কিশোর বিপ্লবী

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

সেটা ১৯০৬ সাল৷  সারা দেশ ব্রিটিশের অত্যাচারে অতিষ্ট৷ মুক্তি পাগল দেশবাসীর মনে  স্বাধীনতার স্পৃহা জাগাবার জন্য সশস্ত্র উষ্ণ রক্ত বিপ্লবীর দল সবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফেব্রুয়ারি মাস মেদিনীপুর শহরের একটি পুরোনো জেলখানার প্রাঙ্গনে কৃষি শিল্পের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে৷ নানান লোকের আনাগোনা চলছে৷  দর্শকের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়৷ একটি বালক রোজই আসে৷ মেলা দেখে চলে যায়৷

মেলা আরম্ভ হবার ৮ দিন পর  শুরু হলো পুরস্কার বিতরণী সভা৷ জেলায় যত হোমড়া-চোমড়া এবং বড় সরকারী কর্মচারী যোগ দিলেন সেই সভায়৷ চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল৷ অতিথিদের আপ্যায়ণে সভার উদ্যোক্তারা ব্যস্ত ৷

এমন সময় সুযোগ বুঝে সেই বালক মেলার প্রবেশ দ্বারে প্রকাশ্যে কতগুলো বই বিলোতে লাগল৷ বইগুলো ছিল রাজদ্রোহাত্মক ৷ তাই  সে তাড়াতাড়ি কাজ সারতে লাগল৷

দেখতে দেখতে মেলার স্বেচ্চাসেবকদের অধিনায়কের নজরে পড়ে গেল এই ব্যাপারটা৷ তিনি তৎক্ষণাৎ বালককে ধরবার জন্য তৎপর হলেন কিন্তু বালকের শক্তি সামর্থের পরিচয় তিনি বোধহয় আগেই পেয়েছেন৷ তাই নিজে না গিয়ে একজন সেপাইকে পাঠালেন৷

কিন্তু তাকে ধরা তো দুরের কথা সেপাই দুপা এগিয়ে আসতেই বালক তার নাকে বসিয়ে দিল প্রচণ্ড এক ঘুষি, সেপাই যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল,আহত নাকটা ধরে বসে পড়ল মাটিতে৷ নাক দিয়ে গল গল করে রক্ত ঝরতে লাগল৷

মূহূর্তের মধ্যে আশপাশের লোকজন হুড়হুড় করে ছুটে এল৷ সেপাইএর দুরাবস্থা দেখে সবাই ক্রোধে ‘‘মার মার’’ চিৎকার করে উঠল৷

ডানপিটে বালক পালিয়ে এল আলিগঞ্জে৷ লোকচক্ষুর অন্তরালে এক তাঁতশালে কাটালো একমাস৷ কিন্তু ধূর্ত পুলিশের চোখকে সে ফাঁকি দিতে পারল না৷

বালককে হাজতে ধরে আনা হল৷ শুরু হল বিচার৷ কিন্তু বিচারকের বোধহয় মায়া হল বালকের সদ্য প্রস্ফূটিত ফুলের মতো মুখখানার দিকে তাকিয়ে  

বিচারে বালক মুক্তি পেল৷ ইতোমধ্যে সারা শহরময় ছড়িয়ে পড়েছিল বালকের সাহসিকতার কথা৷ তাই মুক্তির পর যখন সে বিচারালয় থেকে বের হল তখন সূকলের সব ছাত্ররা মিছিল করে তাকে নিয়ে শহরের পথে শোভাযাত্রা শুরু করল৷

আবালবৃদ্ধবণিতা সকলের মুখেই বালকের জয়ধবনি৷

দেবদাস করণ তাঁর সাপ্তাহিক ‘‘মেদিনী বান্ধব’ পত্রিকায় বালকের উচ্ছসিত প্রশংসা করে একটি সুন্দর প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন৷ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল তাঁর নাম৷ তাঁর আগুন জ্বালানো কীর্তি প্রতি ঘরে ঘরে মহা আলোড়ণ সৃষ্টি করল৷ বলতে পার কে এই দুর্র্দন্ত সাহসী বালক? সে আর কেউ নয় --- তোমাদের অতি পরিচিত মরণজয়ী বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম৷