কোলকাতার প্রথম বে আইনী বাড়ি

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

আজকাল কোলকাতায় বে-আইনী বাড়ি নিয়ে প্রায়ই হৈচৈ শোণা যায়৷ বেআইনী বাড়ি নির্মাণ ঠেকাতে কোলকাতা কর্র্পেরেশন হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু শুণতে অদ্ভূত লাগলেও এ কথা সত্যি যে, কোলকাতা নগরের পত্তনই হয়েছিল বে-আইনী বাড়ি দিয়ে৷

১৬৯০কে কোলকাতার জন্মকাল হিসাবে ধরা হয়৷ আর জোবচার্নককে বলা হয় কোলকাতার জন্মদাতা৷ তার কারণ জোব চার্নকই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ১৬৯০ সালে কোলকাতাকে ইংরেজদের শক্তিকেন্দ্র হিসাবে বেছে নেন৷ তার আগে অবশ্য ১৬৮৬ ও ১৬৮৭ খ্রীষ্টাব্দে চার্নক দুবার কোলকাতায় এসেছিলেন৷ কিন্তু স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি৷ ১৬৯০ সালের ২৪শে আগষ্ট থেকেই চার্নক কোলকাতাকে ইংরেজ সাম্রাজ্যের উপনিবেশ ভারতের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে শুরু করেন৷

কোলকাতায় তখন বিশেষ জনবসতি ছিল না৷ চারিদিকে বনজঙ্গল খাল বিল পুকুর জলাভূমি৷ আর ছিল নানা জন্তজানোয়ারের উপদ্রব৷

লোকজন বসবাস না করলে কোন অঞ্চলেরই উন্নতি হয় না৷ তাই ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দে কোলকাতা প্রতিষ্ঠা করে জোব চার্নক এক আদেশ প্রচার করে৷ সেই আদেশে বলা হলো, কোম্পানীর দখলি যেকোন পতিত জমি বা জঙ্গলে গাছগাছড়া কেটে পরিষ্কার করে যে কোন স্থানে যে কেউ নিজের ইচ্ছে মতো ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে পারবে৷

সেই আদেশ পেয়ে যে যেখানে খুশি ঘরবাড়ি তুলতে শুরু করলো৷ ফলে পরবর্তীকালে দেখা দিল নানান অস্বাস্থ্যকর বিশৃঙ্খলা৷ এলোপাথাড়ি ঘরবাড়ি তৈরির ফলে  নগরে বাসিন্দার সংখ্যা বৃদ্ধি পেল বটে কিন্তু নোংরা জল নিকাশির ব্যবস্থা বা পয়ঃপ্রণালীর অভাবে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে৷

অর্থাৎ সেই সময় থেকেই আইনমাফিক গৃহনির্মাণ না করায় দেখা দিল এক ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ বলা যেতে পারে, সেই সময়কার প্রত্যেকটি বাড়িই ছিল বেআইনি৷

যার ফলে ১৭০৭ সালে মার্চ মাসে কাউন্সিল আর একটি  আদেশ জারী করতে বাধ্য হন৷ সেই আদেশটি হলো--- বিশৃংঙ্খলভাবে যেখানে সেখানে আর কাউকে বাড়ি নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না৷

অনেকে আবার ফোর্টউইলিয়ামের অনুমতি না নিয়েই বাড়ির চারিদিকে পাঁচিল তুলেছিলেন৷ যা আইন বিরুদ্ধ৷ কেউ বা বাস্তু জমিতে পুকুর কাটিয়ে ছিলেন৷

অবশেষে এ ধরণের বে আইনী ঘরবাড়ি নির্র্মণ বন্ধ করার জন্য কোম্পানী একটি নোটিশ দুর্গাদ্বারে টাঙিয়ে দেন৷

অর্থাৎ কোলকাতা নগরের পত্তনটাই ঘটেছিল বেআইনী বাড়ি দিয়ে৷