প্রবন্ধ

নেতাজীর সমন্বয়বাদ ও প্রাউটের সংশ্লেষণাত্মক মানবতাবাদ

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

(পূর্ব প্রকাশিতের পর )

নেতাজী বলেছেন, ‘‘ভারতের জন্যে যে সমাজতন্ত্র উপযুক্ত, সে সমাজতন্ত্র কার্লমার্কসের পুঁথির পাতা থেকে জন্ম নেয়নি, এর উৎপত্তি ভারতবর্ষের আপন চিন্তাধারা ও সংসৃক্তির মধ্যে’’–(রঙ্পুর বত্তৃণতা, ৩০শে মার্চ, ১৯২৬)৷ এখানেও সেই সমন্বয়বাদের আদর্শ–ভারতের আধ্যাত্মিক সম্পদের সঙ্গে সমাজবাদের সমন্বয়ই নেতাজীর কাম্য৷ তা যে কেবল ভারতের সমাজের উন্নতির জন্যেই প্রয়োজন তা নয়–তা সমস্ত বিশ্বের জন্যেও প্রয়োজন৷ তিনি ‘It may be that the form of socialism which India will evolve will have something new and original about it, which will be benefit to the whole world.’’ (T. U. C. speech)

সাধারণতন্ত্র দিবসের বিচার্য---সংবিধানের অঙ্গীকার কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

আচার্য মন্ত্রেশ্বরানন্দ অবধূত

২৬ জানুয়ারী--- প্রতি বছর এই দিনটি সংবিধান প্রবর্ত্তনের স্মৃতিতে সাধারণতন্ত্র দিবস পালন করা হয়৷ সারা বিশ্ব জুড়ে এই রকম দিবস পালনের হুজুগ দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ কিন্তু এই সব দিবস পালনের সার্থকতা কী সে বিচার কখনও করা হয়নি৷ সাধারণতন্ত্র দিবস নিছক একটা দিবস পালনের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে৷ সংবিধান ঘোষিত অঙ্গীকার কতটা পালন হচ্ছে সে বিচার কেউ করে না৷

প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রই নেতাজীর আত্মত্যাগ সার্থক করবে

প্রভাত খাঁ

কালচক্রের বিরাম নেই৷ সে চলে চলেছে অসীমের পানে৷ আমরাও চলে চলেছি তার সাথে৷ এই চলার পথে আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষের মধ্যে কখনো কখনো এমন ক্ষণজন্মা মহামানব জন্মগ্রহণ করেন যাঁরা তাঁদের ত্যাগ, নিষ্ঠা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিকতা ও অন্যায়–শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের জন্যে মানুষের সমাজে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন৷ ঘুরে ঘুরে সেই ২৩ শে জানুয়ারী আবার আসছে আমাদের জানাতে–কৈ, তোমরা তৈরী হয়েছো তো দেশবরেণ্য নেতাজী সুভাষচন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানাতে, তাঁর অসমাপ্ত কর্মকে সমাপ্ত করতে?

স্বদেশ প্রেমের অপর নাম ঃ তেইশে জানুয়ারী

জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

(পূর্ব প্রকাশিতের পর )

এই সময়েই শুরু হ’ল সুভাষচন্দ্রের জীবনে এক চরম পরীক্ষা৷ একদিকে উচ্চ বেতনের সরকারী চাকুরীর নিশ্চিত আরামের জীবন, আর অন্যদিকে জীবনের সর্বোচ্চ আদর্শ ও অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট সহ দারিদ্র্যের জীবন---এই দু’য়ের দ্বন্দ্বে তাঁর মনোজগতে তোলপাড় চলতে লাগল৷ কিন্তু মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্যে যে মহা বিপ্লবীর জন্ম, তাকে সোণার খাঁচায় বন্দী করা কি এতই সহজ? ইংরাজ প্রভুদের গোলামীর দুরন্ত প্রলোভন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে’ তিনি দেশবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী রূপে জীবনপণ করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভারতের মুক্তি সংগ্রামে৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সংযোজিত হ’ল এক নূতন অধ্যায়৷

