বাংলা মায়ের দামাল ছেলে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

মেদিনীপুরের হবিবপুর গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে সাইকেল চেপে চলেছেন একজন দারোগা৷ দারোগার  পিঠে বন্দুক বাঁধা৷ পথের পাশেই একটা মাঠ৷ গ্রামের কতকগুলি ছেলে ডাংগুলি খেলছিল সেই মাঠে৷

হঠাৎ ডাং ফেলে একটি ছেলে ছুটে এসে দাঁড়ালো দারোগার গমন পথে৷

বাধা পেয়ে দারোগা সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়ালেন৷ ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন--- কি চাও?

ছেলেটির ক্ষুদক্ষুদে দুই চোখে যেন গোধূলিলগ্ণের রক্তিমাভা৷ ছেলেটি দারোগার আপাদমস্তক কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে বেমালুম বলে বসলো, আপনার বন্দুকটা আমায় দেবেন?

কী সাংঘাতিক আবদার৷

বন্দুক দিয়ে তুমি কি করবে? কৌতূকের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলেন দারোগা৷

আপনি কি করেন? পাল্টা প্রশ্ণ করলো ছেলেটি৷ দারোগা  জবাব দিলেন, আমি পাখি মারি, বুক ফুলিয়ে ছেলেটি বললো, আমি মারবো ইংরেজ!

ইংরেজ ! চমকে উঠলেন দারোগা৷ বললেন কেন, ইংরেজ তোমায় কি করেছে?

কেমন যেন ব্যথিত হয়ে ছেলেটি বললো, আপনি কি জানেন না--- ইংরেজ আমাদের শাসনের ছলে শোষণ করছে৷ আমার দেশবাসীর ওপর অন্যায় অত্যাচার করছে৷ ইংরেজ আমার নিরীহ দুর্বল দেশবাসীর রক্ত জোঁকের মতো শুষে নিচ্ছে৷ আমাদের অনাহারে রেখে আমাদের সম্পদ তারা লুট করে নিচ্ছে৷....

দারোগা দেখলেন ছেলেটি ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে পড়েছে৷ সস্নেহে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, দেবো বাছা--- তোমায় আমি বন্দুক দেবো৷ আরো বড় হয়ে নাও কেমন?

নিছক সান্ত্বনা দিয়ে দারোগা চলে গেলেন৷ কিন্তু হৃদয়ে যার আদর্শের আগুন জ্বলছে সে কি  আর সান্ত্বনায় ভোলে৷ মাত্র উনিশ বছর বয়সে ছেলেটি বোমা নিয়ে ছুটলো সুদুর মজঃফরপুরে  কুখ্যাত ইংরেজ কিংসফোর্ডকে মারতে৷ তোমরা  নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো--- এই  সেই বাংলাদেশের  দামাল ছেলে বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম৷