পূর্ব প্রকাশিতের পর,
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার মানব সমাজ, জীব-জড়-উদ্ভিদ সকলের কল্যাণে প্রবর্তন করেছেন নব্যমানবতাবাদ, উদ্ভাবন করেছেন মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব, সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান, ইতিহাস, বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়কে উদ্ভাসিত করেছেন নোতুন আলোকে৷ মাত্র ৮ বছর ১ মাস সময়কালের মধ্যে বাংলা, হিন্দী, সংস্কৃত, ঊর্দু, ইংরেজী প্রভৃতি ভাষায় ৫০১৮টি প্রভাত সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ করে পৃথিবীর ১৮২টি দেেেশ প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা করেছেন যা এক অনন্য নজির৷ শুধু তাই নয়, আনন্দমার্গ ও প্রাউটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় ভীত হয়ে পুঁজিবাদীদের প্রতিভূ শাসকবর্গ সংঘের ও সংঘপ্রধান মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওপর চালিয়েছে নৃশংস নির্যাতন, অকথ্য অত্যাচার৷ বহু সংঘ-কর্মীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিভিন্ন নারকীয় ঘটনায়৷ মার্গগুরুকে প্রায় আট বছর কারারুদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়েছে, কারাগারের অন্তরালে ঔষধের নামে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে৷ এই বিষ প্রয়োগের বিচার-বিভাগীয় তদন্তের দাবীতে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সুদীর্ঘ পাঁচ বছর চার মাসাধিক কাল অনশনরত ছিলেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা৷ এত কিছু করেও আনন্দমার্গকে ধবংস করা যায়নি---বরং পরমপুরুষের কৃপায় ও সংঘ কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ পৃথিবীর ১৮২টি দেশে আনন্দমার্গের সাধনা, সেবা ও ত্যাগের আদর্শের বিজয়রথ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে৷
আনন্দমার্গের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি সাধক-সাধিকার সঙ্গে মানর্গগুরু পরমশ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ছিল বৈয়ষ্টিক সম্পর্ক৷ আনন্দমার্গের প্রত্যেক সাধক-সাধিকা কোন না কোন মুহূর্ত্তে মার্গগুরুর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয়েছেন,জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর সাহচর্য অনুভব করেছেন৷ তাঁরই নির্দেশনায় ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে বিশ্বের প্রধান সেবা কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের অনুন্নত পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী বন-জঙ্গলে ঢাকা এলাকা বাগলতা মৌজায় রাঢ়ের সুপ্রাচীন আধ্যাত্মিকতার ঐতিহ্য সমৃদ্ধ তন্ত্রের পীঠস্থলে যার নাম আনন্দনগর৷ মার্গগুরু নিজেকে অভিহিত করেছেন ‘আনন্দনগরের আনন্দমূর্ত্তি’ নামে৷ আন্দনগরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নব্যমানবতাভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র, বালিকা বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হাসপাতাল, কুষ্ঠরোগী সেবাকেন্দ্র, দৃষ্টিহীন শিক্ষাকেন্দ্র, শিশু সেবাসদন, ছাত্রাবাস, পশু চিকিৎসালয়, কৃষি গবেষণাকেন্দ্র ইত্যাদি যেগুলির সুবিধা পুরুলিয়ার অত্যন্ত অনুন্নত অঞ্চলের মানুষজন পেয়ে উপকৃত হয়েছেন ও হচ্ছেন৷ একদিকে প্রতিটি মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে আনন্দমার্গের অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনা, অপরদিকে জাগতিক ক্ষেত্রে শোষণহীন সমাজ রচনার জন্যে প্রাউট দর্শনের প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ত্রিস্তরীয় সর্বাঙ্গীন উন্নতির পথে এগিয়ে চলার বিশাল কর্মযজ্ঞে লক্ষ লক্ষ আনন্দমার্গের সাধক আত্মনিয়োগ করেছেন পরমারাধ্য মার্গগুরুর নির্দেশে৷ মহাসম্ভূতি তারকব্রহ্ম পৃথিবীর বুকে মানবাধারে আবির্ভূত হন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে৷ একইভাবে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী পৃথিবীর মানুষকে নতুন জীবনের দিশা দেখিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলার সমস্ত পরিকল্পনা রচনা করে, সমগ্র সৃষ্টিকে আশার বাণী শুনিয়ে ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দান করে লক্ষ লক্ষ আধ্যাত্মিকতার অনুগামী আনন্দমার্গীদের ওপর শোষণহীন সমাজ রচনার দায়িত্ব অর্পণ করে ইহলোক ত্যাগ করেছেন মাত্র ৬৯ বছর বয়সে ১৯৯০ সালের ২১শে অক্টোবর৷ তাঁর মহাপ্রয়াণের পর সমগ্র পৃথিবীর ভক্তকুলের আগমন ও তাঁর দিব্য পার্থিব রূপ শেষ বারের মত দর্শনের জন্য ২৬শে অক্টোবর পর্যন্ত রেখে পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়৷ পার্থিব অস্তিত্বে আমাদের মধ্যে তিনি না থাকলেও সূক্ষ্ম মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে তাঁর আস্তিত্বিক অনুভূতি ভক্ত সমূদায় প্রতিনিয়ত অনুভব করেন ও সুদীর্ঘ কাল ধরে পৃথিবীর মানুষের ওপর তাঁর অশেষ করুণাধারা বর্ষিত হতেই থাকবে৷ আনন্দমার্গের ভক্তগণ প্রতি বৎসর ২১শে অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহাপ্রয়াণ স্মরণ করে ছয় দিন ব্যাপী এক নাগারে সিদ্ধমন্ত্র মহামন্ত্র ‘বাবা নাম কেবলম্’ কীর্ত্তন করেন, তাঁর পার্থিব অনুপস্থিতির যন্ত্রণাকে ভুলে তাঁরই চরণকমলে মন-প্রাণ ঢেলে আত্মসমর্পণ করেন ও সেই সঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আদর্শের প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করেন৷ তাঁর মহাসম্ভূতি রূপে পার্থিব শরীরে পৃথিবীতে আসা ও বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা করে যাওয়ার ফাঁকে যে পজিটিব মাইক্রোবাইটার প্রবাহ বিশ্ব সংসারে উৎসারিত করে দিয়ে গেছেন তার প্রভাবে যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে আধ্যাত্মিকতার পরিমণ্ডল বিরাজ করবে ও অতি শীঘ্রই সদ্বিপ্র নিয়ন্ত্রিত প্রকৃত ‘নোতুন পৃথিবী’ রচিত হবেই---যেমন করে তারকব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণের পরিচালনায় মহাভারত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তেমনি তারকব্রহ্ম শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নির্দেশনায় মহাবিশ্ব রচিত হবেই৷ আমাদের পরমপ্রিয় পরমপিতা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহাপ্রয়াণে আমাদের অন্তরের সমস্ত আকুতি সহ অশ্রুসিক্ত নয়নে ও যন্ত্রণাতপ্ত হৃদয়ে স্মরণ করি তাঁরই রচিত, সুরোরোপিত প্রভাত সঙ্গীতের পঙ্ক্তিগুলি---
তুমি এসেছিলে কাউকে না বলে’
না জানিয়ে গেলে চলে’৷
মোর আরও গীতি ছিল গাওয়ার,
আরও ছন্দে তালে৷৷
ভাবিতে পারিনি আমি,
এভাবে আসিবে তুমি৷
এমনি যাবে যে চলে’,
আঁখি জলে মোরে ফেলে৷৷
ধরার ধূলিতে যত
ফুল ফোটে শত শত৷
তাদের কোরক তলে
দিয়ে গেলে মধু ঢেলে৷৷আফ্রিকায় খাদ্য ও জল সংকটের জন্য
- Log in to post comments