বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ ৰেড়ে গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেৰে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন াপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী ৰলতে পারেন, ‘‘অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ এই উদ্বৃত্ত শ্রমিক দলকে ভিন্ন কাজে নিয়োগ করবার উপায় খুঁজে ৰের করৰে৷ আর এই উপায় খুঁজবার প্রচেষ্টাই বৈজ্ঞানিক প্রগতিকে ত্বরান্বিত করে দেৰে৷ সুতরাং পুঁজিবাদী কাঠামোতে যান্ত্রিকীকরণের ফল আসলে ভালই৷’’ এমতটা কিন্তু ৰাজে না হলেও বাস্তবোচিত নয় কারণ দ্রুত যান্ত্রিকীকরণের ফলে যত শীঘ্র মানব-শ্রম উদ্বৃত্তে পরিণত হয় তত শীঘ্র তাদের কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না৷ উদ্বৃত্ত শ্রমজীবীরা অনাহার ও দারিদ্র্যের ফলে তিলে তিলে ধবংস হয়ে যায়৷ তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক চুরি-ডাকাতি, দুশ্চরিত্রতা ও বিভিন্ন ধরণের সমাজ-বিরোধী কার্যের সাহায্যে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে৷ এ অবস্থাটা নিশ্চয়ই বাঞ্ছনীয় নয়৷ কিন্তু সামূহিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এ জাতীয় প্রতিক্রিয়া ঘটবার অবসর নেই৷ সেখানে যান্ত্রিকীকরণের অর্থ কম শ্রম---ৰেশী স্বাচ্ছন্দ্য, যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ হয়ে গেলে শ্রমিকদের কাজের সময়(working hours) অর্ধেক হয়ে যাৰে৷ অবশ্য কাজের সময় কমানো পণ্যের চাহিদা ও শ্রমশক্তির দিকে চেয়েই করতে হৰে৷
বিজ্ঞানের শুভ প্রয়োগের দ্বারা সামূহিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের কল্যাণই হৰে৷ এমনও হতে পারে যে যান্ত্রিকীকরণের ফলে হপ্তায় পাঁচ মিনিটের ৰেশী কাউকে মেহন্নত করতে হৰে না৷ অন্নবস্ত্রের চিন্তায় সর্বদা ৰ্যস্ত থাকতে না হওয়ায় তার মানস তথা অধ্যাত্ম-সম্পদের অপচয়ও হৰে না৷ খেলা-ধূলা সাহিত্য-চর্চ্চা তথা অধ্যাত্ম-সাধনায় সে অনেক ৰেশী সময় ব্যয় করতে পারৰে৷
J J J
শ্রমজীবীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য৷ তৰে এই আন্দোলন যাতে ঠিক খাতে বইতে পারে তার জন্যে উপর্যুক্ত ব্যবস্থার দরকার৷ সাধারণতঃ দেখা যায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণকারীরা শ্রমজীবীদের তাদের দাবী-দাওয়া তথা অধিকার সম্বন্ধে যতটা সচেতন করে দিতে চান সেই তুলনায় তাঁরা তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন করৰার কাজে কিছুই করেন না৷ এ অবস্থা দূর করৰার প্রকৃষ্ট পন্থাই হচ্ছে যে শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কর্মীদের অধিকার স্পষ্টভাবে স্বীকার করে নেওয়া৷ এ ব্যাপারে কেবল আদর্শবাদ প্রচার করে গেলে বা অধিক নীতিকথা শোণাতে থাকলে বিশেষ কিছু ফল হৰে না৷ ড্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সমূহের আর একটি বড় ত্রুটি হচ্ছে এই যে এর নেতৃত্ব ৰড় একটা প্রকৃত শ্রমজীবী বা কর্মীদের হাতে থাকে না৷ রাজনৈতিক নেতারা সবসময়েই দলীয় উদ্দেশ্য নিয়ে এতে মাতৰৰরী করতে আসেন৷ এঁদের লক্ষ্য থাকে দলীয় স্বার্থসিদ্ধির দিকে---শ্রমিক-কল্যাণের দিকে নয়৷
J J J
শিল্প, কঁষি, ৰাণিজ্য সৰ কিছুই যতদূর সম্ভব সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া দরকার৷ এজন্যে প্রয়োজনৰোধে সমবায় সংস্থাগুলিকে ৰিশেষ ৰিশেষ ধরণের সুবিধা দিতে হৰে---রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করতে হৰে ও ধীরে ধীরে বিশেষ বিশেষ ধরণের কৃষি, শিল্প বা ৰাণিজ্য ক্ষেত্র থেকে ব্যষ্টিগত মালিকানা বা ব্যষ্টিগত পরিচালনা-ব্যবস্থা রহিত করতে হবে৷
অতিরিক্ত ক্ষুদ্রত্ব বা ক্ষুদ্রত্ব ও তৎসহ জটিলতার জন্যে যে সকল সংস্থা সামবায়িক ভিত্তিতে পরিচালনা করা অসুবিধাজনক কেবলমাত্র সেইগুলিকেই ব্যষ্টিগত পরিচালনায় ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে৷ ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ৰৃহৎ অথবা ৰৃহত্ত্ব ও তৎসহ জটিলতার জন্যে যে সকল সংস্থা সামবায়িক ভিত্তিতে পরিচালনা করা অসুবিধাজনক সেইগুলির তার স্থানীয় রাজ্য সরকার (যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা) অথবা স্থানীয় লোক-সংস্থা (যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নয়) নিতে পারে৷ কেন্দ্রীয় সরকার বা বিশ্বরাষ্ট্রীয় সরকারের (বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে) পরিচালনায় শিল্প, কৃষি বা বাণিজ্য সংস্থাগুলি না থাকাই বাঞ্ছনীয় কারণ সেরূপ ক্ষেত্রে উক্ত সংস্থাগুলির পরিচালনার ব্যাপারে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ সুযোগ তো থাকেই না, পরোক্ষ সুযোগও বড় একটা থাকে না৷ আর তাই পুঁজিবাদী সুবিধাবাদী বা মতলববাজ রাজনীতিকেরা সহজেই সেগুলিকে হাতিয়ে নিতে পারে ও জনসাধারণের অর্থের অপচয় ঘটাতে পারে৷