নারকোল পৃথিবীর বিষুবরেখীয়, কর্কটক্রান্তীয় ও মকরক্রান্তীয় এলাকায় জন্মায়৷ নারকোলের প্রজাতি আছে অনেক রকমের৷ তবে বয়স–সীমা ও উচ্চতার বিচারে ভারতীয় নারকোল মুখ্যতঃ দু’টি শাখায় বিভক্ত৷ কনিষ্ঠ প্রজাতির নারকোল আন্দাজ ৭ বছর বয়সে ফল দেয়, দেয়ও মাঝারি পরিমাণে বাঁচে আন্দাজ ৪০ বছর৷ গরিষ্ঠ প্রজাতির নারকোল ফল দেয় আন্দাজ ৯ বছর বয়সে বাঁচে আন্দাজ ৭৫ বছর, ফল দেয় যথেষ্ট পরিমাণে৷ আজকালকার অধিক ফলনশীল নারকোল* তিন বৎসর বয়সে ফল দিতে শুরু করে৷ নারকোল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভারত৷ ভারতের নারকোল গাছ ও ফলের সকল অংশই কোন না কোন কাজে লাগে৷ সেজন্যে সংস্কৃত ভাষায় নারকোল গাছের অপর একটি নাম ‘কল্পতরু’৷ বৈদিক ভাষায় নারকোলের কোন নাম নেই৷ যতগুলি নাম আছে তা সবই লৌকিক সংস্কৃত ভাষায়৷
নারকোল একটি পুষ্টিকর খাদ্য৷ নারকোলের শাঁস থেকে তেল তো হয়ই, অধিকন্তু তার দুধ থেকে গোদুগ্ধের মত বিভিন্ন পণ্য তৈরী করা যায়৷ দুধ বার করে নেওয়া নারকোলের শাঁসেরও পুষ্টিমূল্য থাকে ও তা থেকে রুটি, বিসুক্ট প্রভৃতি প্রস্তুত করা চলে৷ তালের কান্দি থেকে যেমন রস পাওয়া যায়, পুরুষ ও স্ত্রী–নারকোলের কান্দি থেকেও ঠিক তেমনি রস পাওয়া যায়৷ তা থেকে গুড়ও তৈরী হয়৷ নারকোল ভস্ম ঔষধরূপে ব্যবহূত হয়৷ শুকনো নারকোল (হিন্দীতে ‘গড়ী’) অগ্ণিমান্দ্য রোগের ঔষধ৷
সমাজে সাধু স্বভাবের অথচ কঠোর প্রকৃতির লোককে সংস্কৃত সাহিত্যে নারকোলের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে৷ ক্ষলা হয়ে থাকে ঃ
‘‘নারিকেরসমাকারাঃ দৃশ্যন্তে হি সুহূদজনাঃ৷
অন্যে বদরিকাকারাঃ বহিরেব মনোহরাঃ৷৷’’
অর্থাৎ যারা সত্যিকারের খাঁটি মানুষ, সৎলোক তাঁরা ঠিক নারকোলের মত৷ ওপরে রয়েছে কঠোর খোলা ও নীরস ছোবড়া কিন্তু ভেতরে রয়েছে সুস্বাদু জল ও সুমিষ্ট শাঁস৷ আর তদ্বিপরীত স্বভাবের মানুষেরা কুলের মত৷ ওপরে রয়েছে নরম খোলা ও নরম শাঁস কিন্তু ভেতরে রয়েছে কাঁটাওয়ালা বীজ৷
অজীর্ণ রোগে ও অম্লরোগে কিছু বিধিনিষেধ ও ব্যবস্থা ঃ
অজীর্ণ রোগের ফলে অনেক প্রাণঘাতক রোগের সৃষ্টি হতে পারে৷ তাই আহারের বিধিনিষেধ কঠোর ভাবে মেনে চলা উচিত৷ পুরনো চালের ভাত (যেমন পোরের ভাত) এ রোগে পথ্য৷ ঘোল অজীর্ণ রোগীর পক্ষে বিশেষ হিতকারী৷ নুনে জরিয়ে জামেরী নেবু অজীর্ণ রোগে একটি ভাল ব্যবস্থা৷ শোভাঞ্জন বা শোজনে পাতার ঝোল প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে প্রথম পাতে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই অজীর্ণ রোগে ভাল ফল পাওয়া যায়৷ ক্ষেলপাতা, কালমেঘ পাতা, সোমরাজ পাতা, আদা, যোয়ান একত্রে পিষে, তা দিয়ে ছোট ছোট ক্ষড়ি তৈরী করে সেগুলি শুকিয়ে নিতে হবে৷ প্রতিদিন দুপুর ও রাতের খাবারের পর একটা করে সেই ক্ষড়ি খেতে হবে৷ অজীর্ণ রোগে এই ঔষধও কাজ দেয়৷
অম্লরোগীর ক্ষুধার সময় খাদ্য গ্রহণ না করে পাচক পিত্তকে কখনই সঞ্চিত হবার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়৷ কেননা সেক্ষেত্রে রক্তের অম্লভাগ অত্যধিক ক্ষেড়ে গিয়ে বাতরোগ বা অম্লশূল দেখা দিতে পারে৷ প্রাত্যহিক আহারের পরে, মুখশুদ্ধি হিসেবে মৌরীর সঙ্গে নারকোল কুরো বা একই ঔষধ দিনে তিন/চার বার খেলে অম্লরোগে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়৷ –
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে গৃহীত)