আমার বাংলা

লেখক
একর্ষি

পূর্বপ্রকাশিতের পর

*বাঙালীস্তানে শিল্পের উন্নতির পাশাপাশি বাণিজ্যেরও প্রসার হয়েছিল৷’’ স্থলপথে ও জলপথে বাণিজ্য চলত ৷ ‘‘খুব প্রাচীন কাল হইতেই সমুদ্রপথেও বাঙলার ব্যবসা বাণিজ্য চলিত৷’’ ---সুক্ষ্ম মসলিন কাপড়, মুক্তা ও গাছ -গাছড়া এদেশ হইতে চালান যাইত ---’’ তমলুক ছিল প্রধান বন্দর৷’’ এখান হইতে বাঙালীর জাহাজ দ্রব্যসম্ভারে পরিপূর্ণ হইয়া পৃথিবীর সুদুর প্রদেশে যাইত এবং তথা হইতে ধন ও দ্রব্যাদি সংগ্রহ করিয়া ফিরিত৷---এইরূপ শিল্প-বাণিজ্যে প্রসারের ফলে বাঙ্গলার ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্য বাড়িয়াছিল৷ ---’’ ব্যবসায়-বাণিজ্যে উন্নত বাংলাদেশে ‘কড়ি’র ব্যবথা ছিল৷ বলাবাছল্য, ‘নৌ-শিল্পের কথা হইতেই ধনোৎপাদনের তৃতীয় উপায় ব্যবসা -বাণিজ্যের মধ্যে আসিয়া পড়া যাইতে পারে এ পর্যন্ত ভূমিজাত ও শিল্পজাত যে সব দ্রব্যাদির কথা বলিয়াছি তাহাই ছিল ব্যবস বাণিজ্যের উপকরণ৷ --- পান, সুপারি নারিকেল ও লবণের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য ছিল৷’’

ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় অতীতকালের বাঙালীর উপার্জনের পথ হিসেবে তুলে ধরেছেন -‘‘রাজপাদপোজীবী (সরকারী কর্মচারী) উপার্জন করতেন শ্রম ও বুদ্ধির বিনিময়ে৷ শিক্ষক ও পুরোহিত উপার্জন করতেন শ্রম ও বুদ্ধির বিনিময়ে৷ সমাজের তথাকথিত হেয়কর্ম ইত্যাদি যাঁহারা করিতেন, তাহারাও যতটুকু পরিমাণে নিজ নিজ বিশেষ বুদ্ধির মধ্যে আবদ্ধ থাকিতেন ততটুকু পরিমাণে ধনোৎপাদনের দায় ও কর্তব্য হইতে মুক্ত ছিলেন৷ কিন্তু ধনের অংশ তাঁহারা ভোগ করিতেন শ্রম ও বুদ্ধির বিনিময়ে নিজ নিজ সুযোগ ও অধিকার অনুযায়ী৷’ ---‘‘প্রাচীন বাঙলায়---ধনোৎপাদনের তিনটি উপায় ----কৃসি, শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য! ইহার মধ্যে কৃষি ও বাণিজ্য প্রধান আজ পর্যন্ত বাঙলাদেশে কৃষিই প্রধান ধনসম্বল তাহার পরেই শিল্প৷ এই কৃষি ও শিল্পজাত জিনিস পত্র লইয়া দেশে বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্যের ফলে উৎপাদিত ধনের বৃদ্ধি এবং দেশের বাহির হইতে নূতন ধনের আগমন হইত৷ এই তিন উপায়েই আহৃত যে ধন তাহাই প্রাচীন বাঙলার ধন-সম্বল৷ (তথ্যসূত্র সূত্র--- লেখমালা, বগুড়া জেলায় প্রাপ্ত সুপ্রাচীন প্রস্তর লেখা খণ্ড, রামচরিতমানস ) ---‘কার্পাস ও রেশম বস্ত্র যে বাঙলার শিল্পজাত দ্রব্য ছিল এবং সুদুর রোম দেশ পর্যন্ত তাহা রপ্তানি হইত , সর্বত্র তাহার আদর ও কদর ছিল এ কথা আমরা খ্রীঃপূর্বাব্দ প্রথম শতকে অজ্ঞাত নামা গ্রন্থকার বর্ণিত Periplus of the Erythrean’ অথবা কৌটীল্যের অর্ধশাতর, কিংবা চর্যাগীতি গ্রন্থ হইতে কিছু কিছু জানিতে পারি৷ ---তবে অনেক খনিজ, কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের সম্বন্ধেই এ কথা’ বলা যাইতে পারে৷ ‘‘--- গঙ্গা ও তাম্রলিপ্ত যে মস্ত বড় দুইটি বন্দর ছিল এ খবর পেরিপ্লাস - গ্রন্থ, টলেমির বিবরণ, জাতক গ্রন্থ ফাহিয়েন ও ইয়ুয়ান - চোয়াঙের ভিতর পাওয়া যায়!’’

