Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

(১৪) এককালে মানুষের ধারণা ছিল যে কোমরে ঘুনসি বাঁধলে শিশুর আয়ু ৰাড়ানো যায়---ভূত-প্রেত তাড়ানো যায়৷ তাদের ধারণা ছিল ঘুনসি নাকি রোগ-শোক ভূতপ্রেতকে খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের কুপোকাৎ করে৷ তাই ‘ঢুন্ট্‌+‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি যোগারূঢ়ার্থ হচ্ছে ‘ঘুনসি’৷

(১৫) মানুষ আরামের অন্বেষণ করে৷ তাই এই অর্থে ‘ঢু+‘ড’ করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাই তার একটা অর্থ হ’ল আরামের উপকরণ (ভাবারূঢ়ার্থ), যোগারূঢ়ার্থে ‘গদি’৷ গদি ৰলতে ৰোঝায় যা শয়নকে বা উপবেশনকে আরামদায়ক করে দেয়৷ খাটের তোষকের নীচে যে গদি ব্যবহার করি বা চেয়ারের ওপরে যে গদি ব্যবহার করি তার জন্যে ‘ঢ’ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে৷ উত্তর ভারতে সাধারণতঃ ‘গদ্দা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়৷ তৰে ‘গদ্দী’ শব্দের ব্যবহার যে নেই এমন নয় ৷ তৰে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ‘গদ্দী’ বলতে দোকানদার যেখানে বসে তার কাগজপত্র দেখে বা হিসেব নিকেশ করে সেই স্থানটি অর্থাৎ অফিস৷ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অফিসকেও ‘গদ্দী’ ৰলা হয়৷

(১৬) ‘ঢৌক’ ধাতুর অর্থ ঢোকা বা ঢোকানো (ণিজন্তে)৷ ‘ঢৌক’ ধাতুর সাধারণ ও ণিজন্ত দুই রূপই এক৷ ‘‘তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ো, ঝড় আসছে’’ ‘‘সাপের গর্তে হাত ঢোকানো বিপজ্জনক’’ ‘‘তিনি নিজে যে অফিসে ঢুকেছেন, ছেলেকেও সেই অফিসেই ঢুকিয়েছেন’’৷ এই ‘ঢৌক’ ধাতুর উত্তর ‘অনট’ প্রত্যয় করে পাই ‘টৌকন’, মানে কাউকে কিছু সামনের দিকে এগিয়ে দেওয়া যে জন্যে ফার্সী ক্রিয়া হচ্ছে ‘পেশ্‌কার’৷ অদালতে যে লোকটি কাগজ-পত্র, ফাইল কালেক্টর বা জজসাহেবের সামনে এগিয়ে দেয় তাকে ৰলি ‘পেশ্‌কার’---সংস্কৃতে ৰলতে পারি ‘ঢৌকক’৷ ‘ঢৌকন’ শব্দের আগে ‘উপ’ উপসর্গ যোগ করে যে ‘উপঢৌকন’ শব্দ পাচ্ছি তার মানে উপহার৷ তাই ‘ঢৌক’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি মানে ‘উপহার’৷

(১৭) ‘ঢৌক’ ধাতু+ ‘ড’ করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাচ্ছি তার অপর অর্থ হচ্ছে নৈবেদ্য বা অর্ঘ্য (‘অর্ঘ’ মানে দাম৷ যেমন ৰেশী দামীকে ৰলৰ ‘মহার্ঘ’৷ তোমরা ‘মাগ্‌্‌গীভাতা’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত৷ ‘মাগ্‌গী’ শব্দটি ‘মহার্ঘ’ থেকে এসেছে৷) প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী মানুষ দেবতাকে যে ভোজ্য বস্তু দেয় তাকে বলা হয় নৈবেদ্য আর যে অভোজ্য বস্তু দেয় তাকে বলা হয় অর্ঘ্য৷ ঠিক তেমনি মানুষ দেবতার কাছ থেকে যে ভোজ্য বস্তু পায় তাকে বলা হয় প্রসাদ আর দেবতার কাছ থেকে যে অভোজ্য বস্তু পায় তাকে ৰলা হয় নির্মাল্য৷ ‘ঢ’ বলতে অর্ঘ্য-নৈবেদ্য দুইকেই ৰোঝায়৷ সীমিত ক্ষেত্রে অভোজ্য বস্তুকেও ‘প্রসাদ’ ৰলা হয়৷ যেমন প্রসাদী ফুল (প্র-সদ্‌+ ঘঞ= প্রসাদ)৷                                              (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)