বাঙালীজাতির মহাশত্রু সিপিএম

লেখক
হরিগোপাল দেবনাথ

বিগত ১৯৬২ সালে চীন অতর্কিতে ভারত আক্রমণ করে বসে৷ তখনকার প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজীর সঙ্গে চীনা প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠতা জমে উঠেছিলো বলে শ্লোগান উঠেছিল হিন্দী-চীনা ভাই-ভাই, আর এর পর মূহূর্তেই চীন ভারতকে আক্রমণ করে বসে৷ কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্র চীন যে আগ্রাসী নীতিতে বিশ্বাসী ও চরম সাম্রাজ্যবাদী, এর প্রমাণ আগেও রেখেছিল তিববত দখলে রেখে ও পাকিস্তানের যোগ-সাজসে সিয়াচীনকে কব্জা করে৷ যা হোক এর পর ভারতের কম্যুনিষ্ট বা সমাজবাদী (তথাকথিত) চীনের মুখোস খুলে গিয়েছে৷ আবার, এদিকে আরএকটি নাটক রূপায়িত হয়ে গিয়েছিল৷ অনেকটা যেন আপন গতিতে ভারতের অভিবক্ত কম্যুনিষ্ট পার্টি এই চীন-ভারত আক্রমণকে কেন্দ্র করেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল৷ এক ভাগ রইল তার পূর্বের নাম নিয়ে সিপিআই আর সিপিআই থেকে বেড়িয়ে আসা নবগঠিত দলটির নাম হয়ে গেল সিপিআই (এম), যারা কালক্রমে শুধু সিপিএম নামেই পরিচিতি পায়৷ এই সিপিএমরা-ই দাবী করল যে ওরা নাকি খাঁটি বিপ্লবী৷ ওরাই ঘোষণা করল যে চীন নাকি ভারত আক্রমন করেনি বরং ভারতই আগ বাড়িয়ে চীনের ওপর হামলা শানিয়েছে৷ সিপিএম দল সিপিআই দলকে বলত রাশিয়াপন্থী ও শোধনবাদী৷ উল্লেখ্য যে পরবর্ত্তীকালে সিপিএম দল ভেঙ্গে আবার যখন সিপিআই (এমএল) দল গঠিত হল ও ওরা শ্লোগান তুলল --- চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, পালর্আমেণ্ট শূয়োরের খোঁয়ার, বন্দুকের নলই শক্তির উৎস৷ তখন তাদের সিপিএমকে বলতে শোনা গিয়েছিল অতিবিপ্লবী বলে৷ এভাবেই দার্শনিক কার্লমার্কসকে বর্জন বা উপেক্ষা করে তাঁর থিয়োরিকেও গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটিয়ে দিয়ে সিপিএমরা সমস্ত বিপ্লবের পথ ছেড়ে দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রে চলে এল৷ তারপর মুখে ওরা ভন্ড বৈষ্ণবের হরিণাম জপের মতই গণতন্ত্র প্রেমী বললেও ওদের রয়ে গেল রক্তের নেশা৷ দুনিয়ার মননে যেখানে যেখানেই মার্কস্বাদীরা ক্ষমতায় এসেছে সেখানটাতেই প্রচণ্ড রক্ত ঝড়েছে মানুষ, ধনপ্রাণ ও সম্পদও প্রভূত পরিমাণে নষ্ট হয়েছে৷
