সার্থক গণতন্ত্রে শাসক বিরোধী সম অধিকার সম মর্যাদা পায়

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমানে সারা ভারত যুক্তরাষ্ট্রে যে যৌথশাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের নামে দলীয় শাসকগণ চালাচ্ছেন রাজ্য ও কেন্দ্রগুলিতে সেটা একটি রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় নামে গণতান্ত্রিক কিন্তু কেন্দ্রের শক্তিটা শাসন ক্ষেত্রে অনেকাংশে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাকে অস্বীকার করার লক্ষণগুলি খুবই স্পষ্ট৷ তাই বর্তমানে বিরোধী দলের রাজ্য সরকারগুলি আর্থিক ও অন্যান্ন দিক থেকে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাতে বেশ কিছুটা কালিমালিপ্ত হচ্ছে৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় কেন্দ্রের দেয় আর্থিক সাহায্য দলীয় সংকীর্ণতাবশতঃ বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ এটা এক ধরণের আইনতঃ অপরাধ কি নয়? এতে নাগরিকগণই বঞ্চিত হচ্ছেন যে অর্থ কর স্বরূপ কেন্দ্র তারা অতি কষ্টে দিয়ে থাকেন৷ তাতে সেই ৭০ শতাংশ অতি গরিবরাই বঞ্চিত কি হচ্ছেন না৷ তাই প্রবীন দেশনেতা পশ্চিমবাঙলার স্বর্গতঃ প্রফুল্ল সেনই শেষ জীবনে বলে গেছেন যে দলতন্ত্রের চেয়ে নির্দল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই কাম্য৷ এই ধরণের মনোভাব অনেক বয়স্ক প্রবীনদের আজও৷ তারা এই দলীয় শাসনের পক্ষে সন্তুষ্ট নন৷

দেখা যাচ্ছে ধীরে ধীরে কেন্দ্র সরকার সব ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়ছেন৷ তাই ইন্দিরাগান্ধী লোকসভাকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রপতিকে জোর করে দেশে অভ্যন্তরী জরুরী অবস্থা জারি করতে বাধ্য করে৷ কেন্দ্রের খাঁচায় বন্দী পাখী সিবিআই দিয়ে নানা মিথ্যা অভিযোগে লক্ষ লক্ষ নাগরিকদের বন্দী করে খাঁচায় পুরে সারা দেশটাকে বন্দিশালায় পরিণত করে৷

সংবিধান মতে এই দেশ নাকি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসিত হচ্ছে! গর্ব করে বলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ৷ কিন্তু শাসনতো চলছে সংকীর্ণতাবাদী দলীয় শাসনে যারা গণতন্ত্রের ব্যাখ্যাটাই বোঝে না৷ এই সরকার তো আচরণে দেখাচ্ছে যে দলই ধীরে ধীরে আজ দেশে শাসক হয়েছে৷ গণতন্ত্রটাই মৃত! এটা শুধু কাগজে কলমে!

দীর্ঘ ৭৭ বছরের স্বাধীন দেশের কি রাজ্য আর কি কেন্দ্র সরকার ভুলে যান কেন তাঁরা শাসনে আসেন একাধিকবার৷ গণতন্ত্রে যে বিরোধী দলের সংসদ ও বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তা শাসকদল মানতে চায় না৷ তাঁদের জনপ্রতিনিধিদের লোকসভায় বিধানসভায় সংখ্যালঘু হওয়াতে একেবারে অস্বীকার করে, সাসপেণ্ড করে বা অগ্রাহ্য করে দলের জোরে বিল পাশ করিয়ে নিজেদের বাহাদুরী দেখান! দেখা গেছে এ দেশেই বিধানসভায় বিরোধী নেতা মাত্র একজন, তাঁকে সম্মান দিয়ে বক্তব্য রাখতে বলতেন স্বয়ং ডাঃ বিধান রায়৷

