গণতন্ত্রে দলতন্ত্রটাই সমস্যার সৃষ্টি করে তাই কেন্দ্রে অবশ্যই মিলিজুলি সরকারই কাম্য

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারত যুক্ত রাষ্ট্রটি বিচিত্র! এখানে ইংরেজের রাজনৈতিক মায়াজালে বিরাট দেশটি টুকরো টুকরোই হয়ে শেষ হয়েছে৷ আর একদল ধান্দাবাজ রাজনৈতিক দল গড়ে দীর্ঘ ৭৬ বছর ধরে ধনতন্ত্রের সেবাদাস হয়ে মজা মারছে  জনগণকে রাজনৈতিক অধিকার অর্থাৎ নির্বাচনে বোট দানের অধিকার টুকু দিয়ে! প্রায় দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে শাসকগণ সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে নির্মমভাবে বঞ্চিত করে৷ এই কেন্দ্র সরকার নানা বিভাগে লক্ষ লক্ষ পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে৷ সেদিকের পূরণের কোন নজর নেই৷ তাছাড়া নোতুন কর্ম সংস্থানের তো কোনই চিন্তা ঐ দিল্লির কেন্দ্র সরকারের নেই৷ সরকার অমৃত উদ্যান, অমৃত ভারত গড়ার স্বপ্ণে বিভোর আর মন কি বাত শোনাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের মতো করে দেশ শাসনের নামে নিছক দলীয় ‘এ্যাজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করে, ভারত মণীষী হওয়ার স্বপ্ণে বিভোর! দেশের মানুষদের সিংহভাগ আজ শোষণে রক্ত শূন্য৷ চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে তাঁরা অর্দ্ধমৃত হয়ে বেঁচে আছেন৷ রান্নার গ্যাসের দাম করেছে প্রায় ১০০০ টাকা৷ এটা গরীবের পক্ষে কেনাটা কি তাঁদের সাধ্যের মধ্যে পড়ে! প্রাণদায়ী ওষুধের দাম আকাশ ছোঁয়া! ডাক্তারদের ফি ৪০০/৫০০ টাকা৷ কোনদিকে  এই ধনতন্ত্রের পূজারীদের নজরই নেই৷ তারা অমৃত ভারত গড়বে! পাঁচটি জিনিষ আজও সবাই পায়নি যথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা বাসস্থান এর দিকেই চরম দৈন্যদশা কিন্তু শাসক দলগুলির আর ধনীদের রমরমা!

দেশের শাসন কাজ চালাতেই প্রায় সব জনগণের দেওয়া কর শেষ৷ তাই উন্নতিটা হবে কি করে? জিএসটি টা যা কি সেটা আজও মানুষের বোধগম্য নয়৷ এটা গণতান্ত্রিক দেশে জনগণকে শোষণের একটা বড় হাতিয়ার কি সরকারের নয়? আজ দেশের বিরোধীদের টনক নড়েছে কারণ ডবল ইঞ্জিন সরকার পদে পদে তাদের শেষ করে দিতে নানা ছলা কলা খাটাচ্ছে৷ কেন্দ্র আজ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করায় দৃৃঢ় প্রতিজ্ঞ৷

তাই একজোট হয়ে লড়াই করতে আগামী ২০২৪শে নির্বাচনে কোমর বাঁধছে বিরোধী দলগুলি গাছে না উঠতে উঠতে এক কাঁদি৷ অর্থাৎ জোট গড়ার মতো কাজে বিরোধ বিরোধী দলগুলিতে দেখা যাচ্ছে কারণ এতে নাকি হুজকী ও টাকার খেলা চলছে পরোক্ষভাবে৷ যাই হোক বিহারে একটি বিরোধী জোটের সম্মেলন হয়েছে৷ এখানে লড়াই করার ডাক পশ্চিমবাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা ও কংগ্রেসের রাহুল দিয়েছেন৷ অতীতে লোক নায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণও চেষ্টা চালান বিহার থেকে যাতে করে প্রকৃত গণতন্ত্র এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তা হয়নি কারণ এদেশের বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা বড়ই কলহপ্রিয় ও বিচ্ছিন্নতাবাদী! এর কারণটা আগেই বলা হয়েছে৷ ভারতে প্রকৃত জাতীয় দল বলতে প্রায় নেই৷ যা আছে তা জাতীয় দল ভেঙে আঞ্চলিক দল৷ সেগুলি আবার রাজ্যে রাজ্যে সংকীর্ণ স্বার্থে লড়াইয়ে মত্ত৷ নিজেদের মধ্যেই কোন সম্প্রীতি নেই৷ শুধু কুৎসা ও দলাদলি করে নিজেদের মধ্যে৷ তাই জনগণের ভয় ওরা এক হয়ে লড়াই করবে কি করে! জাতীয়  দলগুলি এক সময় দেশ শাসনের ভার পায় কিন্তু ঐ দলীয় স্বার্থেই তারা ধবংসপ্রাপ্ত হয়৷ আর উঠে দাঁড়াবার তাদের শক্তি নেই৷ কিন্তু সেগুলি ভেঙ্গে যে আঞ্চলিক দল হয়েছে তাদের বাঁচতে তো এককাট্টা হতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে সেটা অদ্যাবধি হয়নি৷ দলগুলির দোষ হলো যারা রাজ্য শাসনে আছে তারা বিরোধীদের সহ্য করতেই পারে না৷ সেখানে সেই রাজ্য সরকারগুলোও চায় একদলীয় শাসন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করে  সংসদীয় গণতন্ত্র বাকরুদ্ধ হলে কি ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়, না কেন্দ্রের একনায়কতন্ত্রকে কোনঠাসা করা যায়?

