নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, চৌকিদারি ও দেশভক্তি

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

ভারতীয় গণতন্ত্রের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় উৎসব  লোকসভার সাধারণ নির্বাচন সমুপস্থিত৷ ভারতের নির্র্বচন কমিশন পরিচালিত দীর্ঘতম বোট (ভোট) প্রক্রিয়ার (১১ এপ্রিল ২০১৯ থেকে ১৯শে মে পর্যন্ত সাত দফা) শুভারম্ভ হয়ে গেছে যার পরিসমাপ্তি ঘটবে ২৩শে মে ২০১৯ তারিখে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে৷ ভারতবর্ষের আকাশে বাতাসে এখন শুধুই বোটের (ভোটের) গন্ধ, সাধারণ নাগরিকদের বোট প্রার্থীগণের সততা সম্পর্কে বিষম ধন্দ আর রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের সিংহনাদ, আর্তনাদ, বাদ-বিসম্বাদ ও অকথা-কুকথার দ্বন্দ্ব৷ পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে-গঞ্জে,শহরে-নগরে দোরে দোরে, পথে-ঘাটে করজোড়ে দণ্ডায়মান ও ভ্রাম্যমান  বোট প্রার্থীর দল, যাঁরা অন্যান্য সময়ে সাধারণতঃ ক্বচিৎ-কদাচিৎ দৃশ্যমান হন৷ এই নির্বাচনের সময়টুকুতেই সাধারণ নাগরিকগণ উপলদ্ধি করতে পারেন--- সত্যিই তাঁাদের কিছুটা হলেও মূল্য আছে, কিংবা দেশটা তাঁদেরও৷ এই সময়টাতেই জনতা জনার্দন রূপে পুজিত হন, তাঁদের জন্যে প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছোটে, কত কুম্ভীরাশ্রু বর্ষিত হয়, সেলিব্রেটি প্রার্থীরা হাতের নাগালে আসেন, স্পর্শে- আলিঙ্গনে ধন্য করেন, মাঝে মাঝে  ভাগ্যবান শিশুদের কোলে তুলে আদর করেন--- বোঝাতে চান একমাত্র তারাই তাঁদের একান্ত আপনজন৷  অপরপক্ষে সংবাদপত্র , রেডিও , টেলিভিশনে কত শত তর্ক-চর্র্চ-আলোচনা-বিশেষজ্ঞদের বিচার বিশ্লেষণ, বিজ্ঞাপন আর বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার নির্বাচনপূর্ব জনসমীক্ষার ভিত্তিতে অনুমান-নির্ভর নির্বাচনোত্তর পূর্বাভাস ৷

এবছর ভারতের বোটের বাজারে বেশ কিছুদিন থেকেই চৌকিদারদের নিয়ে কয়েকটি শব্দবন্ধ ঘুরপাক খাচ্ছে, এগুলি হলো--- দেশের চৌকিদার, ম্যায় ভি চৌকিদার, চৌকিদার চোর হ্যায় ইত্যাদি৷ প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে চৌকিদার নিয়োগ করা হয় যাদের যৎকিঞ্চিৎ ভাতাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷ দুরবর্তী থানার দারগা পুলিশের কাছে চৌকিদার হলেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তাঁদের প্রতিনিধি৷ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদীজি প্রথমে নিজেকে ‘চা-ওয়ালা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে অন্যান্য সকলের থেকে একটি পৃথক অস্তিত্বের প্রদর্শন করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে তাঁর পরিচিতিকে আরেকটু বিস্তৃত করে ‘চৌকিদার’রূপে অভিহিত হন৷ এই চৌকিদার শব্দটির মাধ্যমে তিনি সম্ভবতঃ এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে দেশের অজ গ্রাম থেকে রাজধানী নগর পর্যন্ত সর্বত্র তাঁর অতন্দ্র প্রহরা বিরাজমান ও কোন দুর্নীতি বা অন্যায় তাঁর চোখকে এড়িয়ে যেতে পারবে না৷ শুধু তাই নয়, অতি সম্প্রতি তিনি আরেকটি শব্দবন্ধ চালু করেছেন--- ‘‘ম্যা ভি চৌকিদার’’ বা আমিও চৌকিদার৷  তিনি তাঁর মন্ত্রীসভার ও দলের সদস্যগণসহ সাধারণ মানুষজনকেও এই শব্দবন্ধের দ্বারা পরিচিত হতে  নির্দেশ বা উপদেশ দিয়েছেন৷ অবশ্য পৃথিবীর বৃহত্তম প্রজাতন্ত্র ভারতবর্ষের সংবিধান প্রত্যেক জননেতাকে যারা বিভিন্ন