কৌশীদ ব্যবস্থা (ব্যাংক ব্যবস্থা)---কোশীদ-ব্যবস্থা (ব্যাঙ্ক-ব্যবস্থা) যে কোন দেশেই মানুষের অর্থনৈতিক জীবনের , ও সাধারণ অর্থনীতির একটা অপরিহার্য অঙ্গ৷ কিন্তু আধুনিক যে কৌশীদ ব্যবস্থার পরিষেবা মূলক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তা সেকালের বাঙ্গলায় ছিল না , তবে কৌশীদ ছিল৷ বৈদিক যুগে কৌশীদের প্রমাণ না থাকলেও বৌদ্ধোত্তর যুগে তা ছিল৷ ভারতের অন্যান্য স্থানের মত বৃহত্তর বঙ্গেতেও ছিল ৷ তখন তা পরিচালিত হ’ত ব্যষ্টিগত মালিকানায় ও ব্যষ্টি প্রয়াসে, কখনওবা গোষ্ঠীগত ভাবে৷ অবশ্য সেকালে একালকার মত সীমিত দায়িত্বে কৌশীদ গড়বার প্রথা ছিল না৷ তবে ব্যষ্টিগত ভাবে রাজকীয় স্বীকৃতিতে দায়যুক্ত হয়ে কৌশীদ গঠন করা হ’ত বাঙ্গলাতেও ব্যষ্টিগত দায়িত্বের কৌশীদ ও গোষ্ঠীগত দায়িত্বের কৌশীদ দুই-ই ছিল ৷ রাজকীয় স্বীকৃতিতে গোষ্ঠাগত কৌশীদ ও পরিচালনা করতেন বাঙলার সুবর্ণ বণিকেরা৷ এই সকল কৌশীদ পরিচালকদের বলা হ’ত ‘পাত্তিনক’ (পত্তন+ ইক)৷ অবশ্য পাত্তিনক বলতে ব্যষ্টিগত কৌশীদ পরিচালকদের বোঝাত৷ এই পাত্তিনকেরা রাজকীয়-স্বীকৃতি-প্রাপ্ত কৌশীদের পরিচালনা করতেন জনগণের স্বার্থের কথা ভেবে৷

বাঙলার সুবর্ণবণিকেরা যে গোষ্ঠাগত ভাবে কৌশীদ পরিচালনা করতেন তাঁদের বিচক্ষণতার জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল৷ দেশের স্বার্থকে সামনে রেখেই তাঁরা কাজ করতেন৷ রাজা, রাষ্ট্র ও ব্যষ্টি বিশেষ তাঁদের কাছ থেকে কর্জ নিতেন ও কুশীদ সহ যথাকালে ফেরৎ দিতেন৷ (সূত্র বাঙ্গলা ও বাঙালী ---শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷)

বঙ্গমহাভূমিতে প্রায় সর্ববিধ সম্পদের সহাবস্থান- ও প্রাচুর্য থেকে এই সিদ্ধান্তেই আসা যায় যে এই বিশিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম স্বতন্ত্রগোত্রীয় ধনশালী অঞ্চল, নানা ব্যতিক্রমী গুণ- বৈশিষ্ট্যে গৌরবান্বিত৷ বলাবাহুল্য, এটা একটা বিশ্বের ভারসাম্য সমৃদ্ধির ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশ যা বিশ্বে একরকম বিরল৷বাঙলার গৌরবে আবেগ উদ্বেলিত আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন বললেন--- ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব ভাগে উত্তরে আকাশ স্পর্শী হিমাদ্রি শৃঙ্গ দক্ষিণে তমলুক সমাশ্রিত বিশাল বারিধিবক পূর্বে আরাকানের নিবিড় অরণ্য পশ্চিমে মগধের সীমান্ত ছোটনাগপুরের কান্তারভূমি--- এই চতুঃসীমার মধ্যবর্তী বিপুল সমতলক্ষেত্র চিরসবুজ নিত্য-নূতন শ্রী শষ্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার ---কুন্দ অপ্রাজিতা সন্ধ্যামালতি নবমল্লিকা ও ‘পদ্ম্যোৎপলঝষাকুলা’ শত দীর্ঘিকার পুণ্যতীর্থ৷