আর আজ সংসদে ১৪৭জন বিরোধী সংসদকে সাসপেণ্ড করে লোকসভায় বিজেপি সরকার দলীয় স্বার্থে কালাকানুন পাশ করাচ্ছেন! এ কেমন সরকার! সবজনগনই ঘুমিয়ে আছেন! তাতো নয়! তাই এদেশের দলীয় সরকার গুলি কোনদিন দলের ঊধের্ব উঠে দেশের স্বার্থের কথা ভাবতে পারেনি, গণতন্ত্রকেও সম্মান দিতে শেখেনি৷ ভোটের পূর্বে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রয়োজনও বোধ করেনি৷ অজ্ঞ জনগণও কোনদিন জানার প্রয়োজন বোধ করে না, কেন তারা প্রতিশ্রুতি পালন করে না৷

নির্বাচনে যেন তেন প্রকারে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেই যেন দলীয় শাসকগণ হয়ে ওঠেন এক একজন সর্বাধীনায়ক কেন্দ্রে ও রাজ্যের৷ এ কেমন মহান গণতন্ত্র! দলতন্ত্রের নামে এ কি স্বেচ্ছাচারিতা নয়৷ সত্যের মর্যাদা রক্ষায় ও দেশের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে এই কথাগুলি বলছি৷ তাই দয়া করে শাসকগণ একটু সংযত হোন৷ বিরোধীদের মান্যতা দিন৷ তবে বিরোধী পক্ষ যে সব হইচই করে অতীব বিপ্লবীদের মতো আচরণ করে থাকেন সেটাও পবিত্র গণতন্ত্রের পীঠস্থানে শোভা পায় না৷ তাই বিরোধীদেরও এই আচরণকে জনগণ ধিক্কার জানায়৷

সব চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ও কাণ্ড তা হলো দুর্নীতির ভাগীদারিতে শাসক বিরোধী উভয়ে পক্ষের ওপর তলার নেতারা বোঝা পড়া করে চলে তা সে সংসদে বা বিধান সভায় যতই দলাদলি করুক৷ অবুজ জনগণ নেতাদের চালাকি ধরতে পারে না৷ তারা দলীয় ঝাঁণ্ডা হাতে পরস্পরে মারামারি করে মরে৷ গণতন্ত্রের আড়ালে এইভাবেই রাষ্ট্রীয় সম্পদকে গ্রাস করে নিচ্ছে পুঁজিপতিরা৷

সব থেকে করুণ অবস্থা বাঙলার৷ ৬৫ বছর ধরে যারাই বাঙলার শাসন ক্ষমতায় থেকেছেন বা বিরোধী দলে থেকেছেন উভয়েই দিল্লীর অঙ্গুলি হেলনে বাঙলার স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দিল্লীকে তোষণ করে চলেছে৷ বর্তমানের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এখনও পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক একটি আঞ্চলিক দল৷ মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের উন্নয়নের সদিচ্ছা থাকলেও প্রতিহিংসা পরায়ণ বিরোধী দল ও দলীয় দুর্নীতি পরায়নদের জন্য তিনি সর্বাংশে সফল হতে পারেনি৷ দলগুলির নেতাদের কাছে রাজ্যের স্বার্থ অপেক্ষা ব্যাষ্টিগত দলীয় স্বার্থ অনেক বড় তাই জনগণকে বোকা বানিয়ে রেখে দলীয় শাসনতন্ত্র কায়েম করে নিজেদের স্বার্থ গোছায়৷

গণতন্ত্রের যে সারকথা---জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার ৭৭ বছরে তা আজও প্রতিষ্ঠিত হল না৷ নামেই জনগণের সরকার, জনগণ শুধু ভোটটুকু দিতে পারে, তাও সব সময় নয়৷ ভোটের দিন ছাড়া জনগণের সঙ্গে সরকারের পাঁচবছরে আর কোন সম্পর্ক থাকে না৷