ভারতের মানচিত্রে দার্জিলিং জেলা ও তার প্রধান শহর শিলিগুড়ির অবস্থান ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা শিলিগুড়ির স্বল্প দূরত্বের মধ্যে একদিকে বাঙলাদেশ, একদিকে নেপাল ও একদিকে ভুটান৷ আর ওদিকে সিকিমের পরেই চীন৷ অতি অল্প দূরত্বের মধ্যেই৷ কোনভাবে শিলিগুড়ি অবরুদ্ধ হলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বা ভারত থেকে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা সহ উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে৷ তখন ভারতের সার্বভৌমত্ব প্রশ্ণের মুখে পড়ে যাবে৷
এই অবস্থায় দার্জিলিং জেলার গুরুত্ব কতটা তা সহজেই অনুমেয়৷ এর আগেও দেখা গেছে নেপাল, দার্জিলিং, সিকিম, ভুটান নিয়ে মহা নেপাল তৈরীর এক ষড়যন্ত্রও চলেছিল---যার পেছনে চীনের মদত ছিল৷
আর, ভারতের ওপর চীনের লুব্ধ দৃষ্টি---অনেক দিন থেকেই৷ ওদিকে জম্মু-কশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও অভিযোগ করেছেন, চীন কশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অবাঞ্ছিত ভাবে হস্তক্ষেপ করছে৷ তাছাড়া চীন জিন জিয়াং থেকে পাক অধিকৃত কশ্মীর হয়ে পাকিস্তানের দক্ষিণে গদর বন্দর পর্যন্ত ‘অর্থনৈতিক করিডোর’ নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে৷ আসলে চীনের মতলব কশ্মীরের মধ্য দিয়ে আরব সাগরের গদর বন্দরের সঙ্গে শর্টকার্ট যোগাযোগ ব্যবস্থা৷
এদিকে শিলিগুড়ি দিয়েও বাঙলাদেশের মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে যাওয়া চীনের লক্ষ্য৷ এইভাবে চীন আরব সাগর তথা ভারত মহাসাগরের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায় ও ভারতকে ঘিরে ফেলতে চায়৷
তাই আমরা দেখছি দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুংরা যখন থেকে পাহাড়ে জঙ্গী আন্দোলন শুরু করেছে, ওদিকে চীনও সিকিম সীমান্ত লাগোয়া ডোকোলামে তার রাস্তা বানাবার ব্যবস্থা করছে৷ তাছাড়া দার্জিলিংয়ের বিমল গুরুংদের নানানভাবে সাহায্য করছে৷ বর্তমানে গুরুংদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে নেপালের মাওবাদী জঙ্গীদের উপস্থিতির কথাও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে৷
এই পরিস্থিতিতে বিমল গুরুংদের আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা যেমন রাজ্য সরকারের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারেরও পূর্ণ দায়িত্ব৷ কারণ এর সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্ণ জড়িয়ে রয়েছে৷
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে কশ্মীরের রাজা হরি সিং যখন কশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন, তখন কশ্মীরের ওপর ভারতের অধিকার ষোল আনা বর্তাল৷ সেই মুহূর্ত্তেই পাকিস্তানী সেনাকে হটিয়ে পুরো কশ্মীর দখল করে নেওয়াটাই ভারতীয় সেনার কর্তব্য ছিল৷ ভারতীয় সেনারা তা করতেও যাচ্ছিল৷ হঠাৎ নেহেরুজী বিশ্বের দরবারে শান্তির দূত হিসেবে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে ভারতীয় সেনার অভিযান বন্ধ করে দেন৷
নেহেরুর এই ভুলের জন্যে স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও কশ্মীর সমস্যা ভারতের এক জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে আছে৷
আজ যদি কেন্দ্রীয় সরকার গুরুংদের প্রতি দুর্বলতা দেখাতে যায়, তাহলে তার পরিণতি যে মারাত্মক হবে আজ কেন্দ্রীয় সরকারকে তা বুঝতে হবে৷ সংকীর্ণ ক্ষমতালাভের রাজনীতির স্বার্থে কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠী কিন্তু এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করছে না৷
এ ব্যাপারে বাঙালী জনগোষ্ঠী সহ ভারতের প্রতিটি নাগরিকের উচিত দার্জিলিংয়ে গুরুংদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলা, যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন স্তব্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়৷ এ ব্যাপারে রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার ব্যাপারে কোনও যুক্তিই নেই৷ কারণ গোর্খারা এখানকার আদি বাসিন্দাই নয়, ওরা বিদেশাগত৷ আর ১৯৫০-এর ভারত-নেপাল চুক্তিতেও বলা হয়েছে ওরা এখানে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে কিন্তু বৈধ নাগরিকত্ব পাবে না৷ তাই দার্জিলিংয়ের স্থায়ী বাসিন্দা লেপচা, ভুটিয়া বা বাঙালীদের হটিয়ে দার্জিলিংকে গোর্খাল্যাণ্ড বানাবার কোন মাত্রেই যুক্তি নেই৷ ইতোপূর্বে যে গোর্খা পার্বত্য পর্ষদ ও গোর্খাল্যাণ্ড টেরিটোরিয়্যাল এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (জি.টি.এ.) করা হয়েছে তাও সংবিধান বহির্ভূত৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে জিটিএ-কে বাতিল বলে সরকার থেকে ঘোষণা করা উচিত৷ সমস্ত রকমের কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দার্জিলিংয়ের গোর্খা নামধারী বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসাত্মক আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে বিষদাঁত ভেঙ্গে দেওয়া উচিত৷ সঙ্গে সঙ্গে মদন তামাং হত্যা ও সরকারী সম্পত্তি নষ্ট, অগ্ণি সংযোগ প্রভৃতির দায়ে অবিলম্বে ওদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক৷ দার্জিলিংয়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন একদিকে যেমন বাঙলা ভাগের চক্রান্ত, অপর দিকে সার্বভৌমত্বকে ধবংস করারও গভীর ষড়যন্ত্র৷ এটা ভুললে চলবে না৷
- Log in to post comments