ভারতের সংবিধানে তিন নং ধারা অনুযায়ী যে রাজ্যগুলি তৈরি হয় মূলতঃ ভাষা ভিত্তিক৷ ব্রিটিশ আমলের ইংরেজি ভাষা ভারতীয়দের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল তার সঙ্গে একটি জগাখিচুড়ি ভাষা হিন্দি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল৷ যে ভাষাটায় ব্যাকারণের কোনো বালাই নেই৷ আর লিঙ্গের অস্পষ্টতা ভাষায় বিকৃত করেছে৷
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার অতীতের ভারতীয় ভাষার বুনিয়াদকে ধবংস করে একটি হিন্দি নামক জগাখিচুরি ভাষাকে সারা ভারতে চাপাতে চাইছে৷ আজ অসমে যারা নিজেেেদর স্থানীয় অধিবাসী পরিচয় দিচ্ছেন তারা আসলে মঙ্গোলীয়ন বংশধর৷ তাদের চেহারা চিনা, জাপানী বা ইন্দোনেশিয়ার মত৷ এরা গত ৫০০/৫৫০ বছর আগে বর্মা থেকে খাদ্যের অভাবে ভারতে প্রবেশ করে৷ ভারতের মানুষের একটা বড় গুণ সকলকেই আপন করে কোলে তুলে নিয়েছে৷ ভরণপোষণ করেন বলেই এই দেশটির নাম হয়েছিল ভারতবর্ষ৷ শব্দটির মানে হল যে নিজেকে আহার বাসস্থান ও তার আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যে উজাড় করে দেয়৷
অথচ এই বাঙালিস্তানের অসমতল পাহাড়ে ঘেরা একটি জনশূন্যহীন স্থান অবস্থান করছে, তার নাম অসম৷ যখন আজকে যারা স্থানীয় বলছে তার যখন এদেশে আসেনি তখন থেকেই বাঙালীদের বাসস্থান ছিল অসমীয়া এদেশে এলে এই বাঙালীরাই তাদেরকে কৃষি, শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে জংলী থেকে আদব কায়দা শিখিয়ে ভদ্র করেছিল, আজ তারাই বলছে বাঙালীরা বিদেশি বহিরাগত অনাকাঙ্ক্ষিত৷ এরাই যে বহিরাগত এর একটা বড় প্রমাণ হল অসমিয়ারা ভারতের আবহাওয়ায় এসে তাদের শারীরিকও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে৷ তা হল তাদের শারীরিক গঠনে বাঙালীর মত শরীরের রং হয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়াও শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়স্করা জানে তাঁরা অতীতে বাঙলা ভাষায় পঠন-পাঠন করেছে৷ দ্বিতীয় কারণটি হল অসম রাজ্যটি এত ছোট ছিল তাতে তার অর্থনৈতিক কোনো সমাধান ছিল না৷ কেন না রাজ্যটি ছিল অসমতল৷ তাই সেই সময় বাঙালিস্তানের অংশ কেটে অসমে দেওয়া হয়৷ এই দেওয়ার পিছনে কু অভিসন্ধি ছিল৷ বাঙালিস্তানি একমাত্র ভারতবর্ষের রাজ্য ছিল যেখান থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আগুন জ্বালিয়ে ব্রিটিশকে নাজেহাল করেছে৷
তৎকালীন সময় ভারতের ভাষা, সাংস্কৃতিক, শিল্পকলা, সাহিত্যচর্চা খাদ্যৎপাদন, মাটির তলায় ছিল আকরিক ইত্যাদি ইত্যাদি সবকিছু সারা ভারতকে সমৃদ্ধ করেছে৷ এর ফলে ইংরেজরা বাংলার কৃষিঞ্চল কেটে তৎকালীন আমলে রংপুর জেলার গোয়ালপাড়া সাব-ডিভিশন আজ যা চারটি জেলাতে ভাগ হয়েছে, নওগা জেলা (কলিয়া বর বাদে) বরপেটা সিলেটের বরাক ভেলি অঞ্চল আজকের সমতল কাছাড় ও হিল কাছাড়, ময়মনসিংহ জেলার গাঢ় ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সমতল অংশ অসমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়৷
সেই সময় চুক্তি হয়েছিল বাংলার যে অংশটি অসম কে দেওয়া হয়েছে সেখানকার বাঙালীদের ভাষা শিক্ষা ও সংসৃকতির পূর্ণ মূল্যায়ণ করা হবে৷ আজ তার মূল্যায়ণ তো করা হচ্ছে না বরং বাঙালীদের অসমের জমি, শিক্ষা, ও নাগরিকত্ত্বের অধিকার সবকিছু শুধু হরণ করা হচ্ছে৷ তাদেরকে হিটলারের কনসেট্রেনশন ক্যাম্পের গ্যাস চেম্বারের ন্যায় ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে ধুকপুক করে পচিয়ে মারা হচ্ছে৷
সর্বশেষে বলা উচিত আগের অসম রাজ্যকে সমৃদ্ধ করতে ১৮৭৪ সালে বাঙালীস্তানের যে অংশ নেওয়া হয়েছিল সেই অংশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ আজ ভারতে বাঙালীর বাঁচার তাগিদে ও আত্মরক্ষার জন্যে বাঙালিস্তান গড়া খুবই প্রয়োজন৷ যেখানে থাকবে না নিরক্ষর, শোষণ, বা দমন পীড়ন, কাউকে দলদাস বা পার্টির গোলাম হওয়ার মনোভাব থাকবে না৷
- Log in to post comments