চক্ষূরোগ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

পদ্ম– Nelumbo nucifera ও পদ্মমধু ঃ

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ পদ্মফুলকে কমল বলা হয় কারণ পদ্মফুলের শোভা ও সৌন্দর্য্য খুবই আকর্ষণীয়৷ আমাদের অতি পরিচিত পদ্মফুলের কয়েকটি প্রজাতির আদিবাস ভারত তথা ৰাংলায়৷ শ্বেত পদ্মের আদিবাস এই ৰাংলাতেই, আর খুব সম্ভব সমতট ৰাংলা বা ব্যাঘ্রতটী (ব্যাঘ্রতটীঞ্ছ বাঘ্ঘডীঞ্ছবাঘডীঞ্ছব্ বাগড়ী ৰলতে ৰোঝায় যে ভূমির পশ্চিম সীমায় ভাগীরথী, উত্তর সীমায় পদ্মা, পূর্ব সীমায় মধুমতি৷ তোমরা এই অঞ্চলের জলাশয়ে বা বিলে যথেষ্ট শ্বেতপদ্ম দেখবে, শালুকও দেখবে)৷ এই সমস্তই (শ্বেতপদ্ম) ব্যাঞ্জালাইটিস্ বর্গীয় পুষ্প৷ রক্তপদ্মের জন্ম ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে রাঢ় ভূমিতে৷ ৰাংলায় সাধারণত সাদা ও লাল দুই পদ্মই হয়ে থাকে৷

ইণ্ডিকা বর্গীয় রাজকমল পশ্চিম ভারতে ৰড় ৰড় হ্রদে পাওয়া যায়৷ এর পাপড়ির রঙ গোলাপী৷ কিন্তু তা সম্পূর্ণ গোলাপী নয়....শ্বেত মিশ্রিত গোলাপী৷ আবার এরা ৰাংলার শ্বেতপদ্মের চেয়ে কিছুটা ৰড়, রক্তপদ্মের চেয়ে কিছুটা ছোটো৷ মহিশূর রাজ্যে যে কর্ণাট কমল জন্মায় সেগুলি আকারে ৰাংলার শ্বেত পদ্মের চেয়ে কিছুটা ছোটো হলেও অনেক বেশী দলযুক্ত৷ এরা দেখতে বেশ সুন্দর৷ তবে তার গন্ধ ও মধু ৰাংলার শ্বেতপদ্মের চেয়ে কিছুটা কম৷ মানস সরোবরে গ্রীষ্মকালে যে পদ্ম জন্মায় তার বর্ণাঢ়্যতার তুলনায় গন্ধ ও মধু বেশী৷

পদ্ম অতি গভীর জলে জন্মায় না....জন্মায় কম গভীরে৷ মেক্সিকো দেশ পীতকমল বা হলদে পদ্মের আদিবাস৷ ভারতে ওই পদ্মের মুথা বা ৰীজ ব্যবহার করলে গাছ জন্মায় ঠিকই কিন্তু ফুল কম হয়, ৰৃদ্ধিও কম হয়৷ আমাজন নদীর অববাহিকায় যার বাসস্থান সেই ‘বিক্টোরিয়া রিজিয়া আমাজনিকা’ বা মহাপদ্ম বাংলার আৰহাওয়ায় মোটামুটি মানিয়ে নেয়৷ কিন্তু ৰৃদ্ধি তেমন হতে দেখা যায় না৷ *নীল পদ্মের কথা তোমরা পুরাণে পড়েছ৷ ঠিক বিচারে পদ্ম নীল রঙের হয় না৷ তবে বর্তমানে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অনুশীলনের ফলে নীলচে রঙের পদ্মও উদ্ভাবিত হয়েছে৷ দেখতে কিছুটা সুন্দর, আকারে ছোটো, নীল রঙের শালুকের মত৷

পদ্মমধু ও চক্ষূরোগ ঃ পদ্মফুলের শোভা ও সৌন্দর্য্যে ও এর গন্ধে মউমাছি, ভ্রমরা, কীটপতঙ্গেরা আকৃষ্ট হয়৷ অন্যান্য পদ্মের তুলনায় শ্বেতপদ্মের গন্ধ বেশী৷ পদ্মের মধু (বিশেষ করে শ্বেতপদ্মের মধু সর্ববিধ চক্ষু রোগের মহৌষধ বিশেষ করে চোখের মণি সংক্রান্ত রোগে৷ ৰাংলায় এই পদ্মমধু নিয়ে চর্চা হলে ভাল হয়৷ চক্ষু রোগে গোলাপ জলের ব্যবহার হিতকর৷ এছাড়া ফুলকপি ও গাজর চক্ষূরোগে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷ পদ্মের পরাগ সর্পবিষের প্রতিষেধক ঃ পদ্মের পরাগ বিশেষ করে শ্বেতপদ্মের পরাগ সর্পবিষের প্রতিষেধক৷ এ নিয়েও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গবেষণা করা উচিত৷ পদ্মের পরাগ থেকে অন্য ঔষধও তৈরী হয়৷ ঙ্মপদ্ম ফোটার সময় পদ্মের কেশর সংগ্রহ করে ঠিকভাবে রেখে দিতে হয়–কেননা প্রয়োজনের সময় প্রস্ফুটিত শ্বেতপদ্ম নাও পাওয়া যেতে পারে৷ এই কেশর ৰেটে রোগীকে খাইয়ে দিতে হয়ৰ৷