আনুমানিক পাঁচ হাজার বছরের অধিক অতীত থেকে প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাঙলার সম্পদ ও বাঙালীর অর্থনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে বাঙলার প্রকৃতিগত কতগুলো সাধারণ অর্থনৈতিক পরিচয় সামনে আসে৷ তবে এই অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের দিকে নির্দেশ করার আগে বাঙালীর সহজাত স্বভাব, জীবনধর্ম জীবনশৈলী বা জীবনধারা প্রকৃতি বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত জীবনমুখিতা লক্ষ্য করা দরকার৷ গ্রামে গাঁথা নদীমাতৃক বঙ্গভূমি পল্লী-পল্লবিত৷ হাতের নাগালে অল্প আয়াসে আসে জীবনধারণের রকমারি প্রয়োজনীয় প্রচুর উপকরণ আর যে দিকে দু’চোখ যায় কান্ত-কোমল-পেলব প্রকৃতি সুদূরের পিয়াসী মন হয় অন্তর্মুখী-৷ তাই সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন৷ দুবেলা পেটপুরে খেতে পাওয়া একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই, শীত-গ্রীষ্মে-লজ্জানিবারণে পরিধেয়, ভেষজবৈদ্যে রোগ নিরাময় অপ্রাতিষ্ঠানিক জনশিক্ষা বয়ে চলে আত্মাভিমুখী (তন্ত্র পোষিত) জীবনস্রোত৷ প্রকৃতিগত ভাবে একে পোষণ করতেই গড়ে ওঠে বাঙলার অর্থনৈতিক কাঠামো, তথা বাঙালীর অর্থনৈতিক জীবন৷ বাস্তবকে অস্বীকার করে নয়, বাস্তবকে মন্থন করেই চলা৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাঙলার অর্থনীতির কতগুলো ধরণ তৈরী হয়ে যায়৷ যথা---এই ধরণগুলি নিম্নরূপ---

এক . . .প্রাচীন বাঙলা ছিল কৃষি প্রধান, জনবিন্যাসও মূলতঃ গ্রামীন, সভ্যতাও গ্রামীন সভ্যতা৷ সারা জীবন বেঁচে থাকতে হলে যা যা প্রয়োজন তা সবই গ্রামেই পাওয়া যেত, বাইরের নির্ভরতা ছিলনা৷ অর্থাৎ সমকালীন যুগোপযোগী অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিটি গ্রামই ছিল স্বয়ম্ভর৷ আবার সামগ্রিক ভাবে সমকালীন সব ধরণের প্রয়োজনীয় দ্রব্য দেশের মধ্যেই পাওয়া যেত৷ তাই সামগ্রিক ভাবে বাঙলা ছিল স্বয়ম্ভর অর্থনীতির দেশ৷

দুই. বাঙলার প্রতিটি জনপদ যদি স্বয়ম্ভর স্বভাবের হয়ে থাকে তাহলে বাঙলার অর্থনৈতিক বুনিয়াদটাও ছিল বিকেন্দ্রিত৷ অর্থাৎ বৃহৎবঙ্গ ছিল বিকেন্দ্রিত অর্থনীতির দেশ৷

তিন . কৃষি প্রধান অর্থনীতির বাঙ্গলায় কৃষির পাশাপশি কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি সহায়কশিল্প গড়ে উঠেছিল৷ পণ্ডিত-বদ্যি- বণিকের মত কিছু পেশা ছিল কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সামগ্রিকভাবে শ্রমবিন্যাসে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে একটা ভারসাম্য বিরাজ করত (মোটা মুটি ৪০ শতাংশ করে)৷ শিল্পের ধরণটা - ঘরে ঘরে ক্ষুদ্রায়তন-কুটির শিল্প, বন্দর অঞ্চলে বড় মাপের নৌ-শিল্প, সমুদ্র উপকূলে এলাকা জুড়ে লবণ শিল্প৷ আর ছিল এখনকার পরিভাষায় ‘পার্ট-টাইম জব’ পশুপালন, হাঁস মুরগি পালন, সূচী শিল্প ইত্যাদি৷ আধুনিক পরিভাষায় একে বলে সন্তুলিত অর্থনীতি --- ব্যাল্যান্সড ইকোনমি৷ অর্থাৎ ‘বঙ্গবেসিনের অর্থনীতি ছিল ইকনমি’৷ কাজেই এখানে কাজের অভাব, ভাতের অভাব ছিল না!

