বাঙলা ভাষায় মুখ্যতঃ বারটি উপভাষা স্তুন্ত্রপ্তন্দ্বন্তুব্ধ রয়েছে৷ সেই উপভাষা ও তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলি নিম্নরূপ–
(১) মধ্যরাঢ়ীয় বাংলা ঃ
(ক) নলহাটি, মুরারই বাদে বীরভূম জেলা
(খ) কান্দি মহকুমা
(গ) সাঁওতাল পরগণা জেলার দুমকা, জামতুড়া ও দেওঘর মহকুমা
(ঘ) বর্দ্ধমান জেলার দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমা
(ঙ) ধানবাদ জেলা (পশ্চিমে পরেশনাথ পাহাড় পর্যন্ত)
(চ) পুরুলিয়া জেলা
(ছ) গিরিডি জেলার অংশবিশেষ
(জ) রাঁচী জেলার পূর্বাংশ–সিল্লি, সোণাহাতু, বুন্দু ও তমাড়
(ঝ) সিংভূম জেলার উত্তর–পূর্বাংশ
(ঞ) কাঁথি এলাকা বাদে মেদিনীপুর জেলা
(ট) ইন্দাস থানা বাদে বাঁকুড়া জেলা
এই উপভাষায় অনেকগুলি খণ্ড–উপভাষা ব্দব্ভত্ব্–স্তুন্ত্রপ্তন্ রয়েছে৷ রাঢ়ের পশ্চিম প্রত্যন্তে যেখানে সুবর্ণরেখা অববাহিকা, কংসাবতী অববাহিকা ও দামোদর অববাহিকা একে অন্যকে ছুঁই ছুঁই করছে কথ্য ভাষার বিচারে এই অঞ্চলের যে অংশ সুবর্ণরেখা নদীর ডানদিকে (দক্ষিণে) অবস্থিত সেখানে রাঢ়ীয় বাঙলার যে শাখা–ভাষাটি প্রচলিত তাকে বলা হয় পাঁচপরগণিয়া বাংলা৷ সুবর্ণরেখার বাঁ তীরে ও কংসাবতীর ডান তীরে (দক্ষিণে) যে অঞ্চলটি পড়ছে সেখানকার কথ্য ভাষা হচ্ছে রাঢ়ী বাংলার পাতকুর্মী শাখা৷ যে অংশটি কংসাবতীর বাঁ তীরে ও দামোদরের ডান তীরে পড়েছে সেটির কথ্য ভাষা হচ্ছে রাঢ়ী বাংলার গোলাওয়ারী শাখা৷ এই অঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ স্থান হচ্ছে গোলা৷ তার থেকেই এই ‘গোলাওয়ারী’ শব্দটি এসেছে৷ যে স্থানটি দামোদরের বাঁ তীরে অর্থাৎ উত্তরে অথচ পরেশনাথ পাহাড়ের পশ্চিমে অবস্থিত সেখানকার কথ্য ভাষা হচ্ছে দক্ষিণী খোট্টা বাঙলা৷ এই দক্ষিণী খোট্টা বাংলা যত পরেশনাথ পাহাড়ের কাছে যাচ্ছে ততই তাতে রাঢ়ী বাংলার প্রভাব বাড়ছে, আর যত তিলাইয়া জলাধারের কাছে যাচ্ছে ততই তাতে দক্ষিণী মগহী বা গয়ালী মগহীর প্রভাব বাড়ছে৷ স্থানগত বিচারে রাঁচী জেলার বুন্দু, আরকি, তামাড় (১), তামাড়
(২) সোণাহাতু, সিল্লী থানার দক্ষিণাংশ ও আঙ্গারা থানার দক্ষিণাংশের রাঢ়ী বাংলা হচ্ছে পাঁচ পরগণিয়া৷ পুরুলিয়া জেলার ঝালদা ও তুলিন, রাঁচী জেলার সিল্লী থানার উত্তরাংশ ও আঙ্গারার উত্তরাংশ, হাজারিবাগ জেলার (বর্ত্তমান গিরিডি জেলা) কসমার, পোটারবাড়, গোলা ও রামগড় থানার অংশবিশেষে চলে রাঢ়ী বাংলার গোলাওয়ারী শাখা৷ হাজারিবাগ জেলার (বর্তমান গিরিডি জেলা) গোমিয়ো, নুয়াডি, বেরমো, ডুমরী, চন্দ্রপুরা ও বোকারো (থার্মাল) অঞ্চলের কথ্য ভাষাও এই গোলাওয়ারী বাংলারই প্রকারভেদ৷২৩
