বিপন্ন ভারতীয় গণতন্ত্র রাজনীতিতে সৎনীতিবাদী মানুষের অভাব

লেখক
প্রবীর সরকার

শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার ব্যপারে গণতন্ত্রকে রাজনীতিতে মন্দের ভালো বলা হয়৷ কিন্তু প্রশ্ণ হ’ল যদি দেশের নাগরিকগণ শিক্ষিত, যুক্তিবাদী সবার উপরে আত্মনির্ভরশীল না হয়, তাদের নূ্যনতম পাঁচটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান না থাকে তা হলে তারা প্রতিনিধি–নির্বাচনট্ কি ঠিক মতো করতে পারে আর যারা নির্বাচনে দাঁড়াবে তাদের মধ্যে যদি নৈতিকতা, সেবা, ত্যাগের মনোভাব না থাকে তা হলে সেই সম্পূর্ণ নির্বাচনটাই প্রহসনে পরিণত হবে৷

অদ্যাবধি– আমরা দীর্ঘ ৭৭ বছর গণতান্ত্রিক শাসনে কী দেখছি! যার জন্য আজ এই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এতটা জটিলতা ও নিরুৎসাহ মানুষের মনে দেখা দিয়েছে! আজ একটা শ্লোগান দারুণ ভাবে আকাশে বাতাসে ভাসছে তা হলো–যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ৷ আর রাজনীতিতে দুর্বৃত্তদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ৷ গণতন্ত্র দলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ আর দল চলে অনুদান ও চাঁদার সাহায্যে৷ নির্বাচনের খরচ প্রচুর৷ তাই টাকা যে দেয় দলে তারই প্রভাব বাড়ে৷ যে দলের শক্তি বেশী ধনী ব্যবসাদাররা তাদের জন্যে বেশী টাকা বরাদ্দ করে৷ আর সেই বেশী টাকার পাওয়ার জন্য স্বাভাবিক কারণে দল তাকেই চেয়ারে বসায়৷ তারাই সুবিধা পায়৷ যার জন্যে গণতন্ত্র মূলতঃ ধনীর সেবাদাসে পরিণত হয়৷ পিছন থেকে ধনীরাই দল নিয়ন্ত্রণ করে আর সুযোগ সুবিধা তারাই ভোগ করে৷ সাধারণ মানুষ শুধু পাঁচ বছর অন্তর একটি ভোট দেওয়ার অধিকার পায়৷ সে সেদিনই নাগরিক যেদিন ভোট দিতে যায়৷ আর এই ভোট আদায় করতে রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরণের ছলবল কৌশলের মাধ্যমে প্রয়োজনে রিগিং করে ছাপ্পা ভোট দিয়ে তার সেই অধিকারকে হরণ করে৷ তাই আজ ভারতের মতো বিশাল দেশে কঙ্কালসার গণতন্ত্রকে আমরা দেখে থাকি৷ যাদের হাতে অর্থ আছে তারা টাকার জোরে রাজশক্তিকে কব্জায় এনে দেশনেতা হয়ে যায়৷ আজ সারা ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে বেশ বড় সংখ্যক নির্বাচিত প্রতিনিধি বিভিন্ন মারাত্মক অপরাধে অপরাধী৷

তাদের মামলা চলছে বছরের পর বছর আর তারা টাকার জোরে দেশনেতা হয়ে রাজসুখ ভোগ করছে৷ এই সব দেখে শুণে বিচারালয়ে দেশনেতাদের বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ মামলা জমে থাকায় খোদ সুপ্রিম কোর্ট আদেশ জারি করেছে যে দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অপরাধী সাব্যস্ত হলে আর স্বপদে বহাল থাকতে পারবে না ও নির্বাচনে দাঁড়াতেও পারবে না৷ এই নিয়ে এদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে নানা ধরণের বিরূপ মতামতও পাওয়া যাচ্ছে৷ এদেশের দলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রে অপরাধ প্রবণতা দারুণ ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে৷ তাই এ ধরণের প্রশাসনিক ব্যবস্থা জনগণকে সেবা দিতে পারে না৷ একদিন এই দেশে রাজনীতিতে এসেছেন শিক্ষিত জ্ঞানীগুণী ব্যষ্টিগণ৷ আজ রাজনৈতিক দলের অত্যাচার ও নোংরামী দেখে শিক্ষিত ব্যষ্টিরা দূরে থাকেন৷ আর নিম্নমানের লোকেরা রাজনীতির আসন দখল করে বসে থাকছে৷

আজ দেখা যাচ্ছে যারা কোন দিন মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা দিল না, তাদের দুঃখ কষ্টের ভাগী হ’ল না তারাই নির্বাচনে দলের হয়ে দাঁড়িয়ে খুঁটির জোরে নির্বাচিত হয়ে দেশশাসক হয়ে গেল৷ মন্ত্রী হয়ে বসলো৷ এর ফলে রাজ্যে ও কেন্দ্রে এমন সব লোক শাসনে আসছে যাদের অতীত সম্পূর্ণ অন্ধকারময়৷ লোককে আকৃষ্ট করতে দলও এমন প্রতিনিধি বেছে নিচ্ছে যাদের জনসেবায় তিলমাত্র অবদান নেই৷ এই সুযোগটা বেশী করে গ্রহণ করছে অন্ধকার জগতের কালোটাকার কারবারিরা৷ তারাই দেশের কর্তা হয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে৷ তাই এই গণতন্ত্র সম্পূর্ণ দুর্নীতির আখড়া হয়ে পড়েছে৷ ফলে লোকসভা ও বিধান সভার ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছে৷ আজ ভালো বক্তার অভাব ও উপযুক্ত আইনজ্ঞ শিক্ষিত ব্যষ্টিরও অভাব এই সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে৷ চেঁচামেচি হই হট্টগোলেই কেন্দ্র ও রাজ্যের আইন সভার কাজ পণ্ড হয়ে যাচ্ছে৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা হচ্ছে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অনেক প্রধান স্বাক্ষর পর্যন্ত করতে সক্ষম নয়৷ তারা সরকারের নির্দ্দেশিকা পর্যন্ত পড়তে পারে না৷ এমন চরম অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে এ দেশের গণতন্ত্র৷ তাই আজ দেশের স্বার্থেই শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের দলমত নির্বিশেষে গণতন্ত্রকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে৷ আজ সমাজে আদর্শ বলতে কিছু নেই তাই যারা নীতিবাদী ও সৎ তাদের সমস্ত ভয় ও সংকোচ ত্যাগ করে দেশের সেবায় এগিয়ে আসতেই হবে৷ আর যারা আদর্শের পথে আছেন তাঁদের সঙ্গ দিতে হবে তবে দেশের নিপীড়িত হতভাগ্য জনসাধারণ বাঁচবে৷