চার. জমির মালিক রাজা বা সম্রাট বা সুলতান বা শাসক, তাঁদের ভূমি রাজস্ব ছিল সঙ্গে ছিল জমির ওপর প্রজাস্বত্বও৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতাটা কিন্তু ছিল৷

পাঁচ. বলিষ্ঠ অর্থনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে বাজার৷ একটা দেশের আভ্যন্তরীন বাজার আর একটা দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজার৷ বাঙালীস্তান একটা বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চল, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ৷ কাজেই আভ্যন্তরীন বাজারও বিশাল৷ এই বাজারে কৃষিজ-শিল্পজ-বনজ দ্রব্য বিকানোতে সমস্যা ছিল না৷ বিলাস দ্রব্য বা সৌখীন দ্রব্য সীমিত ছিল, সিংহ ভাগই নিত্যজীবনচর্যা মুখী, এবং রপ্তানি দ্রব্যও ছিল একই ধরণের৷ তাছাড়া কিছু কিছু শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন দেশের রাজা-জমিদার-শ্রেষ্ঠী-ও অভিজাত পরিবার সমূহ৷ প্রবাদ বলে বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’, দেশে সমৃদ্ধি আসে কিন্তু রপ্তানি নির্ভর শিল্প-বাণিজ্য দীর্ঘায়ু হয়না৷ যে কোন কারণে যে কোন সময়ে সেই বাণিজ্যের কাঠামো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে পারে৷ নিজস্ব মজবুত আভ্যন্তরীণ বাজার অর্থনীতিকে নির্ভরতা দেয়, শক্তিশালী করে, আর বৈদেশিক বাণিজ্য ধনবৃদ্ধি ঘটায়, এবং (আধুনিক ভাবনায়) বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তথা উদ্বৃত্ত বাণিজ্য সহায়ক হয়৷স্বাস্থ্যকর অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে লাভজনক সরাসরি দ্রব্য বিনিময় ট্রেড৷ বাঙলার বহিঃবাণিজ্যের প্রকৃতিই ছিল মূলতঃ বার্টার ট্রেড---বার্টার ট্রেড৷

একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশ দীর্ঘকাল, নবাবী আমলের সূচনাবধি বিশ্বের জি.ডি.পি.’র ৩৮ শতাংশ পূরণ করত একমাত্র ‘সুবে-বাঙলা’৷

ছয়. বাঙলার রাজশক্তি একটাই তন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, তা হচ্ছে প্রজাবাৎসল্য-সিংহাসনে উপবেসনে প্রজাদের সমর্থন রাজা প্রজায় আত্মিক যোগ৷ ফলে বাঙলার অর্থনীতিটা দাঁড়িয়ে ছিল কল্যাণমুখী, জনস্বার্থমুখী, মুনাফামুখী ছিল না৷ প্রজার সুখেই রাজার সুখ প্রজাদের ঐশ্বর্য সমৃদ্ধিতে রাজারও-ধনৈশ্বর্য-সমৃদ্ধি৷ তবে স্বৈরাচারী-অত্যাচারী রাজা কী ছিল না? এখানে দুটো ব্যাপার ছিল একটা হল রাজা অত্যাচারী-পীড়নকারী হলে প্রজা বিদ্রোহ ঘটত, রাজা সিংহাসনচূ্যত হ’ত৷ রামপালের কাহিনী ইতিহাসে এখনো টাটকা৷ তাছাড়া রাজা অত্যাচারী হলে দেশ প্রজাশূন্য হলে, রাজা হওয়ার মানে হয় না৷ তাই ভয়টাও ছিল৷ আবার রাজাদের উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক প্রজা পত্তনের রেওয়াজও ছিল৷ (ক্রমশঃ)