আইনসভার সদস্য ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী---সকলকেই জনগণের সেবায় ও সুরক্ষায় এই অতন্দ্র প্রহরার দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করেছে৷ দেশের কোথাও কোন অবিচার, অন্যায় দুর্নীতি, জনগণের দুর্দশা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে তা নিরপেক্ষভাবে বিচার করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্ব৷ পক্ষান্তরে দেশের নাগরিকগণেরও দায়িত্ব এটাই যে জননেতাগণ তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখা৷ সুতরাং এই অর্থে প্রতিটি নাগরিকই ‘চৌকিদার’৷ আর প্রশাসকগণ যদি তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে  পালন  না করেন, তাঁদের প্রহরার শৈথিল্যে যদি দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ অপহরণ বা প্রতারণা করে দুর্জন ব্যষ্টিরা দেশে বা বিদেশে পালিয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসক বা তথাকথিত দেশের চৌকিদার সম্পর্কে সন্দেহ , সংশয় দানা বাঁধে৷ কেউ কেউ ‘‘চৌকিদার চোর হ্যায়’’ এই শব্দ বন্ধটি উচ্চারণ করতেই পারেন আর বাস্তবে এই শব্দবন্ধটি বিভিন্ন জায়গায় উচ্চারিত হচ্ছেও৷ যাই হোক, এই বিষয়ে জনগণই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ বিচারক৷ প্রত্যেকেই তাঁদের বিচার-বুদ্ধি ,অভিজ্ঞতা উপলদ্ধির মাধ্যমে বিবেচনা করেই আসন্ন নির্বাচনে  ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন৷

২০১৯শের নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের মধ্যে দেশভক্তি তথা দেশপ্রেম বিষয়ে নিরতিশয় চচর্া- আলোচনা চলছে৷ বিশেষতঃ ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে কশ্মীরের  পুলওয়ামায় সি.আর.পি.এফ কনভয়ে পাকিস্তান আশ্রিত জঙ্গীদের আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৪৯ জন সি.আর.পি.এফ-এর মৃত্যু ও তৎপরবর্তী প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের পক্ষ থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি  মিরাজ যুদ্ধ বিমান হানায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরের জঙ্গীঘাঁটির উপর বোমা বর্ষণের ঘটনার পর এই চর্র্চয় রাজনৈতিক আসর অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়েছে৷ প্রথমতঃ গত ৮ই ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা বাহিনীর তরফে সতর্ক বার্র্ত জানানোর পরেও বিরাট কনভয়ে জঙ্গীহানার প্রেক্ষিত ও প্রতিক্রিয়া মূলক যুদ্ধ বিমান হানায় জঙ্গীঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে  শাসকদল ও বিরোধীদলগুলি সহমত না হওয়ায় এই দেশভক্তি বা দেশপ্রেম চর্র্চর উদ্ভব৷ দেশের সরকারের জনগণের সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে  সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার অবশ্যই রয়েছে--- একইভাবে জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করা বা প্রশ্ণ করার অধিকার অন্যান্যদলসহ সাধারণ জনগণেরও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার  বা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে৷ আর এই প্রশ্ণগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো এক্তিয়ার শাসক পক্ষের নেই৷ তাদের কৃতকর্মের সংশয়াতীতভাবে ব্যাখ্যা অবশ্যই জনগণের সম্মুখে উপস্থাপিত করতে হবে৷ কিন্তু তা না করে যদি