কর্ষক
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
সর্জন
তোমরা ভালভাবেই জান ’সৃজন’ শব্দটি ভুল৷ ‘সৃজ’ ধাতু ল্যুট করে পাই ‘সর্জন’–‘সৃজন’ নয়৷ কারও মধ্যে সৃজনী প্রতিভা থাকে না–থাকে সর্জনী–প্রতিভা৷ আমরা ‘উৎসর্জন’, ‘বিসর্জন’–এর ‘সর্জন’ শব্দটি ঠিকই ব্যবহার করি৷ কেবল শব্দটি উপসর্গ রহিত অবস্থায় থাকলে গোলমাল করে থাকি–বলে ফেলি ‘সৃজন’, ‘সৃজনী’৷ এবার থেকে ‘সৃজন’ শব্দটি ব্যবহার কোরো না৷
উপর্যুক্ত
‘উপরি + উক্ত’– কে অনেকেই ভুল করে উপরোক্ত লেখেন, ভাবেন শব্দটা বোধহয় উপর + উক্ত = উপরোক্ত৷ সংস্কৃতে ‘উপর’ বলে কোন শব্দ নেই–আছে ‘উপরি’৷ এই ‘উপরি’ + ‘উক্ত’ = উপর্যুক্ত৷
গোরু
‘গম্’ ধাতু করণে ‘ডি’ প্রত্যয় করে ‘গো’ শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে যার ভাবারূূার্থ হচ্ছে যে বেশীর ভাগ সময় চলে থাকে৷ যোগারূঢ়ার্থে ‘গো’ মানে গোরু, ‘গো’ মানে ইন্দ্রিয়, ‘গো’ মানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, ‘গো’ অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যাঁর লীলাভাসে উদ্ভাসিত তিনি ‘গোবিন্দ’৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যিনি পালন করে চলেছেন এই অর্থে পরমপুরুষের আর একটি নাম ‘গোপাল’৷ ‘গো’ মানে ইন্দ্রিয়৷ দেহাধারে এই ইন্দ্রিয় যার শক্তিতে প্রকাশিত এই অর্থেও তিনি গোবিন্দ৷ আবার ঠিক দেহাধারে ইন্দ্রিয় সমূহের যিনি পালক এই অর্থেও তিনি গোপাল, যেখানে গোধন অর্থাৎ ক্যাট্ল প্রতিপালিত হয়, তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটে তা হ’ল গোকুল৷ এই ‘গো’ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে ‘গবী’ রূপ পরিগ্রহ করেছে৷ ‘গো’ শব্দের সঙ্গে ‘রুক্’ প্রত্যয় করে আমরা ‘গোরু’ শব্দ পাচ্ছি৷ গো + রুক = গোরুক > গোরু > গোরু৷ কেউ কেউ ‘গরু’ লিখে থাকেন৷ সেটা ভুল৷ ‘গো’ দিতেই হবে৷
পাশ্চাত্ত্য
অনেকে ‘পাশ্চাত্ত্য’ বানান ‘পাশ্চাত্য’ লেখেন, সেটা ভুল৷ কেননা ‘পশ্চাৎ’ শব্দের উত্তর ‘ত্যায়ঙ্’ প্রত্যয় করে ‘পাশ্চাত্ত্য’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে৷ তাতে রয়েছে ‘পশ্চাৎ’ শব্দের একটি ‘ত’ ও ‘ত্যায়ঙ্’ প্রত্যয়ের একটি ‘ত’৷ তাই ‘পাশ্চাত্ত্য’ বানানে দু’টো ‘ত’ লিখতে হবে৷
(‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যকরণ বিজ্ঞান’ অবলম্বনে)
- Log in to post comments