মূত্রাশ্মরী (কিড্নী ষ্টোন)

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

লক্ষণ ঃ পেশাব ত্যাগে ক্লেশ হওয়া, বিন্দু বিন্দু পেশাব হওয়া, কখনও কখনও মূত্রস্তম্ভ বা রক্তমূত্র হওয়া এই ব্যাধির লক্ষণ৷

কারণ ঃ মানুষের যকৃৎ–প্লীহার নীচে শরীরের দুই পাশে দুইটি মূত্র গ্রন্থি (বৃক্ক বা কিডনি) আছে৷ যকৃৎ যন্ত্রটিকে বহুবিধ কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে রক্ত সংশোধনের ষোল আনা কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ তাই তার অবশিষ্ট বা অসমাপ্ত কাজ মূত্র–গ্রন্থি দুটিই করে দেয়৷ মূত্রগ্রন্থি দেহের দূষিত বস্তুসমূহকে ও উদ্বৃত্ত জলকে ছেঁকে বিশুদ্ধ রক্তকে দেহপরিপোষণের কাজে পাঠিয়ে দেয়৷ এই উদ্বৃত্ত জল ও অপ্রয়োজনীয় বস্তুসমূহ মূত্রগ্রন্থির নিম্নস্থ গহ্বরে সঞ্চিত হয় ও সেখান থেকে মূত্রাশয়ে প্রেরিত হয়৷ অবশেষে এই উদ্বৃত্ত তরল  পেশাবরূপে মূত্রনালীর মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায়৷ রক্তে অম্লভাগের আধিক্য থাকলে অথবা রক্ত অন্য কোন বিষে জর্জরিত হয়ে পড়লে হৃদ্‌যন্ত্র, যকৃৎ, মূত্রগ্রন্থি (বৃক্ক) এরা সকলেই দুর্বল হয়ে পড়ে৷ এমনকি রক্ত–সঞ্চালন ব্যবস্থাও  অব্যাহত রাখবার জন্যে হৃদ্‌যন্ত্র রক্তবহা নাড়ীর উপর যথোপযুক্ত চাপ দিতেও ক্মশঃ হয়ে পড়ে৷ এই রকম অবস্থা কিছুদিন ধরে চলতে থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে মূত্রগ্রন্থির গহ্বরে ও মূত্রাশয়ে যে মূত্র সঞ্চিত হয় তাতে উদ্বৃত্ত জলের তুলনায় অন্যান্য দূষিত বস্তুর পরিমাণ খুবই বেশী হয়ে পড়ে৷ এই মূত্র থিতিয়ে গেলে ওই দূষিত বস্তুসমূহ দানা বাঁধতে থাকে৷ এই দানা বা পাথরগুলি ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে বা হতে পারে৷ মূত্র ত্যাগ কালে এদের অবস্থিতি নিবন্ধন মূত্রপ্রবাহ রুদ্ধ হবার উপক্রম হয়৷ সে অবস্থায় দেহযন্ত্র এগুলিকে সরিয়ে নিয়ে মূত্রপ্রবাহকে সচল রাখবার চেষ্টা করে৷ দেহযন্ত্রের এই চেষ্টাই রোগীর কাছে যন্ত্রণারূপে অনুভূত হয়৷ দূষিত বস্তুতে পরিপূর্ণ মূত্র যেখানে যেখানে থিতোবার সুযোগ পায় সেখানে সেখানেই এ সকল দূষিত বস্তু দানা বেঁধে মূত্রাশ্মরী রোগ সৃষ্টি ককরতে পারে৷

চিকিৎসা ঃ

প্রত্যুষে ঃ উৎক্ষেপমুদ্রা, যোগমুদ্রা, দীর্ঘপ্রণাম, পদহস্তাসন ও নাসাপান, আগ্ণেয়ীমুদ্রা বা আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷

সন্ধ্যায় ঃ অগ্ণিসার, কর্মাসন, সর্বাঙ্গসন৷

পথ্য ঃ–মাদকদ্রব্য ও আমিষ খাদ্য, ঘি ও কোষ্ঠৰদ্ধতাকারক খাদ্য কঠোরভাবে পরিত্যজ্য৷ রোগীকে প্রচুর পরিমাণে (আন্দাজ ৪৷৫ সের) জল পান করতে হৰে ও একাদশী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় নেবুর রস সহ স–অম্বু উপবাস করতে হৰে৷ রোগ যখনই একটু ৰেড়ে যাৰে তখনই অন্যান্য খাদ্য ৰন্ধ রেখে কেবল নেবুর জল খেয়েই থাকতে হৰে৷ নিরম্বু উপবাস এ ব্যাধিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ৷

বিধিনিষেধ ঃ– রোগীর যকৃত যত বেশী বিশ্রাম পায় ততই মঙ্গল৷ তাই ফলের রস ও ক্ষারধর্মী খাদ্যই এই রোগের প্রশস্ত৷ রোগীকে অবশ্যই যথেষ পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করতে হৰে কারণ এটি ধনীদেরই রোগ৷ বিশেষ করে ধনীগৃহের মহিলাদের মধ্যেই এর প্রাদুর্ভাব বেশী৷ নেৰু এই রোগে ঔষধ ও পথ্য দুই–ই৷

কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ (১) দু’তোলা মসিনা বা কুলোত্থ কলায় রাত্রে আধ পোয়া গরম জলে ভিজিয়ে পরদিন প্রাতে সেবন করলে,

অথবা

(২) পাথরকুচি পাতার রস (দু’ তোলা) জলের সঙ্গে পান করলে পেশাবের ক্লেশ দূরীভূত হয়৷ এই রোগেও রোগীকে খুব বেশী জল খেতে হবে, খুব বেশী নেবু ব্যবহার করতে হবে ও নিরম্বু উপবাস বন্ধ রাখতে হবে৷ নেবুর রস সহ স–অম্বু উপবাস যত বেশী করা যায় ততই ভাল৷ হরীতকীর অস্থি গরম দুধে ফুটিয়ে অস্থি ফেলে দিয়ে সেই দুধ পান করলে, অথবা হরীতকী, মুথা, লোধ ও বটফল একত্রে সম পরিমাণে দু’তোলা নিয়ে তার ক্কাথ পান করলেও এই রোগে আশু উপকার পাওয়া যায়৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের

‘যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ’ থেকে  গৃহীত)