৫০ সালে ২৬শে জানুয়ারী ভারতের নিজস্ব সংবিধানের নির্দেশাবলী ও বিভিন্ন ধারা মতাবেক এ দেশ পূর্ণ স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃত হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা চালু আছে এেেদশে৷ কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি যৌথভাবে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হয়৷ উভয় ক্ষেত্রেই শাসক ও বিরোধী দলগুলি মিলিত ভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ শাসন করে থাকেন৷ কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরা বিভিন্ন বিভাগে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী নিয়োগ করে সচিবদের দ্বারা দেশ শাসন করেন৷ এদের মধ্যে লক্ষ্যণীয় হ’ল দেশের আর্থিক উন্নয়নের জন্যে যে বিভাগ সেই হ’ল অর্থবিভাগ৷ এই অর্থবিভাগের জন্যে কেন্দ্রে ও প্রতিটি রাজ্যে একজন করে অর্থমন্ত্রী আছেন৷  ১৪০ কোটির অধিক মানুষ এদেশে বাস করে থাকে৷ এদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে বিষয়টি আছে সেটা এই কেন্দ্রীয় অর্থবিভাগের অধীনে৷ দেশের ভিতরে–বাইরে আমদানি–রপ্তানির দিকটা দেখে থাকে এই বিভাগ৷ বেকার সমস্যার সমাধান, উৎপাদন ও বণ্টন নীতিও দেখা এই বিভাগের কাজ৷ দেশের আয় ও ব্যয় এই দুটো হ’ল অর্থ দফতরের অধীন৷ সরকারের আয়ের উৎস সন্ধান করা আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বসিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়াটা হ’ল এই দফতরের কাজ৷ এটা যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ কেন্দ্রীয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য, ঠিক তেমনই প্রতিটি রাজ্য সরকারের একজন করে অর্থমন্ত্রী আছেন৷ সেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদেরও ঠিক তেমন অর্থ সংক্রান্ত দায়দায়িত্ব আছে৷ রাজ্যের রাজ্যশাসন তালিকায় নির্ধারিত আছে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কোন কোন আর্থিক বিষয়ের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ আছে৷ তাছাড়া সর্বোপরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আর্থিক দায়দায়িত্ব আছে রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন খাতে আর্থিক সাহায্য করার৷

এই দীর্ঘ ৭৭ বছর পার হয়ে গেল ভারতের গণতন্ত্র কিন্তু আজও চরম বেকার সমস্যায় ভুগছে এদেশের সিংহভাগ মানুষ৷ সকলের ক্রয়ক্ষমতা যদি না বাড়ে তাহলে দেশের আর্থিক উন্নতিটা যে কি হ’ল তা সত্য সত্যই কিছুই বোঝা যায় না! ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কাঠামোটা এদেশে বলবৎ আছে৷ গণতন্ত্রকে সত্যসত্যই সার্থক করতে দরকার প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ও তার বাস্তবায়ন৷ ভারত কৃষিপ্রধান দেশ৷ তাছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদে দেশ ভরপুর ও এদেশের মাটির নিচে আজও অফুরন্ত খনিজ সম্পদ আছে৷ দেশের মাটিতে যদি ঠিকভাবে ফসল ফলানো হতো আর সেই কৃষিজাত ফসল থেকে যদি কৃষিভিত্তিক শিল্পের মাধ্যমে শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন করা হতো ও সেগুলিকে যদি দেশের ও দেশের বাইরের বাজারে রপ্তানি করা হতো তাহলে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের পথে ব্যাপক হতো৷ কারণ আজ বিশ্বের বুকে খাদ্যাভাব হলো বিরাট সমস্যা৷ প্রতিটি ব্লকে ব্লকে ছোট ছোট শিল্প সমবায় গড়ে তুলে বেকার সমস্যার সমাধানের পথের সন্ধান করতে হবে৷ তা কিন্তু হয়নি৷

বিগত কংগ্রেস শাসনের ব্যর্থতায়  বিরক্ত হয়ে মানুষ ২০১৪ সালে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে৷ কিন্তু মানুষ আজ বুঝছে ডাঙ্গার বাঘের ভয়ে জলে নেমে কুমিরের মুখে পড়েছে৷ পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দশ বছরের ব্যর্থতা ঢ়াকতে  মানুষের মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করেছে৷ তাই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানুষের মনে ফিরে আসছে ৪৬ এর স্মৃতি৷ বলা ভালো ফিরিয়ে আনা হচ্ছে৷ এই অবস্থায় প্রাউটিষ্টদের কাজ উপধর্মাশ্রিত সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা মানষের সামনে তুলে ধরে মানুষের মধ্যে সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করতে হবে৷ প্রাউটের পথেই মানুষ ফিরে পাবে আর্থিক স্বনির্ভরতা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ৷