(২) কাঁথি বাংলা ঃ
রসুলপুর নদীর মোহানা থেকে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা পর্যন্ত
(৩) কলিকাতা বাংলা ঃ
(ক) কলিকাতা শহর ও
(খ) রাঢ় ও বাগড়ির সন্নিহিত এলাকা
(৪) শান্তিপুরী বাংলা ঃ
(ক) নদীয়া জেলা
(খ) পূর্ব মুর্শিদাবাদের দক্ষিণাংশ
(গ) বর্দ্ধমান জেলার ভাগীরথী তীরবর্তী সন্নিহিত এলাকা
(ঘ) চব্বিশ পরগণা জেলার বীজপুর–নৈহাটী অঞ্চল
(এককালে এই শান্তিপুরী বাংলাই সাহিত্যিক বাংলা ছিল)
(৫) শেরশাহবাদিয়া বা জঙ্গীপুরী বাংলা ঃ
(ক) মুর্শিদাবাদ জেলার অধিকাংশ এলাকা
(খ) বীরভূম জেলার নলহাটি–মুরারই থানা এলাকা
(গ) সাঁওতাল পরগণার পাকুড় ও রাজমহল মহকুমা
(ঘ) মালদহ জেলা (শেরশাহবাদ পরগণা মালদা জেলায় অবস্থিত)
(ঙ) কাটিহার জেলার কিছু অংশ
(চ) রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ মহকুমা
(এই উপভাষায় কয়েকটি খণ্ড–উপভাষা রয়েছে)
(৬) যশোর বাংলা ঃ
(ক) উত্তর ২৪ পরগণার বনগ্রাম মহকুমা সহ যশোর জেলা
(খ) খুলনা জেলার সদর মহকুমা
(গ) ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমা
(৭) চন্দ্রদ্বীপী বাংলা ঃ
(ক) সমগ্র বাখরগঞ্জ জেলা
(খ) পটুয়াখালি জেলা
(গ) খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমা
(ঘ) ফরিদপুর জেলার মাদারিপুর মহকুমার সন্নিহিত এলাকা
(৮) বিক্রমপুরী বাংলা ঃ
(ক) ঢ়াকা জেলা
(খ) পাবনা জেলার পূর্বাংশ
(গ) ফরিদপুর জেলার সন্নিহিত এলাকা
(৯) সিলেটী বাংলা ঃ
(ক) সিলেট জেলা
(খ) কাছাড় জেলা
(গ) ময়মনসিং জেলার সন্নিহিত এলাকা
(ঘ) কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা
(ঙ) খাশিয়া–জয়ন্তিয়া পাহাড়ের দক্ষিণ পর্বতীয় সানুদেশ
(১০) চট্টল বাংলা ঃ
চট্টগ্রাম বিভাগের সম্পূর্ণ উপকূল এলাকা
(এই উপভাষায় কয়েকটি খণ্ড উপভাষা রয়েছে)
(১১) বরেন্দ্রী বাংলা ঃ
(ক) নবাবগঞ্জ মহকুমা বাদে রাজশাহী জেলা
(খ) পাবনা জেলার পশ্চিমাংশ
(গ) বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর দক্ষিণ তীর
(ঘ) দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাংশ
(১২) রংপুরী বাংলা ঃ
(ক) রংপুর জেলা
(খ) দিনাজপুর জেলা
(গ) বগুড়ার অংশবিশেষ
(ঘ) পশ্চিম দিনাজপুর জেলা
(ঙ) কোচবিহার জেলা
(চ) জলপাইগুড়ি জেলা
(ছ) দার্জ্জিলিং জেলার সমতল অংশ
(জ) পূর্ণিয়া জেলার কিষাণগঞ্জ মহকুমা ও আরারিয়া মহকুমার পালাশী থানা
(ঝ) অসমের গোয়ালপাড়া জেলা
(ঞ) নেপালের ঝাঁপা জেলা৷
(বাঙলা ও বাঙালী)