আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনা কে কেন্দ্র করে যে নোংরা বাঙালী বিদ্বেষী আন্দোলন হচ্ছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাঙলার অতীতকে ফিরে দেখা৷
ভারতের স্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষুদ্ধ মনে জিঙ্গাসা করতে হবে সেই অখণ্ড বাংলার জনবহুল অংশগুলি অসমে, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছিল কেন? সেগুলি কোথায় গেল? সেদিন কংগ্রেসী নেতারা তো বলেছিলেন স্বাধীন হলে বাংলা থেকে কেটে নেয়া অংশগুলি আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে৷ কিন্তু অদ্যাবধি সেগুলি কি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে? ৭৫ বছর হল কেন্দ্রে একাধিক দলীয় সরকার এসেছে আর রাজ্যেও এসেছে একাধিক সরকার৷ তারা এ ব্যাপারে কি কোন চিন্তা ভাবনা করেছে? মনে হয় করেনি কারণ তারা কেউই প্রাণ দিয়ে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেনি৷ ভারতের স্বাধীনতা লাভ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে এদেশীয় কিছু অনুগত ব্যষ্টিদের মধ্যে চুক্তি করে দেশকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার এক কলঙ্কিত অধ্যায়৷ পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন ডাঃ বিধান রায় কি কোন ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেছেন দিল্লির কংগ্রেসী নেতাদের সঙ্গে?
পরবর্ত্তীকালে বাম শাসন প্রায় ৩৪ বছর চলেছে৷ তারাও তেমন কিছু করার দিকে মন দেয়নি ৷ তারা গণতন্ত্রের ল্যাডারে চেপে তাদের কমিউনিজমকে বিস্তারের চেষ্টা করেন আর দলীয় সিদ্ধান্তকে কৌশলে বলবৎ করতে দার্জিলিং এসে সুবাস ঘিসিংকে টেনে এনে গোর্খাদের তোল্লা দিয়ে যায়, বাংলার কথা তাদের মনেই ছিল না৷ ডাঃ রায়ের আমলে অসমে বঙ্গাল খেদা আন্দোলন হয়৷ এই রাজ্যের কংগ্রেসীরা দিল্লিতে ও রাজ্যে টু শব্দটি করেনি কারণ নেহেরুজী ছিলেন৷ এটাই হলো নোংরা দলবাজির কুফল৷ এরা অর্থাৎ দলগুলো মানুষের কথা ভাবে না তারা সর্বদা দেখে দলের স্বার্থ সিদ্ধি কতটা হচ্ছে৷ কিন্তু বাংলার সেই দুরন্ত সন্তান রাম চ্যাটার্জী৷ তাঁর দল নিয়ে অসম সীমান্তে যান সেখানে তাঁকে ও তাঁর দলকে আটকে দেয় এই রাজ্যের সরকার৷ দিল্লিতে পার্লামেন্টে যখন প্রশ্ণ ওঠে তখন নেহেরু বলেন--- পশ্চিম বাংলার এমপি রা তো নীরব, মুক৷ পরে জনতা সরকারের সময়ও কোনই প্রতিকার হয়নি বাংলার অংশগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়ার৷ তবে হ্যাঁ ডঃ রায়ের সময় বাংলার বনাঞ্চল ও ধানবাদ বিহারকে দেওয়া হয় আর চির দরিদ্র সমস্যা সংকুল পুরুলিয়াকে বাংলায় ঢোকানো হয়৷ যেটি ছিল গোদের উপর বিষফোঁড়া৷ উদ্বাস্তুদের নিয়ে এক জঘন্য খেলা কংগ্রেস খেলল৷ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত৷ উদ্বাস্তুদের দণ্ডকারণ্যে এদিকে ও দিকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়৷ কিন্তু তাঁরা থাকতে না পেরে ফিরে আসে এই বাংলায়৷ জ্যোতিরা তাদের উপর নির্যাতন চালায়৷ পঞ্জাবের উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান হয় কিন্তু বাংলার সমস্যা আজও জিইয়ে রাখা হয়েছে৷ এটাই হলো এদেশের কেন্দ্র সরকারে অবদান বাঙালীদের প্রতি! তবে জনতা দলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই-বাম আমলে দার্জিলিং গিয়ে