পাঠকদের অবশ্যই মনে রয়েছে যে, এককালে এই কম্যুনিষ্টরাই বলেছিল, মুসলিম লীগেব দাবী মানতে হবে, তবেই ভারত স্বাধীন হবে বলে৷ অর্থাৎ সেইদিন বৃটিশ প্রভুদের অনুচর হয়ে দালালি করবার জন্যে ভারতকেই বৃটিশ সাম্রজ্যবাদীগোষ্ঠীর চক্রান্তে স্বার্থের মোড়কে জড়িয়ে গিয়ে কম্যুনিষ্টরা ভারত বিভাজনকেই মেনে নিয়েছিল৷ অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগেও ওরা ভারতীয় জাতিসত্ত্বার তথা বাঙালী স্বার্থের পরিপন্থী ভূমিকা নিয়ে ছিল৷ আর পরবর্ত্তীকালে ১৯৬২ সালে ভারতের ওপর চীনের হামলার সময়ও ভারত বিরোধীর ভূমিকায় নেমেছিল৷ শুধু তাই নয়, এরপরও পূর্ব-পাকিস্তানের মৌলনা ভাসানীর নেত্বৃত্বে যোগসাজ করে চীনের স্বার্থেই চক্রান্তের জাল বুনতে শুরু করেছিল গোটা বাঙালী অধ্যুসিত অঞ্চল নিয়ে উঃ পূর্ব ভরতকে নিয়ে পৃথক অঞ্চল গঠন করতে৷ অবশ্য ওদের সেই পরিকল্পনা ভেঙ্গে গেছে
বিগত কংগ্রেসী আমলে ওরা ওদের রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে ঘন ঘন কারণে অ-কারণেও ষ্ট্রাইক, ধর্মঘট, লক-আউট ইত্যাদি ডেকে ডেকে পশ্চিমবাংলার কল-কারখানা গুলোর স্বাভাবিক কর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি করত, যার ফলে ভিন্ন রাজ্যের মিল-মালিকরা তাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা গুটিয়ে পশ্চিমবাংলাই ছেড়ে চলে গেছে৷ পরিণামে পঃবাংলার শ্রমিক শ্রেনীই মার খেয়েছে বেশী পরিমাণে৷
ভারতবাসীর চরম দুভর্আগ্যবশত ব্রিটিশ শাসকরা - মুক্ত ভারতে কংগ্রেসী শাসকদের অপশাসন চালাতে সুযোগ দেয়৷ অবশেষে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সিপিএম দল বিপুল ভোটাধ্যিক্যে জয়ী হয়ে পঃবাংলা আর ত্রিপুরার ক্ষমতায় চলে আসে দুই রাজ্যেই৷ এই দল তাদেরই নেতৃত্বে তদের সম-মনোভাবাপন্ন অন্যান্য কয়েকটি দল নিয়ে বামফ্রণ্ট গড়ে তোলে ও শাসনভার হাতে নেয়৷ পশ্চিমবাংলায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকলেও ত্রিপুরায় বিগত ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত চলেছিল কম্যুনিষ্ট বিহীন জোট সরকার৷ এটি বাদ দিলে ত্রিপুরায় এবার সপ্তমবারের বামফ্রণ্টের তথা সিপিএমের শাসন কার্য চলছে৷ তাই বলার অপেক্ষা রাখেনা যে উক্ত ৩৩-৩৪ বছরের মেয়াদে ত্রিপুরায় সিপিএম নেতা-নেত্রীর আচার-অচরণ, মনন-মানসিকতা, গতিবিধি ও চিন্তা-ভাবনীতি, ইত্যাদির পরিপূর্ণ ধারণাই রাজ্যবাসীর হয়ে গেছে৷ বলা খুবই অতিশয়ক্তি হবে বলেই মনে করি যে এই ধরণের নীতি বা আদর্শ বলেই কোনওদিন কিছু ছিলো না৷ তবুও যতটুকু নিয়ম-নীতির তারা তোয়াক্কা করতেন ক্ষমতায় আসার আগে, ক্ষমতায় আসার পরে তা ভুলে গেছেন, অথবা ঝেঁটিয়ে ফেলেদিয়েছেন কেননা Power makes a man corrupted আর এখন তো সব ভুলে গিয়ে লজ্জ্বাশরমের বালাই না রেখেই ভ্রষ্টাআচারী, চরম স্বৈরাচারী ও গণ-প্রতারকের ভূমিকায় নেমে গেছেন শাষক শক্তি৷ ওই যে বলা হয়েছে “.... absolute power makes corrupted absolutely.”