শীতকাল ও রবীন্দ্রসংগীত

প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

হেমন্তের পরে আসে শীত৷ সকালবেলা পাকা ধানের শিষে শিষে  ঝলমলিয়ে ওঠে শিশিরবিন্দু৷ ‘সকাল হতে সন্ধ্যে’ সমস্ত ক্ষেত মুখর হয়ে ওঠে ধান কাটার গানে৷ চাষীর গোলায় ধান আর ধরে না, ছড়াছড়ি  যায় গৃহের  প্রাঙ্গণে৷ শুধু ধান নয়৷ শাকসব্জীর ক্ষেতও ফসলে পরিপূর্ণ৷ পালংশাক , বাঁধাকপি, ফুলকপি, কড়াইশঁুটি, বেগুন, টম্যাটো, নতুন আলু , মূলো, বিট, গাজর--- আরো কত রকম ফসল৷ খুব সস্তা৷  যত পারো খাও৷ তাই বুঝি  আমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ  শীতকালকে এমন সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করেছেন---

নমো, নমো, নমো৷

নমো, নমো, নমো৷

তুমি ক্ষুধার্তজনশরণ্য,

অমৃত-অন্ন-ভোগ ধন্য করো

অন্তর মম৷৷

নেতাজীর সমন্বয়বাদ ও প্রাউটের সংশ্লেষণাত্মক মানবতাবাদ

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

নেতাজীর চিন্তাধারার মূল কথা হ’ল–সমন্বয়বাদ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘That synthesis is called by the writer samyavad—the Indian word, which means literally—the Doctrine of Synthesis or equality’’—(Indian Struggle by Netaji).

প্রসঙ্গ তেইশে জানুয়ারী---‘‘আমি কারো প্রতিচ্ছবি নই, প্রতিধবনি নই’’

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

তেইশে জানুয়ারী---ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আপোষহীন সংগ্রামী বিপ্লবী মহানায়ক সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন৷ বাঙালীর কাছে এ বড় বেদনারও দিন৷ এই দিন সেই সব হাতগুলো পুষ্পস্তবক নিয়ে নেতাজীর মূর্ত্তির সামনে দাঁড়াবে যাঁরা বা যাঁদের পূর্বসূরী সুভাষচন্দ্রকে জব্দ করতে তলে তলে ব্রিটিশের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল৷ ওদেরই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সুভাষচন্দ্রকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল৷ কংগ্রেস, কমিউনিষ্ট, আর.এস.এস---এদেরই বিশ্বাসঘাতকায় সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ণের স্বাধীনতা আজও অধরা৷ তিনি নিজেও কোন অজানা পথের পথিক হয়ে রয়ে গেলেন!

প্রতিবাদের এই পরানুকরণ ভঙ্গিমা বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গ নয়

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

প্রাউট প্রবক্তা শ্রদ্ধেয় দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর যুগান্তকারী প্রাউট তত্ত্বে শোষণের কয়েকটি পর্যায় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফ্যাসিষ্ট শোষণ সম্পর্কে বলেছেন---‘ফ্যাসিষ্টদের ক্রুরদৃষ্টি যে জনগোষ্ঠীর ওপর নিবদ্ধ হবে সেই জনগোষ্ঠীকে তারা প্রথমেই চেষ্টা করবে তাদের নিজস্ব সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে উৎখাত করতে৷ স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশীয় ফ্যাসিষ্ট শোষকদের ক্রুরদৃষ্টির শিকার বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ তাই আজ বাঙলার সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রেই অবক্ষয়৷

অর্থনৈতিক শোষণ থেকে বাঁচাতে পারে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের প্রাউট দর্শন

প্রভাত খাঁ

দীর্ঘ ৭০ বছর পরেও আমাদের ভাবতে হচ্ছে যে স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও দেশের সিংহভাগ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে পাঁচটি জিনিষের অত্যধিক প্রয়োজন, তারা পাচ্ছে না৷ আজও অনেকের ক্ষুধা নিয়ে জন্ম হচ্ছে পথে ঘাটে, আর মরতে হচ্ছে সেই পথে ঘাটে অবহেলিত পশু- পক্ষীদের মত৷  পাশাপাশি ভারতের মত বিরাট দেশে যৎসামান্য মুষ্টিমেয় কিছু ধনী ভাগ্যবানরা দেশের সম্পদের সিৎহভাগের মালিক৷