স্বাস্থ্য বিজ্ঞান

জাম

ফলের মধ্যে জম্বুফল বা জাম সর্বগুণাধার৷ কিছুটা কষ থাকায় তা মধুমেহ রোগের প্রতিষেধক৷ মধুমেহের প্রতিষেধক রয়েছে জামের অস্থির (আঁটির) অন্তর্গত সারবত্তাতে (সার অংশে)৷ জামের (ফলের) ভিতরের অংশও ত্নব্ভপ্তহ্মগ্গ মধুমেহের ঔষধ৷ জামফলের বীজ ভেঙ্গে তার ভেতরের শাঁস এক আনা পরিমাণ (সিকি চামচ) মধু সহ লেহন করে খেলে মধুমেহ রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়৷

আম/আবঁ

ফলশাক বলতে বোঝায় যে গাছে ফুলের পর ফল আসে৷ কাঁচা–পাকা যে কোন রকমের ফল শরীরের পক্ষে ভাল৷ কারণ ফল নিজের রসে জীর্ণ হয়–হজমের জন্যে যকৃতের সাহায্য বেশী নিতে হয় না৷ অথচ ফল শক্তির যোগান দেয় যথেষ্ট৷

লাট খাওয়া হাম বা বসন্ত

কুলের পাতা মিহি করে শিলে বেটে এক বালতি জলে বাটা জিনিস ফেলে দিয়ে খানিকক্ষণ ধরে’ হাতে করে’ নাড়লে জলের ওপর ফেনা দেখা দেয়৷ চামড়ার ওপর সেই ফেনা লাগালে লাট–খাওয়া বসন্ত বা লাট খাওয়া হাম জেগে ওঠে৷ তখন তা আর মারাত্মক থাকে না৷৮১ গাছটি বার্তাকু (বেগুন) বর্গীয়৷ তবে মাটিতে শুয়ে শুয়ে এগিয়ে যায়৷ কাঁটার সংখ্যা একটু বেশী৷ এর ফল অল্প তেলে ভেজে অগ্ণ্যাশয়ের ঔষধ রূপে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহারের বিধি প্রচলিত আছে৷

কণ্ঢকারী (ক্রোড়পর্ণী) ও বসন্তরোগ

‘ক্রোড়পর্ণী’ শব্দের অর্থ হ’ল কণ্ঢকারী৷ কণ্ঢকারী একটি ঔষধ৷ রাঢ়ের মানুষ কণ্ঢকারী ফল খেতেন৷ পথেঘাটে–জঙ্গলে–বা এই কণ্ঢকারীর গাছ অযত্নে জন্মায়, অনেক সময় আগাছা হিসেবে তুলে ফেলতে হয়৷ এর পাতা বেগুন পাতার মত কিন্তু পাতায় বেশ কাঁটা আছে৷ গ্রাম বাংলায় একে কেউ কেউ জঙ্গলী বেগুনও বলে থাকেন৷ ঈষৎ তিক্ত এই কণ্ঢকারীর ফল তথা অধিক তিক্ত এর শেকড় নানাবিধ রোগের, বিশেষ করে চর্মরোগের ঔষধ বলে পরিচিত৷ এক আনা পরিমিত (১–গ্রামের মত) কণ্ঢকারীর মূল আড়াইটা গোলমরিচের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এক বৎসরের মধ্যে বসন্তরোগের আক্রমণ হয় না৷  কণ্ঢকারীর শেকড়ের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে কফরোগের ঔষধ তৈরী হয়৷

পক্ষাঘাত (প্যারালিসিস)

মানুষের দেহরূপী যন্ত্রের আপাতঃ নিয়ন্তা তার মস্তিষ্ক্৷ সংজ্ঞা ও আজ্ঞা নাড়ীর সাহায্যে মস্তিষ্কই বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে ভাব গ্রহণ ও সঞ্চালন করে’ থাকে৷ এই মস্তিষ্ক্রূপী স্নায়ুকেন্দ্র আবার দক্ষিণ ও বাম ভেদে মোটামুটি দু’টি অংশে বিভক্ত৷ দক্ষিণ মস্তিষ্ক্স্থ স্নায়ুপুঞ্জ দেহের বাম অংশ বা বাম পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে ও বাম মস্তিষ্ক্ স্নায়ুপুঞ্জ দেহের দক্ষিণ অংশ বা দক্ষিণ পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ রক্তের চাপে বা অন্য কোন কারণে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশের স্নায়ুপুঞ্জ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে’ পড়লে সেই অংশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত দেহাংশ বা পক্ষ নিষ্ক্রিয় হয়ে’ পড়ে৷ দেহাংশবিশেষের এই যে নিষ্ক্রিয়তা একেই বলা হয় পক্ষাঘাত বা পক্ষ