পদ্ম ৰীজ ঃ পদ্মৰীজ মানুষের একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য৷ কশ্মীরে দেখেছি এই পদ্মের ৰীজ থেকে সুস্বাদু ডালনা ও কালিয়া তৈরী হয়৷ কশ্মীরে পদ্মকে ৰলে পম্পোষ–এসেছে পদ্মপুষ্প থেকে৷ কশ্মীরে পদ্মের ডাঁটা থেকেও তরকারী তৈরী হয়৷ বাংলার শিশুরা সাগ্রহে পদ্মৰীজ খায়৷ তবে পদ্মৰীজের ব্যবহার ৰাংলার রন্ধনশালায় খুবই কম৷

চোখের সমস্যায় অন্ধত্বের সম্ভাবনা দেখা দিলে নিম্নোক্ত ঔষধ কাজে লাগবে ঃ গোল হরিতকি চূর্ণ, কালমেঘ (পাতার রস), বিশুদ্ধ নিম ফুলের বা পদ্মফুলের মধু–তিনটিই অর্ধেক চামচ করে নিয়ে যে ঔষধ তৈরী হ’ল তা দিনে দু’বার সেব্য৷ দিনে কয়েকবার মুখে জল নিয়ে, জল মুখ থেকে না ফেলে চোখে অন্ততঃ ১২ বার জলের ঝাপটা দিলে সর্ববিধ চক্ষূরোগে ভাল ফল পাওয়া যায়৷

হাতিশুঁড়ো– Heliotropium indicum Linn. ঃ

হাতিশুঁড়ো গ্রাম ৰাংলার পথে ঘাটে বর্ষায় প্রচুর পরিমাণে জন্মায়৷ হাতিশুঁড়ো পাতার রস (বাহ্যিক ব্যবহার) চক্ষূ রোগের ঔষধ৷ চক্ষূরোগ ছাড়াও হাতিশুঁড়ো পাতার অন্য রোগে ব্যবহার আছে৷ আ–ফলা হাতিশুঁড়োর পাতা জলে ৰেটে প্রলেপ দিলে বা এর শেকড়ের ছাল ৰেটে প্রলেপ দিলে উপদংশের বাগীর ব্দপ্সন্দ্রব্ধ ন্তুত্রুন্তুন্দ্বব্জগ্গ চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়৷

চক্ষূব্যাধি বা Conjunctivites ঃ

Conjunctivites ব্যাধিটি নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম সঞ্জাত৷ এই ধরনের নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম মুখ্যতঃ রূপতন্মাত্রের দ্বারা বাহিত হয়৷ যার এই রোগ হয়েছে তার চোখের দিকে তাকানোর পর চোখ করকর করবার আগেই গুনে গুনে অন্ততঃ পঁচিশবার চোখে জলের ঝাপটা দিলে তবে সেই রোগ প্রতিরোধ করা যায়৷৪৪

ছানি পড়া ঃ

বেশী পরিমাণ স্নেহজাতীয় বস্তু ও শর্করা জাতীয় বস্তু খেলে পরিণত বয়সে, ৩৯ বৎসরের পরে মানুষের রক্তে শর্করার ভাগ ৰেড়ে যায়৷ রক্তে শর্করার ভাগ ৰাড়লে চোখে ছানি পড়ে৷ শর্করাধিক্যেরই একটি বিবর্ত্তিত তলানি থেকে আসে এই ছানি৷ ৩৯ বছর বয়সের পর চোখে ছানি পড়ুক বা না পড়ুক, রক্তে শর্করার আধিক্য হোক বা না হোক, রক্ত কিছুটা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দৃষ্টিশক্তির হেরফের হবেই–কারো বেশী, কারো কম৷ অনেককে তাই এই বয়সে ধনাত্মক শক্তির গ্গ চশমা নিতে হয়৷ এই যে চোখে সামান্য ত্রুটি যা সাধারণতঃ ৩৯ বছর বয়সে এসে থাকে, কথ্য বাংলায় তাকে ৰলে থাকি ‘চাল্শে’ (চল্লিশিয়া)৷  কচি তেলাকুচা পাতার রস চোখে ছানি হওয়ার শুরুর দিকে দিনে দু’–তিনবার করে দিলে উপকার পাওয়া যাবে                               

                                                                                                    –শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার