সারা দেশে কোভিড্-১৯ সংক্রমণজনিত লক্ডাউন চলছে ৷ মানুষের জীবিকার রাস্তা বন্ধ৷ সাধারণ গরীব ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ অর্দ্ধাহারে, অনাহারে দিন অতিবাহিত করছে৷ লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের হাহাকারে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ ৷ তার মধ্যেও কোথাও কোথাও প্রচণ্ড ঘূর্ণীঝড়ে ঘরবাড়ী ধূলিসাৎ ৷ হতভাগ্য মানুষের দল আশ্রয়ের জন্যে হাহাকার করছে ৷ সারা দেশ জুড়েই বিপর্যস্ত অবস্থা ৷ জীবন ও জীবিকা দুইই চরমভাবে বিপন্ন৷ এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের উচিত দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিতভাবে জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো ৷ জাত-পাত-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সর্বপ্রকার নিরাপত্তার জন্যে সচেষ্ট হওয়া ৷
কিন্তু এ অবস্থায়ও আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিপন্ন মানুষদের সাহায্য দানের আশ্বাসের পরিবর্ত্তে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন ৷ গত ৯ই জুন আগামী নির্বাচনে বঙ্গবাসীদের কাছে টানতে দিল্লিতে বসেই ভার্চুয়্যাল সভা করে’ । তাঁদের পাশ করা বিভেদমূলক নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের (সি-এ-এ) স্বপক্ষে জোরদার ওকালতি শুরু করে দিলেন ৷ আর রাজ্যসরকার কিছু করেনি, আমরাই জনসাধারণের সব সমস্যার সমাধান করছি---এইসব জোরদার প্রচার শুরু করে দিলেন ৷ যদিও বাস্তব চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলে ৷
গত ২০শে মে দক্ষিণ বাঙলার ওপর দিয়ে ভয়ঙ্কর আমপান ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল ৷ এই ঘূর্ণিঝড়ে যে কীভাবে দক্ষিণ বাঙ্লার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিধবস্ত, তা প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘুরে দেখে গেছেন ৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও সব চাক্ষুষ করে গিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে ৷ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৷ কেন্দ্র থেকে সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু প্রাথমিকভাবে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা পাঠানোর পর আর কোনো সাহায্যই পাঠায়নি ৷ এই কাজটাই সর্বাগ্রে করা উচিত ছিল ৷ কিন্তু সে সমস্ত ভুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিলেন ৷
এখন কি নির্বাচনী প্রচারের উপযুক্ত সময়৷ এখন তো দেশবাসী বাঁচার জন্যে ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করছে৷ এখন তো তাদের দল-মত নির্বিশেষে মিলে মিশে ত্রাণ করার সময়৷
তাছাড়া, এই সি-এ-এ-এর বিরুদ্ধে লক্ ডাউনের আগে সারা দেশ বিক্ষোভ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল, সরকারের এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন নীতি বিজেপি দল ছাড়া কোনো দলই মেনে নিচ্ছে না৷ এমনকি বিজেপি জোটের মধ্যেও যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই যেমন নীতীশ কুমারও এর বিরুদ্ধে সরব৷ দেশের ও দেশের বাইরের কোনো মানবতাবাদী মানুষ বা মানবাধিকার গোষ্ঠী কেউই ‘মানছে না৷ তবু অমিত শাহ সি.এ.এ-য়ের স্বপক্ষে প্রচারে অনড় রইলেন৷ তার মানে সর্বত্র সি.এ.এ-য়ের দোসর এন.আর.সি লাগু করারও সংকল্পের কথা জানিয়ে দিলেন৷
আসলে অমিত শাহের কৌশল হল এইভাবে সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে জেহাদ্ ঘোষণা করে সংখ্যালঘুর সমস্ত বোটকে স্বপক্ষে টানার চেষ্টা৷
কিন্তু বাঙলার সচেতন মানুষ তাঁদের ‘ডিভাইড্ এ্যাণ্ড রুল’ পলিশির কূটকৌশলে ভুলবে না৷ বাঙ্লার বেশির ভাগ মানুষ বিভেদমূলক রাজনীতি চায় না৷ তারা জানে, সবাইকে নিয়ে মিলে মিশেই সমাজে উন্নয়ন ও শান্তি উভয়ই আনা যাবে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প দিয়ে বাঙালী ঐক্য ভাঙ্গা যায়নি--- যাবেও না৷
- Log in to post comments