দেখা যায় এদেশের সবছোট বড়ো রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীগণ হুংকার দিয়ে থাকেন ‘‘আমরা কেন্দ্রের একনায়কতন্ত্রের শাসককে হঠিয়ে দেব৷’’ কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে লোকসভায় বিরোধী দলের সদস্য কেন কম হচ্ছে? এর উত্তর কে দেবে৷ কারণটা একটাই ধনীরাই দেশ চালায় আর টাকা দিয়ে দলগুলিকে নিজেদের স্বার্থেই কাজে লাগাত৷ নামে এখানে গণতন্ত্র! এখানে ধনীদের নিয়ন্ত্রিত দলতন্ত্র! এখানে বোটারগণতো নিরাপদে বোটটাই সকলে দিতে পারেন না৷ আবার নাগরিকদের অনেকই বোট দিতেই যাননা কারণ এর গুরুত্বটাই অনেকে বোঝেন না! বোটারদের যাতে শিক্ষা থাকে যে তাঁরা দেশের নাগরিক, তাঁদের দায় সরকার ঘটন করার৷ তাঁদের তাই অত্যন্ত সজাগ হতেই হবে নিজেদের নাগরিক হিসাবে দায় ও অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হওয়া৷ এটা গড়েই ওঠেনি৷ আর দলতন্ত্রে দলগুলিও চায়না নাগরিকগণ সচেতন হোন৷ তারা চায় অন্ধভাবে তাদের সমর্থক হোক বোটদানের সময়টুকুতে৷ এইটুকুর জন্য দলীয় সরকার বর্তমানে ১৬বছর হলেই নাগরিক অধিকার দিতে চাইছে৷ এতে ক্ষতি বই ভালো হবে না৷ যাইহোক বিরোধীরা চাইছে বোটে একটার বদলে একটা প্রার্থী দিতে৷ এটাকে কি সব বিরোধী দল মানবে? যে রাজ্যে যে দলের এমপি আছেন তাঁরা তো সংখ্যা বাড়াতে চাইবেন সেটা নিয়ন্ত্রণ কিভাবে হবে? নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকলে লাভটা হয় যাদের  প্রার্থী অতীতে ছিলেন৷ তারাতো প্রার্থী না দিয়ে থাকবেন না৷ বিশেষ করে রাজ্য সরকারগুলি৷ তাই এব্যাপারে যাদের বেশী প্রার্থী অতীতে এম ছিলেন তাঁদের অন্য বিরোধীদলগুলিকে কিছু আসন ছাড়তে হবে৷ আর সেটা মানতে হবে সবাইকে তবেই হাড্ডাহাড্ডি  বোট হবে৷ আবার অতীতে বিজয়ী প্রার্থীর সুবিধা হয় যদি বেশী প্রতিযোগী থাকে৷ এখানেই হবে বিরোধ মনে হয়৷ তৃণমূলের এমপি অতীতে বেশী জয়ী হয়েছিল তারপর বেশী এমপি ছিল রাজ্য বিজেপির অন্যদের মনে হয়ছিল৷ তাই এরাজ্যে কি তৃণমূল প্রার্থী দেওয়া কম করবেন? তবে বিজেপির  আসনগুলিতে বিরোধীগণ প্রার্থী দিতে পারবেন যদি তৃণমূল প্রার্থী না দেন৷ এইখানে বিরোধী জোটকে সমঝোতা করতে হবে৷ তবে তৃণমূলের জয়ী আসনে প্রার্থী দেওয়া হয় বিরোধীদের তা হলে জোট ধাক্কা খাবে৷ এই সমস্যায় যেসব আসনে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হন নি সেইগুলিকে কিছু বিরোধীদের ছাড়তে হবে তাতে বিরোধীরা সম্মত হয় তাহলে কেন্দ্রের স্বৈরাচারী সরকার ধাক্কা খাবে৷ একটা কথা মনে রাখতে হবে এক দলীয় শাসনে যেভাবে স্বৈরাচারী মনোভাব বাড়ছে তাতে কেন্দ্রে মিলিজুলি সরকারই কাম্য৷