গোর্খাদের বলেন নেপালে গিয়ে গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন করগে এদেশে নয়৷ তৃণমূল তাদের মতো চলছে আর বিশ্ববঙ্গের স্বপ্ণ দেখছে৷ আবার তাদের নেত্রী কটাক্ষ করেই বলে যে এরা বাঙালী আর আমরা কি কাঙ্গালী! এমন ধরণের তাচ্ছিল্য উক্তি! দেশ যখন ভাগ হয় তখনই বলা হয় অখণ্ড বাংলায় যাদের জন্ম তারা যদি এদেশে ভারতে আসে তাদের আশ্রয় দেওয়া হবে৷ সে ঘটি বা বাঙাল যেই হোক হিন্দু কি মুসলমান৷ কিন্তু সেই কথা বর্ত্তমানে শাসকগণ ভুলে গেছে! তাছাড়া যারা ৬০,৬৫,৪০,৪৫ বছর আগে এসে এখানে বাস করছে৷ এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছে৷ বৃদ্ধ বৃদ্ধা হয়ে পড়েছে৷ তাদের উপর কেন নির্মম জুলুম চলে সেটাই বোঝা দায়৷ এমন করে দেশ ভাগ করতে কে বলেছিল? নেতাজী বাইরে থেকে বার বার গান্ধীজীকে অনুরোধ করেন ধৈর্য্য ধরে আন্দোলন চালিয়ে যেতো, এটাই রাজনৈতিক চাল বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে ধবংস করে লোকসংখ্যা কমানোর৷ এদেশে সেটাই চলছে৷ বাঙালীর সংখ্যা যদি বাড়ে তা হলো এই একটুকরো বাংলায় এমপি, এম,এল,এ বাড়বে৷ তাতে দিল্লিতে হিন্দীওয়ালাদের ঘুম ছুটে যাবে৷ তাছাড়া ইংরেজের স্বার্থান্বেষীদের মুখে ছাই দিয়ে পৃথিবীতে তো বর্ত্তমানে বাংলাভাষা ও বাঙালী জাতির একটা পৃথক স্বীকৃতি হয়েছে ইউ.এন.ওতে৷ এটাই এদেশের হিন্দু মুসলমান বাঙালী একটা আশার কথা৷ ভুলে গেলে চলবে না ঢাকার ভাষা আন্দোলনে এই পশ্চিম বাংলার দু’জন বাঙালী সন্তান ছিলেন যাঁরা বাংলাভাষা আন্দোলনে শহীদ হন৷ এই বাংলা ভাষার জন্য অসমে ১১ জন প্রাণ দেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন৷ বরাক উপতক্যায় অসমের বাংলাভাষী ভাই-বোন গত ভাষা আন্দোলনে শিলচরে ১৯৬১ সালে ১৯শে মে শহীদ হন৷ জওহরলাল সেদিন অসমেই ছিলেন৷ এঁদের আত্মত্যাগের সংখ্যা পূর্ব পাকিস্তানের শহীদদের থেকে অনেক বেশী কিন্তু দিল্লির স্বৈরাচারী শাসকগণ বাংলাকে কি অদ্যাবধি রাজ্যের অংশ ফিরিয়ে দিয়েছে! দেয়নি বরং সকল দিক থেকে চরম অত্যাচার করে পশ্চিমবাঙলার বাঙালী জনগোষ্ঠীর ওপর আর্থিক সামাজিক দিক থেকে চরম শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে৷
তাই এরাজ্যের বাঙালীদের আর কোন দলের দিকে না তাকিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাঁচার জন্য সত্য সত্যই সচেতন হতেই হবে৷ দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে এই ভারতের যুক্ত রাষ্ট্রের পশ্চিম বাংলার জনগণ চিরকালই বঞ্চিত শোষিত হয়ে আসছে৷
জাতীয় দলগুলি শুধু মিথ্যাচারিতার জন্য দোষী হয়ে গেছে৷ তারই পরিবর্ত্তে বেশ কিছু আঞ্চলিক দলছুট দলের জন্ম হয়েছে৷ তারাও সেই অতীতে দলগুলির পথ ধরেই ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জিতে একইভাবে শোষণ করছে৷
তাই বাঙালীকে বাঁচতে আরো সচেতন হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ সমাজগুলিকে সজীব করে সারা ভারতে একটা তীব্র সাড়া নিয়ে আসতে হবে৷ সেটা হবে সততা নিষ্ঠা ও সেবার আর মানবতা হবে মূলধন, কোন জাত-পাত সাম্প্রদায়িকতার রং সেখানে থাকবে না৷ তবেই হবে বাংলা তথা ভারতের মুক্তি ও প্রকৃত স্বাধীনতা প্রাপ্তি৷ সমাজের আন্দোলনে নবজাগরণের আন্দোলন৷ এ কাজ বাঙালীকেই করতে হবে সারা পৃথিবীর জন্যে৷ কারণ বাঙলা জাগলে ভারত জাগবে আর ভারত জাগলেই জাগবে পৃথিবী৷
- Log in to post comments