বাগাড়ম্বরের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে বিরুদ্ধ মতবাদীদের (ব্যষ্টি বা দল যেই হোক না কেন) দেশ বিরোধী, সেনা বিরোধী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী ইত্যাদি হিসেবে দেগে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়, তবে সেটা সাধারণ নাগরিকদের অপমান ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়৷ এই কারণেই এই ধরণের বিরুদ্ধ মতকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্নস্থানে বহু অবাঞ্ছিত  অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যার দায় সরকারকেই নিতে হবে৷ কেবলমাত্র নির্বাচনী প্রচারের স্বার্থে দেশভক্ত বা দেশবিরোধী তক্মা ব্যবহারের কুমতলব হয়তো বুমেরাং হয়েও আসতে পারে৷ কারণ শাসকদলে যারা রয়েছেন, তারাই একমাত্র দেশভক্ত ও ধোয়া তুলসীপাতা, আর বাকিরা সব দেশবিরোধী দুরাত্মা---এই ভাবনার দিন শেষ হয়ে গেছে৷ তথাকথিত দেশভক্তদের নিশ্চয়ই  অত্যাচারী সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের কুশাসন ও তার বিরুদ্ধে দেশবাসীর দুর্জয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস স্মরণে আছে৷ অপরপক্ষে এটাও নির্ভেজাল সত্যি যে দেশের প্রতিটি মানুষেরই দেশগড়ার কাজে কোন না কোন অবদান রয়েছে৷ সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকদলের যেমন দায়িত্ব আছে, ঠিক তেমনি বাকী দলগুলিরও কর্তব্য ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট রয়েছে৷ দেশের প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বও সুস্পষ্টভাবে বন্টন করা আছে৷ সেনাবাহিনীর কাজ দেশের অখণ্ডতা ও সুরক্ষা প্রদান, আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বিচার বিভাগের কাজ মানুষের কাছে সুবিচার পৌঁছে দেওয়া, একইভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,কৃষি, খাদ্য, বস্ত্র,আবাসন ইত্যাদি সমস্ত বিভাগেরই সুনির্দিষ্ট কর্মবিভাজন রয়েছে--- আর সেই কাজ সুষ্টুভাবে সম্পাদন করাই দেশপ্রেম বা দেশভক্তি৷ সকলকে নিয়েই দেশ, কারোর গুরুত্ব কারোর চেয়ে কম নয়---  এই ভাবনাটা মনের মধ্যে গেঁথে গেলে আর কোন গোলমাল থাকে না৷ তা না হলেই বুঝতে হবে ‘‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’’ ৷

নির্বাচনী প্রচারের বাজারে আরেকটি বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইস্তেহার বা প্রতিশ্রুতি৷  গত নির্বাচনে ‘আচ্ছে দিন,বেকারত্ব সমাধান, বছরে ২কোটি চাকুরী,  কালো টাকা উদ্ধার করে সকলের ব্যাঙ্ক এ্যকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা, দুর্নীতি অপনয়ন, সার্বিক উন্নয়ণ, সুশাসন ইত্যাদি বহু প্রতিশ্রুতি শোণা গেছিল৷ এগুলির কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা সকলের বিচার্য বিষয়৷  এবারও প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে৷ কেউ বলছেন কৃষকদের আয় দু’গুণ তিনগুণ করবেন৷ সর্বাত্মক উন্নয়ণ ঘটাবেন, কেউ বলছেন কৃষিঋণ মকুব  করবেন,  প্রত্যেকের জন্যে নূ্যনতম রোজগার সুনিশ্চিত হবে, তথাকথিত গরীবদের এ্যাকাউন্টে  বছরে ৭২ হাজার টাকা জমা করা হবে, আবার কেউ বলছেন ১০০ দিনের কাজ ২০০দিন পর্যন্ত বর্ধিত করবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু প্রতিশ্রুতিগুলি কতটা বাস্তবসম্মত, যুক্তিসঙ্গত, বিজ্ঞানসম্মত, অর্থ কোথা থেকে আসবে, কোন্ নীতি প্রযোজ্য হবে--- এইসব বিষয়ে বিশেষ কোনো আলোকপাত করা হচ্ছে না৷ যাইহোক অনাগত ভবিষ্যতই এর সদুত্তর দিতে পারবে৷ তবে সত্যিকারের পরিকল্পনা ছাড়া এগুলি প্রতিশ্রুতি হয়েই রয়ে যাবে৷

