জঘন্য অপরাধের প্রতিবাদ  হচ্ছে, কিন্তু  মূল শিকড়ের সন্ধান হচ্ছে কই?

লেখক
সত্যসন্ধ দেব

হায়দ্রাবাদে এক তরুণী পশু চিকিৎসককে  বলাৎকার করে খুনের ঘটনায় সারাদেশ উত্তাল৷ উত্তাল সংসদও৷ ঘটনাটি  ঘটেছে তেলেঙ্গানাতে৷ গত ২৮ শে নভেম্বর রাতে  তেলেঙ্গানার  শাদনগরে  একটি কালভার্টের নীচে  অর্দ্ধদগ্ধ ওই তরুণী চিকিৎসকের  দেহ পুলিশ উদ্ধার করে৷

অভিযুক্ত   মহম্মদ ওরফে আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন  ও চেন্না কেশাভুলু টোলপ্লাজা থেকে  ওই তরুণীকে  টানতে টানতে  ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার ওপর গণ বলাৎকার করে  তারপর খুন করে ও পরে ট্রাকে করে  এক নির্জন  কালভার্টের নীচে  ফেলে দিয়ে জ্বালিয়ে  দেওয়া হয়েছিল৷ এই চরম নৃশংস ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সারা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ  শুরু হয়েছে৷

দেশের  বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন এইভাবে মহিলাদের ওপর বলাৎকার ও খুন  সহ নানাভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে ৩০ শে নভেম্বর লোকসভার  ২ ও ৩ নং গেটের বাইরে  অনু দুবে  নামে বছর পঁচিশের এক ছাত্রা ধর্ণায় বসেন৷ তাঁকে এখানে বসতে  না দিয়ে জোর করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায় ও তাঁর অভিযোগ নথিবদ্ধ করে তাঁকে ছেড়ে দেয়৷

হায়দ্রাবাদে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সাংসদরাও৷ প্রথমে জয়া  বচ্চন ও তারপর প্রায় সমস্ত  সাংসদও এই  নৃশংসতম ঘটনার নিন্দা করেন ও  অবিলম্বে  এই ধরণের সমস্ত  অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তির দাবী করেন৷

কিন্তু এই ধরণের ঘটনা এখন প্রায়  প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হচ্ছে৷ প্রতিবাদ  হচ্ছে,  বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে শাস্তিও হচ্ছে তবু এধরণের ঘটনা হ্রাস পাচ্ছে কই?

আসলে এই সমস্ত ঘটনার মূল খোঁজার  চেষ্টা হচ্ছে না৷ বর্তমান সমাজের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা সংস্কৃতির মধ্যেই এই মূল শিকড় খুঁজে পাওয়া যাবে৷

জড়বাদী তথা ভোগবাদী জীবনচর্র্য--- যে  জীবনচর্যায়  আমাদের দেশের  অধিকাংশ নেতা-নেত্রী ও বুদ্ধিজীবীরাও অভ্যস্ত, আর দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি, দূরদর্শন, সিনেমায়  এই ভ্রান্ত  জীবনধারা  ও অসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের মধ্যেই  রয়েছে সমাজের এই ধরণের  অপরাধের  ক্রমবৃদ্ধির মূল শিকড়৷ তারসঙ্গে  যত্র-তত্র মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া, সিরিয়ালে ও বিজ্ঞাপনে নগ্ণ নারীদেহ প্রদর্শণের হিড়িক আর এর মাধ্যমে মুনাফাখোর  পঁুজিবাদীদের  মুনাফা লুন্ঠনের নেশা এই ধরণের অপরাধরূপ রোগজীবানু বৃদ্ধি আঁতুর ঘর৷ এসব না বন্ধ হলে কেবল প্রতিবাদ, চিৎকার ও কঠোর শাস্তিতেও  কাজ হবে না৷

ব্যাপকভাবে নৈতিক ও প্রকৃত আধ্যাত্মিক শিক্ষা--- দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি , সিনেমা  ও দূরদর্শণের মাধ্যমে  এই নৈতিক  ও আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে  ব্যাপকতর  করা দূরদর্শন পত্রপত্রিকায় নগ্ণ প্রায় নারীদেহের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা --- এসব করে, তার সঙ্গে  সঙ্গে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে৷ এই সব অপরাধজনক প্রবণতা বৃদ্ধিকারী সমস্ত নেশার দ্রব্য গ্রহণের ওপর কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে হবে৷ কঠোরভাবে  নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত মানুষের  হাতে প্রশাসন ও প্রশাসনিক তৎপরতাও এখানে যে আবশ্যিক তা বলাই বাহুল্য৷

এভাবে সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন ছাড়া এসব জঘন্য নারকীয় অপরাধ  থেকে সমাজকে মুক্ত করা যাবে না৷ দেশের বুদ্ধিজীবী ও নেতা-নেত্রীদেরই এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে৷