দক্ষিণ বাংলায় প্রাচীনকালে হোগ্লা দিয়েই ম্যাড়াপ তৈরী করা হত৷ দক্ষিণ বাংলার নোনা জলে এককালে আপনা থেকেই প্রচুর হোগ্লা গাছ জন্মাত৷ ইংরেজরা যখন এদেশের দখল নিয়েছিলেন তখন দক্ষিণ বাংলায় বিশেষ করে খুলনা (তখন যশোরের অন্তর্গত ছিল), ২৪ পরগণা (তখন নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল) ও মেদিনীপুর (তখন নাম ছিল হিজলী) হোগলা ও গোল গাছে ভর্ত্তি ছিল৷ ওই হোগ্লা ও গোলপাতা দিয়ে কেবল যে ম্যাড়াপ বা মণ্ডপ তৈরী হত তাই–ই নয়, দরিদ্র মানুষের ঘরও তৈরী হত৷ দক্ষিণ বাংলার নাবিকেরা যখন সমুদ্র যাত্রা করতেন তখন যেমন তাঁরা সঙ্গে করে জালা–ভর্ত্তি মিষ্টি জল নিয়ে যেতেন তেমনি নিয়ে যেতেন হোগলার স্তুপ যা শুধু নৌকোতেই নয় ভিন্ন দেশের, ভিন্ন মাটিতে তাঁদের সাময়িক আশ্রয়ের কাজও করত৷ মিষ্টি জলে জাত শোলা যেমন শিল্পকাজে ব্যবহূত হত নোনা জলের উদ্ভিদ হোগলাও তেমনি এককালে শিল্প কাজে ব্যবহূত হত৷ মেদিনীপুর অঞ্চলে আজ যাঁদের ‘বেরা’ পদবী এককালে তাঁদের দখলে বড় বড় হোগ্লা–এলাকা ছিল৷ এটা সুপ্রাচীনকালে তাঁরা জলযুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করতেন৷ প্রাচীনকালে স্বাধীন বাংলায় যাঁরা জলযুদ্ধে পারদর্শী হতেন তাঁদের বলা হত ‘দহিন্দা’ (দিন্দা) আর যাঁরা জলযুদ্ধে ব্যুহ রচনায় (ঘিরে ফেলতে বা বেড়া দিতে) পারদর্শী ছিলেন তাঁদের সামরিক খেতাব ছিল ‘বেড়া’৷ এই বেড়ারা অধিকাংশ সময়ে মুখ্যতঃ ব্যুহ বা বেড়াজাল রচনার কাজে হোগলাকে ব্যবহার করতেন৷ তাই বিশেষ ভাবে হোগলার জঙ্গল থাকাতেই ‘হুগলী’ শহরটির ওই রকম নামকরণ হয়েছিল৷ চব্বিশ পরগণায় রয়েছে বনহুগলী আর মেদিনীপুর–বালাসোরের্ সংযোগ–স্থলে সুবর্ণরেখার মোহানাতে রয়েছে হুগলী৷ ওখানকার চন্দনেশ্বর শিবমন্দিরটিকে এখনও অনেকে হুগলী–চন্দনেশ্বর বলে থাকেন৷ সোঁদরবনের কুঁদো বাঘকে কেউ কেউ হোগ্লা বনের বাঘও বলে থাকে)৷ (শব্দ চয়নিকা, ৭/৪)