অনিদ্রা থেকে বাঁচবার উপায়

–ডাক্তারবাবু

মানসিক টেনশন থেকে অনিদ্রা রোগ জন্মায়৷ ঘুমোতে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ ধ্যান করুন৷ উপকার পাবেন৷   

  • ব্রাহ্মী শাক ১০ গ্রাম ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ হ’লে নামিয়ে ছেঁকে নিয়মিত খেলে অনিদ্রা রোগ সেরে যাবে৷    
  • শুষণি শাক ২৫ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে ২ কাপ হ’লে ওই জল ছেঁকে ১ কাপ দুধ দিয়ে নিয়মিত সন্ধ্যেবেলা খাওয়া উচিত৷ এটি অনিদ্রা রোগে বিশেষ ফলপ্রদ৷
  • ঘুম কম হ’লে ভাত খাবার পর ১ গ্লাস দুধ খেলে ভাল ঘুম হয়৷
  • মাথায় ভাল করে নারকেল তেল মেখে ঠাণ্ডা জলে স্নান করা উচিত৷

 

ঝিঙ্গে

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ‘কুলক’ শব্দটিকে তোমরা যদি ক্লীবলিঙ্গে ব্যবহার কর, তার মানে হবে বড় আকারের ঝিঙ্গে৷ যে ঝিঙ্গে একসঙ্গে থোকায় থোকায় হয় ও আকারে একটু ছোট, তার বিশেষ নাম হচ্ছে ‘সপ্তপুত্র’ বা ‘সপ্তপুত্রিকা’৷ এই ‘সপ্তপুত্রিকা’–সঞ্জাত ‘সাতপুতিয়া’ শব্দটি ছোট ঝিঙ্গের জন্যে উত্তর ভারতে কোথাও কোথাও ব্যবহূত হয়৷ সে সকল স্থানে বড় ঝিঙ্গেকে বলা হয় ঝিঙ্গী৷ রাঁচী অঞ্চলের ঝিঙ্গে আকারে খুব বেশী দীর্ঘ হয়.....

মিষ্টি কুমড়ো

মিষ্টি কুমড়ো বা লাল কুমড়ো বাইরে থেকে এসেছে (ভারতের সাবেকী জিনিস নয়গ্গ৷ তাই এর পুরাণোক্ত বা সংসৃক্ত কোন নাম নেই৷ এদেশে এসেছে আনুমানিক ৪০০ বছর আগে৷ এর ইংরেজী নাম ‘পাম্কিন’৷ ভারতের বিশেষ করে রাঢ়ের* মাটি লাল কুমড়োর পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এর চাষ হু হু করে ক্ষেড়ে যাচ্ছে৷ যে ইয়ূরোপ থেকে একদিন লাল কুমড়ো এসেছিল, সেই ইয়ূরোপের চাষীরাই এখন শেওড়াফুলীর হাট থেকে লাল কুমড়োর বীজ কেনে৷ বিদেশ থেকে জলযানে অর্থাৎ ডিঙ্গি করে এসেছিল বলে রাঢ়ের কোন কোন অংশে একে ডিঙ্গি–লাউ বা ডিংলা বা ডিংলে বলে৷ এই লাউ কুমড়োকে কোথাও কোথাও মিষ্টি কুমড়ো, কোথাও বা সূয্যি কুমড়ো, আবার ময়মনসিং অঞ্চলে কোথাও কোথাও বিলাতী লাউও বলে৷

ছাঁচি কুমড়ো বা চাল কুমড়ো

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ছাঁচি কুমড়ো সাধারণতঃ মাটিতে হয় না৷ ঘরের চালাতে বা মাচাতে এই লতানে গাছটাকে তুলে দিতে হয়৷ এর জন্যে ছাঁচি কুমড়োকে গ্রাম–ক্ষাংলায় অনেকে চালকুমড়োও বলেন৷ এরও তিনটি ঋতুগত প্রজাতি রয়েছে৷ বর্ষাতী চালকুমড়োকে অবশ্যই মাচায় অথবা ঘরের চালে তুলে দিতে হয়৷ শীতের প্রজাতির ছাঁচি কুমড়োকে মাটিতেই ক্ষেড়ে যেতে দেওয়া হয়৷ তবে কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ গ্রীষ্মকালীন চালকুমড়ো মাটিতেই ক্ষেড়ে যেতে থাকে৷ (একেও) কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ তবে বর্ষাতী চালকুমড়োকে মাচায় তুলে দিতেই হবে, নইলে পোকার আক্রমণে ফলটি নষ্ট হবেই.....গাছও নষ্ট হবে৷