মেদিনীপুরের হবিবপুর গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে সাইকেল চেপে চলেছেন একজন দারোগা৷ দারোগার পিঠে বন্দুক বাঁধা৷ পথের পাশেই একটা মাঠ৷ গ্রামের কতকগুলি ছেলে ডাংগুলি খেলছিল সেই মাঠে৷
হঠাৎ ডাং ফেলে একটি ছেলে ছুটে এসে দাঁড়ালো দারোগার গমন পথে৷
বাধা পেয়ে দারোগা সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়ালেন৷ ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন--- কি চাও?
ছেলেটির ক্ষুদক্ষুদে দুই চোখে যেন গোধূলিলগ্ণের রক্তিমাভা৷ ছেলেটি দারোগার আপাদমস্তক কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে বেমালুম বলে বসলো, আপনার বন্দুকটা আমায় দেবেন?
কী সাংঘাতিক আবদার৷
বন্দুক দিয়ে তুমি কি করবে? কৌতূকের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলেন দারোগা৷
আপনি কি করেন? পাল্টা প্রশ্ণ করলো ছেলেটি৷ দারোগা জবাব দিলেন, আমি পাখি মারি, বুক ফুলিয়ে ছেলেটি বললো, আমি মারবো ইংরেজ!
ইংরেজ ! চমকে উঠলেন দারোগা৷ বললেন কেন, ইংরেজ তোমায় কি করেছে?
কেমন যেন ব্যথিত হয়ে ছেলেটি বললো, আপনি কি জানেন না--- ইংরেজ আমাদের শাসনের ছলে শোষণ করছে৷ আমার দেশবাসীর ওপর অন্যায় অত্যাচার করছে৷ ইংরেজ আমার নিরীহ দুর্বল দেশবাসীর রক্ত জোঁকের মতো শুষে নিচ্ছে৷ আমাদের অনাহারে রেখে আমাদের সম্পদ তারা লুট করে নিচ্ছে৷....
দারোগা দেখলেন ছেলেটি ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে পড়েছে৷ সস্নেহে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, দেবো বাছা--- তোমায় আমি বন্দুক দেবো৷ আরো বড় হয়ে নাও কেমন?
নিছক সান্ত্বনা দিয়ে দারোগা চলে গেলেন৷ কিন্তু হৃদয়ে যার আদর্শের আগুন জ্বলছে সে কি আর সান্ত্বনায় ভোলে৷ মাত্র উনিশ বছর বয়সে ছেলেটি বোমা নিয়ে ছুটলো সুদুর মজঃফরপুরে কুখ্যাত ইংরেজ কিংসফোর্ডকে মারতে৷ তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো--- এই সেই বাংলাদেশের দামাল ছেলে বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম৷
- Log in to post comments