তোমরা জান অর্থনৈতিক জগতে মোদ্দা কথা হচ্ছে দু’টো । একটা হচ্ছে মুদ্রাকে বহতা রাখতে হবে, টাকাকে যতটুকু সময় অচল অবস্থায় রাখছ অর্থাৎ তার ক্রয়ক্ষমতাকে যতটুকু সময়ের জন্যে কাজে লাগাচ্ছ না, বুঝতে হবে ততক্ষণ তুমি আর্থিক জগতের ক্ষতি করে’ চলেছ । দ্বিতীয় কথা হচ্ছে টাকা প্রত্যক্ষ্যভাবে ও টাকার সুদ অপ্রত্যক্ষভাবে ধনকেন্দ্রিক বৈষম্য ডেকে আনতে পারে যদি তা সন্তুলিত ভারসাম্যের একক হবার যোগ্যতা হারায় । আর্থিক জগতের এই মূল দুটি কথা আংশিকভাবে বিস্মৃত হলে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা (Economic Depression) দেখা দেবে ।
যে সকল রাষ্ট্র বা অর্থনৈতিক প্রকোষ্ঠ নিজের আর্থিক মানকে ঠিক অবস্থায় রেখেছে সেও যদি অন্য দেশের সঙ্গে বিত্তমান সংক্রান্ত আদান প্রদানে রত থাকে তবে তাকেও পূর্ণভাবে না হোক আংশিকভাবে এই অর্থনৈতিক মন্দার অংশভাগ হতে হবে । কেউ যদি অন্যান্য দিক দিয়ে ঠিক আছে কিন্তু অন্য কোন অ্রর্থনৈতিক মন্দাক্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সম্পর্কও না রাখে, কিন্তু নিজের অভ্যন্তরীণ সম্পদকে কোন অন্-আয়সূচক(non-yielding nature) লগ্নীতে বা ব্যয়েতে রত থাকে—যেমন অতিরিক্ত মাত্রায় সামরিক খাভে খরচ ...অতিরিক্ত মাত্রায় অট্টালিকা নির্মান, আমোদ ও ভোগসৃচক ব্যয়...এই সকল ব্যয়ের বিনিময়ে কোন আয় নেই । এই অবস্থায় ওই সকল দেশকেও অর্থনৈতিক মন্দার অংশভাগী হতে হবে ।
তবে কোন দেশ যদি অর্থনৈতিক লগ্নি সংক্রান্ত কোন লেনদেন প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে না করে’, কেবল বিনিময় প্রথায়(barter trade)বাণিজ্য করে’ থাকে তবে তাকে এই অর্থনৈতিক মন্দায় বড় একটা ভুগতে হবে না । কেবল এইরূপ ক্ষেত্রে প্রতি আর্থিক বছরের অন্ত মুহূর্তে লেনদেনের অসাম্যঘটিত অত্যল্প মাত্রায় অর্থনৈতিক মন্দা ঘটে থাকে যা সহজে অনুভূত হয় না ।
এই ধরনের মন্দা তিন বছরে খুব অল্প মাত্রায় অনুভূত হয় আর ত্রিশ বছরে আরও একটু বেশী মাত্রায় অনুভূত হয় ও সাড়ে তিনশ’ বছরে আরো বেশী মাত্রায় অনুভুত হয় ।
(১৭ই জানুয়ারী, ১৯৮৮, কলকাতা)