রুটি চাটুতে সেঁকে তারপর উনুনে ফেলে গরমে ফুলিয়ে নিলে তা ব্যবহারের উপযুক্ত হয়, অন্ততঃ আজকালকার নিয়মে৷ কিন্তু আসলে রুটিতে যদি ঘি বা জল না বোলানো হয় তবে তা অগ্ণ্যাশয় (Pancreas) ও যকৃতের ওপর ধাক্কা দেয়৷
তাই প্রাচীনকাল থেকে ইংরেজ আমলের গোড়ার দিক পর্যন্ত ভারতে যখনই ‘রুটি’ তৈরী করা হত, তাতে হাতে করে ঘি–বোলানো তো হতই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবার জল বোলানোও হত৷ তারপরে মুখ্যতঃ অভাবের তাড়ণায়, গৌণতঃ অন্যান্য কারণে আজকাল সাধারণ লোক রুটিতে ঘি মাখায় না৷ আর ঘি না মাখিয়ে শুধু জল মাখালে নরম হয় ঠিকই, তবে তা দাঁতে জড়িয়ে যায়৷ পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও জম্মুতে দেখেছি তারা গরম রুটিতে ঘি অবশ্যই মাখায়৷ একটি একটি করে ফুলো রুটিতে ঘি মাখিয়ে পাতে পরিবেশন করে৷ ওদিকের মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য আছে যথেষ্ট, খাঁটি ঘি–ও পাওয়া যায়৷
মহারাষ্ট্রের পুরণপুরি–ও ঘি মাখিয়ে খাওয়ার রীতি৷ পূর্বভারতে বিশেষ করে ৰাংলা ও অসমে আর্থিক অনটন তো আছেই, যথেষ্ট খাঁটি ঘিয়েরও অভাব আছে৷ তার সঙ্গে রয়েছে এখানকার জলে পরিপাকগত দুর্বলতা অর্থাৎ এখানকার জলেতে তৈল বা ঘৃত অর্থাৎ উপসেচন বর্গীয় কোন বস্তুই সহজে ভাল ভাবে হজম হতে চায় না৷ রুটিতে ঘি–জলের ব্যবহার কমে যাবার এটাও একটা কারণ৷
ভেজানো (বা অঙ্কুরিত) ছোলা
ছোলার খোলা না ছাড়িয়ে জলে ভিজিয়ে ফুলিয়ে নিলে তাকে বলা হয় ‘সিক্তচনকং’৷ ছোলা কিছুটা গুরুপাক হলেও গুড়–আদার সঙ্গে ভিজে–ছোলা মিশিয়ে খেলে তা কিছুটা সহজ পাচ্য হয়৷ ‘লবণেন সহ সিক্তচনকং’–অর্থাৎ নুন দিয়ে ছোলা ভিজে কিডনী রোগের ঔষধ৷ যাঁরা কোন কর্মে উৎসাহ পান না, যাঁরা দীর্ঘসূত্রী বা অলস, তাঁরা গুড়, ছোলা–ভিজে ও আদা একসঙ্গে কিছুদিন খেলে কর্মোদ্যম ফিরে পাবেন৷ ঙ্ম যথেষ্ট খাদ্যগুণ–সমৃদ্ধ হওয়ায়, যাঁরা নিরামিষ আহার করেন, তাঁদের যদি পেটে সহ্য হয়, তবে সকালে নিয়মিতভাবে ভিজানো বা অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া খুবই উপকারী৷ ভিজে ছোলা পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে ৰ৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)