বর্তমান দেশের যে হাল সেটার সমীক্ষা করাটা দেশবাসীর প্রধান কর্তব্য৷ প্রথমেই বলতে হয় ৭০ বছর আগে যে অবস্থা দেশের ছিল সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে যে সব প্রাতঃস্মরণীায় দেশকর্মী ও নেতা-নেত্রীগণ কঠিন সংগ্রাম করে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করেন তাদের জীবন উৎসর্গ করা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মোকাবিলা করাটা যে কতখানি মহান কাজ ছিল আজ অনেকেই সেটি উপলব্ধি করতে পারবেন না৷
বহু দরিদ্র পরিবারের সন্তান ও কন্যাগণ দেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অকালে জীবন উৎসর্গ করেন৷ আর সেই পরিবারগুলিও হিংস্র রাজশক্তির রোষানলে শেষ হয়ে যায়৷ শুধু তাই নয়, সেদিন নেতা ও নেত্রী হিসাবে যাঁরা দেশ শাসনের ভার নেন তাঁরা তাঁদের ত্যাগ নিষ্ঠা ও সেবার মানসিকতাকে দেশশাসনের দায়িত্ব নিয়ে সততার সঙ্গে কাজ করে গোছেন৷ এই পশ্চিম বাঙলার কথাই যদি ধরা হয় তাহলে বলতেই হয় আরামবাগের গান্ধী শ্রদ্ধেয় প্রফুল্ল সেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবার পর বাকী জীবন কাটিয়েছেন অত্যন্ত আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে৷ সেই মানুষটির চরিত্র হনন করতে কম্যুনিষ্ট দল মিথ্যা প্রচার করে যে তিনি নাকি ‘স্টিফেন হাউস’ বিক্রি করে দিয়েছেন৷ এত বড়ো মিথ্যে কলঙ্ককে তিনি কীভাবে সহ্য করেছেন তা তিনিই জানেন৷ কিছু সহৃদয় ব্যষ্টির সাহায্যে তিনি দিনযাপন করতেন৷ তিনিই ছিলেন একমাত্র সার্থক দেশ নেতা৷ সারা জীবন দেশের সেবা করেছেন দার পরিগ্রহ না করে৷ এমনই উজ্জ্বল চরিত্র ছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায়ও যদিও তাদের মতাদর্শকে অনেকে মানতে পারেন না বর্তমানে দু’একজন তেমন নেতা-নেত্রী আছেন কোন কোন রাজনৈতিক দলে৷ কিন্তু আর যারা হোমরা-চোমরা নেতা-নেত্রী তাদের ভোগ লালসা, আর্থিক কেলেঙ্কারীর তো কোন সীমা-পরিসীমা নেই৷ আজ রাজনীতিতে চরম দুর্নীতি প্রবেশ করেছে৷ তার ফলে সারা রাষ্ট্র প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে গেছে৷ দেশ চরমভাবে ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েছে৷ রাজনীতির মান এমন অবস্থায় এসেছে যা বলতে লজ্জা হয়৷ এখনও কিছু কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামী জীবিত আছেন যাঁরা অত্যন্ত দুঃখ্ করে বলেন---‘আমরা তো এমন স্বাধীনতা চাই নি! আমরা চেয়েছিলুম পূর্ণ স্বাধীনতা৷ দেশ ভাগও তো চাইনি!’’
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল সারা দেশের পরাধীন মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা৷ তা হলো রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক শোষণমুক্তি৷ জন্মভূমি ভাগ এতো চরম অভিশাপ! দুরারোগ্য ব্যাধির মতো সাম্প্রদায়িক বিরোধ তো সারাজীবন লেগেই থাকবে৷ লোকক্ষয় , জাতীয় সম্পত্তি ধবংস আর দেশভাগের দরুণ চরম উদ্বাস্তু সমস্যা দেশবাসীকে পথের ভিখারী করেই ছাড়ছে ও ভবিষ্যতেও ছাড়বে৷ পাকিস্তানী সীমান্তে লড়াই তো উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পাচ্ছে৷
স্বাধীনতার পর সবাই মনে করেছিল দেশের অসহায় দরিদ্র কর্ষকগণ ও শ্রমিকগণ ও অন্যান্য সকলে শান্তিতে বাস করবে ও দেশের সার্বিক উন্নতি হবে৷ কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে ধনী আরও ধনী হচ্ছে আর গরিব আরো গরিব হয়ে দিন যাপনের গ্লানি বহন করছে মাত্র৷ চারিদিকে হাহাকার ! চরম দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকার সমস্যা দেশকে শেষ করে দিচ্ছে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির একমাত্র লক্ষ্য যে কোনো উপায় গদী সামলানো৷ দেশ গোল্লায় যাক তাতে ক্ষতি নেই৷ মানুষ দিশেহারা৷ বর্তমানে যাঁরা সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের অধিকাংশের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কোটি কোটি টাকা৷ আজ পরিবার কেন্দ্রিক দলই প্রবল৷ রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রীগণ বর্ত্তমানে রাজনীতিকে দেশ সেবা হিসাবে না গ্রহণ করে ব্যাষ্টিগত বরাত ফেরাবার ধান্দা করে নিয়েছে৷ তাই দলত্যাগ করাটা বর্তমানে একধরণের রাজনৈতিক প্রফেশনাল ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে৷
আদর্শ বলতে কিছুই নেই৷ জনগণ তাদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে৷ আজ ধনী ব্যষ্টিরা অর্থের জোরে রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রীতে পরিণত হচ্ছে ৷ তাই তো রাজনীতির দুবৃর্র্ত্তয়ন হয়েছে৷ প্রকৃত দেশ সেবকগণের সেখানে স্থান নেই৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রাজনৈতিক ক্ষেত্রটি ধনী ও বাহুবলীদের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এর ফলে বিচার বিভাগ ও নির্র্বচন কমিশন অত্যন্ত বিচলিত৷ দেশের চিন্তাশীল ব্যষ্টিগণও বিচলিত৷ মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন৷ তাই দেশের ভালো ভবিষ্যৎ খুবই অনুজ্বল৷ তাই দেশকে বাঁচতে আজ সৎ নীতিবাদী তরুণ ও তরুণী দেশপ্রেমিকদের এগিয়ে আসতে হবে কাল হরণ না করে৷
আজ লক্ষ্যহীন হয়ে যুবশক্তি বিপথগামী হচ্ছে৷ কোন পথ না পেয়ে বিপথগামী হচ্ছে৷ আইন শৃঙ্খলা শেষপর্যায়ে এসে পড়েছে৷ অন্যদিকে শাসক ও বিরোধী দলগুলি রাজনৈতিক কাজিয়ায়ে মেতেছে৷ দেশের কল্যাণের কথা শাসককুল ভাবছেন না৷ তাই গণতন্ত্রের নাভিঃশ্বাস উঠছে৷ এই অবস্থায় নাগরিকদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে৷
- Log in to post comments