ঔপনিবেশিক ঃ উপ-নি-বিশ্+ঘঞ্= উপনিবেশ৷ ‘উপনিবেশ’ মানে হচ্ছে যা মূল বাসস্থান নয় অথবা যা স্থায়ী বাসস্থান নয় কিন্তু নূতন ঘরদোর করে নেওয়া হয়েছে ও জীবিকার ব্যবস্থা করে নেওয়া হয়েছে৷ নূতন গ্রাম শহরের পত্তন হয়েছে৷ কতকটা এই ‘উপনিবেশ’ অর্থে প্রাচীনকালে ‘পত্তনম্’ শব্দের ব্যবহার হত৷ ‘পত্তনম্’ থেকেই ‘পটনা’ শব্দ এসেছিল৷ ‘পত্তনম্’ ইংরেজীতে establishment) অর্থেও চলে৷ ‘উপনিবেশ’ শব্দের উত্তর ‘ঠক্’ (ষ্ণিক্) প্রত্যয় করে ‘ঔপনিবেশিক’ শব্দ পাচ্ছি যার মানে উপনিবেশ সংক্রান্ত (something concerning colonisation)৷
ঔপনিষদিক ঃ উপ্-নি-সদ্ ক্কিপ্ প্রত্যয় করে ‘উপনিষদ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘নি’ উপসর্গের পর ‘স’ থাকলে বিকল্পে ‘ষ’ হয় (যেমন নিসাদ/নিষাদ)৷ ‘উপনিষদ’ ৰানানটি ‘স’ দিয়েও লেখা চলে৷ তবে ৰাংলায় তুলনামূলক বিচারে ‘ষ’-এর ব্যবহার একটু বেশী থাকায় ৰাংলা রীতি হচ্ছে ‘ষ’ দিয়ে ‘উপনিষদ’ ৰানানটি লেখা৷ ‘উপনিষদ’ শব্দের উত্তর ‘ঠক্’ (ষ্ণিক্) প্রত্যয় করে আমরা ‘ঔপনিষদিক’ শব্দটি পাচ্ছি৷ ‘উপ’ মানে নিকটে, ‘নি’ মানে ‘নিবিষ্টভাবে’, ‘গভীরভাবে’, ‘সদ্’ মানে ‘পৌছানো বা স্থানাপন্ন হওয়া৷ যা মানুষকে ভালভাবে পরমপুরুষের নিকটে পৌছে দেয় বা পৌছে দেওয়াটাই যার স্বভাব সে ‘উপনিষদ’৷ উপনিষদ সম্বন্ধীয় এই অর্থে ‘ঔপনিষদিক’৷
বেদের মুখ্যতঃ দু’টি অংশ---একটি অংশের নাম ‘কর্মকাণ্ড’, দ্বিতীয় অংশের নাম ‘জ্ঞানকাণ্ড’৷ কর্মকাণ্ডে সাধারণতঃ যজ্ঞাদি কীভাবে করতে হয় সে সম্বন্ধে ও বৈবহারিক জীবনে বিভিন্ন বিধি-ব্যবস্থা সম্বন্ধে ৰলা হয়েছে৷ ‘জ্ঞানকাণ্ডে’ ৰলা হয়েছে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় বিভিন্ন তত্ত্বের কথা ও সেই তত্তগুলিকে বৈবহারিক জীবনে আনবার কিছু কিছু সংকেত৷ ‘কর্মকাণ্ডে’র আবার দু’টি অংশ---(১) মন্ত্র ও (২) ব্রাহ্মণ৷ মন্ত্র হচ্ছে যে ধবনির দ্বারা যে কর্ম নিষ্পত্তি হয় সেই ধবনিটি৷ মন+ৈ+ড= মন্ত্র৷ ‘‘মননাৎ তারয়েৎ যস্তু সঃ মন্ত্রঃ পরিকীর্ত্তিতঃ’’৷ যা মননের দ্বারা মানুষের ত্রাণের পথ খুলে দেয় তাই ‘মন্ত্র’৷ কর্মকাণ্ডের দ্বিতীয়াংশ অর্থাৎ ‘ব্রাহ্মণ’৷ ‘ব্রাহ্মণ’ হচ্ছে যা মন্ত্রকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তৎসংক্রান্ত সমস্ত বিধিব্যবস্থা ও এই বিধিব্যবস্থাগুলির সঙ্গে ছন্দ, কল্প, ব্যাকরণ (বি-আ-কৃ+অনট্), নিরুক্ত, আয়ুর্বেদ (ধনুর্বেদ) ও জ্যোতিষের সমন্বয় সাধন৷ বৈদিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন গ্রহ সংস্থান, বিভিন্ন রাশি-নক্ষত্রের অবস্থিতি তথা তিথি অনুযায়ী যজ্ঞাদি নিষ্পন্ন হত৷ তাই মন্ত্রভিচারে জ্যোতিষজ্ঞানও অপরিহার্য ৰলে বিবেচিত হত৷ মন্ত্রোচ্চারণ বিভিন্ন ছন্দে নিষ্পন্ন হত৷ তাই মন্ত্র ব্যবহারকারীর পক্ষে ছন্দজ্ঞানও ছিল অপরিহার্য৷ বেদে ব্যবহৃত ছন্দ ছিল সাতটি---গায়ত্রী, উষ্ণিক্, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, ৰৃহতী, জগতী ও পঙ্ক্তি৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)