একটা দেশ বা সমাজ গড়ে ওঠে, তার নিজস্ব সংস্কৃতি- ঐতিহ্য অনুসারে সুনির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শকে ভিত্তি করে৷ সমাজের বুকে যতদিন শোষণ চলে ততদিন প্রকৃত সমাজ গড়ে উঠতে পারে না৷ বর্তমানে পৃথিবীতে যে দুটি অর্থনৈতিক মতবাদ (পুঁজিবাদ ও জড়বাদী কমিউনিজম) এসেছে , এঁদের দ্বারা মানুষের বিশেষ কল্যাণ সাধিত হয়নি৷ পুঁজিবাদী শোষণে পুঁজিপতিরা হয়েছে ধনবান আর দরিদ্র ক্রমশঃ দরিদ্রতর৷ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের স্বার্থে ও শোষণে লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে বঞ্চিত, শোষিত, নিপীড়িত৷ জড়বাদী কমিউনিজমের চাপে ব্যষ্টিসত্ত্বা হয়েছে অবহেলিত-উপেক্ষিত ও জড়ত্বে পর্যবসিত৷  পুঁজিবাদ মানুষকে করেছে সর্বহারা আর কমিউনিজম সেই সর্বহারা মানুষের মনুষ্যত্বকে বিনষ্ট করে পশুতে পরিণত করেছে৷ এই পরিস্থিতিতে এক যুগসন্ধিক্ষণে মহান দার্শনিক  শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার জগৎ কল্যাণে প্রবর্তন করেছেন প্রাউট বা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব৷ প্রাউটের অর্থনীতি অনুযায়ী বিশ্বের সমস্ত সম্পদ সকলেরই সাধারণ সম্পত্তি, কেউ অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না৷ সকলের জন্যে নূ্যনতম প্রয়োজন খাদ্য ,বস্ত্র , বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে৷ এরজন্যে ব্লকভিত্তিক সমস্ত স্থানীয় সম্পদের সর্বাধিক উপযোগের পরিকল্পনার মাধ্যমে বিকেন্দ্রিত অর্থনীতি  চালু করতে হবে৷  এরফলে সকল স্থানীয় মানুষের একশত শতাংশ কর্মসংস্থানের নিশ্চিততা প্রদান করা যাবে ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ক্রমোন্নয়ণ ঘটাতে হবে৷ প্রচলিত গড় মাথা পিছু আয় ব্যবস্থা মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, কারণ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের আয় কোটি কোটি টাকা ও বৃহত্তর জনসমুদায়ের আয় যৎসামান্য---ফলে তাঁদের অবস্থা ক্রমশঃ শোচনীয় হতেই থাকে কিন্তু তার কোন প্রতিফলন গড় মাথা পিছু আয়ের দ্বারা সূচিত হয়না৷ তাই প্রতিটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটিয়ে ন্যুনতম প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্যে সর্বাধিক কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন সুনিশ্চিত    করতে হবে আর এই উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা সমবায়ের মাধ্যমে (উৎপাদক সমবায় ও উপভোক্তা সমবায়) পরিচালিত হবে যাতে কোন ফড়ে বা দালাল কোন সুযোগ না পায় ও সাধারণ মানুষ তার উপযুক্ত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না হয়৷ এই সমগ্র ব্যবস্থার  নেতৃত্বে থাকবে কঠোর নীতিবাদী,আধ্যাত্মিকতায় সমুন্নত, চারিত্রিক দৃঢ়তা সম্পন্ন আপোষহীন সংগ্রামী সদবিপ্রগণ৷ সমাজের প্রতিটি মানুষকে প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার পথে অবশ্যই চলতে হবে কারণ আধ্যাত্মিকতার ভিত্তি ছাড়া নৈতিকতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়৷ প্রকৃত নেতাকে বাগাড়ম্বর পরিত্যাগ করে আধ্যাত্মিকতার অনুসারী হয়ে প্রকৃত নীতিবাদী হতেই হবে৷ তবেই তাঁর পক্ষে জনগণের সেবা ও সুরক্ষা প্রদান সম্ভব হবে৷ এছাড়া আর অন্য কোনো বিকল্প নেই৷