নববর্ষের সূচনায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় বসার পর অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা নূতন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ একদিকে আত্মনির্ভরতার শ্লোগান ও পুঁজিপতি তোষণ রাষ্টের সম্পদ বেসরকীকরণ--- যার পরিণতি পুঁজিপতিদের উন্নয়ন সাধারণের আর্থিক দুর্দশা৷ প্রকৃত উন্নয়নের পথে এই সরকার হাঁটে না---এটা স্পষ্ট৷ তাহলে যথার্থ উন্নয়নের পথ কি?
সরকার যে বেশি করে ধণিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এই দেশের সরকারেরই পরিবেশিত তথ্য তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘ফোব্স’৷ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল, ভারতের শীর্ষস্থানীয় পুঁজিপতিদের গড়ে ১ জনের ১ দিনের সম্পদবৃদ্ধির পরিমাণ ১ কোটি টাকার ঊধের্ব৷ অথচ এদেশে ২৭ কোটি মানুষ এখনও পেট ভরে খেতে পায় না৷ বছরে প্রায় ২ কোটি মানুষের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধাজনিত রোগে মৃত্যু হয়৷
সাধারণ মানুষ যেখানে চরম অভাবে অনটনে শুকিয়ে মরছে তার পাশাপাশি ধনিক শ্রেণীর মানুষের বিপুল বিলাসিতা ও অপচয় ঘটে চলেছে৷
স্বাধীনতার পর কেন্দ্রে বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস, জনতা ও বিজেপি জোট ক্ষমতায় এল৷ বহুবার বহু প্রতিশ্রুতি দিল, কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষিত হয়নি৷ ইন্দিরা গান্ধীর ‘গরিবী হটাও’ প্রতিশ্রুতিও যেমন রক্ষিত হয়নি৷ তেমনি মোদিজী ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দুর্নীতি মুক্ত বেকারহীন ভারত গড়ে তুলবেন৷ প্রতিটি গরীব মানুষের এ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করবেন৷ কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষিত হয়নি৷ বরং উল্টো দিকে রাষ্ট্রসংঘের ২০১৮-১৯ এর প্রতিবদনে প্রকাশ পেয়েছে, ভারতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে৷
এই ৭৪ বছরে কেউই ভারতের দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা--- দেশের যে মূল অর্থনৈতিক সমস্যা তারই কিছুমাত্র সমাধান করতে পারল না৷
কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কী? মহান্ দার্শনিক প্রাউট-প্রবক্তা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার, এই সমস্যা সমাধানের যে পথ দেখিয়েছেন এছাড়া সমস্যা সমাধানের অন্য কোনো উপায় নেই, তাঁর নীতি অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের নীতি৷
পুঁজিপতি শ্রেনীর হাতে বা সরকারের হাতে (যেমন কম্যুনিষ্ট ব্যবস্থায়) অর্থনৈতিক শক্তির কেন্দ্রীকরণ করা চলবে না৷ জনসাধারণের হাতে অর্থনৈতিক শক্তির বিকেন্দ্রীকরণ চাই৷
তার প্রথম ধাপ হবে, প্রথমতঃ স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে হবে৷ প্রাউট -প্রবক্তা ভারতে জনগণের হাতে অর্থনৈতিক শক্তির বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে তথা অর্থনৈতিক যথাযথ উন্নয়নের জন্যে ভারতবর্ষকে ৪৪টি স্বনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চলে (‘সমাজ’) বিভক্ত করেছেন৷
এর ভিত্তি হচ্ছে--- (১) একই অর্থনৈতিক সমস্যা, (২) একই ধরণের অর্থনৈতিক সম্পদ ও সম্ভাবনা, (৩) জাতিগত সাদৃশ্য, (৪) সাধারণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য (৫) একই সেন্টিমেন্টাল লিগ্যাসি৷
এরপর সংশ্লিষ্ট ‘সমাজ’ থেকে অর্থের বহিঃস্রোত ও কাঁচামালের বহিঃস্রোত বন্ধ করতে হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষি সমবায় ও ব্যাপক শিল্পবিকাশ ঘটিয়ে স্থানীয় বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ উদ্বৃত্ত শ্রমিক অঞ্চলে শ্রম নিবিড় (লেবার-ইনটেনসিব্) শিল্প ও ঘাটতি শ্রমিক এলাকায় মূলধন-নিবিড় শিল্প গড়ে, তুলতে হবে৷ এইভাবে স্থানীয় মানুষের হাতে অর্থনৈতিক শক্তির পরিচালনার ভার তুলে দিতে হবে৷
এইভাবে যথাযথ পরিকল্পনা মফিক শিল্পবিকাশ ঘটিয়ে (সমবায়কে প্রাধান্য দিয়ে) ১০০ শতাংশ স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ যে শিল্পগুলির উৎপাদিত দ্রব্য অন্যান্য শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে---সেই সমস্ত শিল্পের পরিচালনার ভার স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে৷
যেমন , শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে থাকবে সূতা কল পরিচালনার ভার৷ তারা ‘না লাভ না ক্ষতি’র ভিত্তিতে ব্লকে ব্লকে ব্যাপকভাবে খোলার সমবায় বয়নশিল্পকে সূতা সরবরাহ করবে৷ আবার সমবায় বয়ন শিল্পগুলি বস্ত্র তৈরী করে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা কুটির শিল্পের মাধ্যমগুলিতে রঙ করার কাজ (যেমন শাড়ীতে বাটিকের কাজ) করিয়ে নেবে৷ বাড়ীতে বাটিকের কাজ করিয়ে নেবে৷ বাড়ীতে বসে মহিলারা, বৃদ্ধরাও এই কাজ করতে পারবে৷
এইভাবে প্রাউটে প্রতিটি এলাকার স্থানীয় সম্ভাবনার সর্বাধিক উপযোগের ভিত্তিতে কৃষিও শিল্প বিকাশের পরিকল্পনা নিয়ে নোতুন করে উন্নয়ণ-যজ্ঞ শুরু করতে হবে৷ তবেই দেশের দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা সমাধান হবে৷
- Log in to post comments