উল্লেখ্য প্রসঙ্গ ক্রমেই যে, ভারতবর্ষে কম্যুনিজম্ আমদানী করেছিল রাজনীতিজ্ঞ এম এন রায়৷ আবার তিনিই সখেদে বলেছিলেন যে “Capitalism makes aman begger, Communism makes the begger a beast”. অবশ্যই এই লেখার পেছনে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে৷ প্রথমতঃ তারা জড়বাদে আর ভোগবাদে বিশ্বাসী৷ দ্বিতীয়তঃ তারা ইশ্বরতত্ত্বে ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী নন৷ এই কারণেই আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন না থাকায় তাদের নৈতিকতারকোনও বালাই থাকে না৷ শাস্ত্রে বলা হয়েছে ধর্ম বিহীন মানব জীবন পশুর চেয়েও অধম জীবন৷ পশুরা পরিচালিত হয় তাদের প্রবৃত্তির তারণায়৷ আর নীতিহীন ও সংযমহীন ও আদর্শছাড়া মানুষ পশুবৎ আচরণ করলে তাঁকে পশুরও নীচ বলা যুক্তিসঙ্গত করতে হয়৷ বিগত ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বামেরা তথা সিপিএমেরা এই রাজ্যেরক্ষমতায় আসেন৷ ক্ষমতায় বসেই তারা তাদের স্বরূপ প্রকাশ করতে শুরু করেন বলে তাদের ধন্যবাদও জানান যেতে পারে৷ রাজ্যে গদীসীন হয়েই তারা ব্রিটিশদের Devide and rule বিভাজন করো ও শোষণ করো ও ভোগ করার নীতি চালু করে দিলো৷ উদ্দেশ্য ছিলো রাজ্যে বহুকাল ধরে যে জাতি-উপজাতির সৌহার্দপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে এর মূলে আঘাত করা ও জাতি-উপজাতির বিভাজন ঘটিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক বানানো আর ব্যালানদের রাজনীতিতে দুয়ের কায়েমী স্বার্থ বজায় রাখা৷ তারা রাজ্যে চালু করে দিল রাজ্যের বাঙালী বাসিন্দা উপজাতি বাসিন্দাদের জমি ফেরৎ দেবার নীতি৷ TLR G LR Act ১৮৭ ধারা অনুয়ায়ী বাজারদর অনুসারী উপযুক্ত মূল্য দিয়ে বাঙালীদের কেনা জমি কেড়ে নিয়ে পাহাড়িদের ফেরৎ দিতে শুরু করেন৷ ফলে বহুসংখ্যক বাঙালী বস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন৷ সিপিএম দলের প্রতিভূ সহ নেতানেত্রী কর্মীবৃন্দ সবাই যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়েই বাঙালী বিদ্বেষী হয়ে উঠেছে এর সপক্ষে ভুরি ভুরি প্রমাণ আমাদের হাতে মজুত রয়েছে যেমন ---
(১) ১৯৮৪ সালের ২৩শে জুলাই কলিকাতা বিমান বন্দরে তখনকার মুখ্যমন্ত্রী কমরেড নৃপেন চক্রবর্ত্তী ত্রিপুরায় ১৯৮০র গণহত্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্ণের জবাবে বলেছিলেন - আমি যদি উপজাতির ঘরে জন্মাতাম, আমিও উগ্রপন্থী হতাম৷ এটা তাদের রাজ্য, তাদের দেশ দেখুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রথিতযশা একজন রাজনীতিবিদের ইতিহাস বিকৃতির কি কদর্য প্রয়াস৷ প্রকৃত ইতিহাস বলে যে ত্রিপুরা মূলতঃ বঙ্গভূমির অন্তর্গত আর এখনও এতিহাসিক সত্য যে, উপজাতিরা মঙ্গোলিয়ান বংশোভূত ও ওরা এরাজ্যে বহিরাগত৷ দ্বিতীয়তঃ নৃপেন বাবুর অপর এক মন্তব্য রয়েছে যে বাঙালীদের তিনি এরাজ্যের মশাদের সঙ্গে উপমা দিয়ে বলেছেন বাঙালী মশকদের রক্তশোষণ (পডন উপঝাতি শোষণ) থেকে বঁআচাতেই তারা এরাজ্যে এডিসি কায়েম করেছেন৷ উল্লেখ থাকা খুবই প্রাসঙ্গিক যে ভারতের সংবিধান প্রণেতারা ত্রিপুরায় ৬ষ্ঠ তপশীলের সংস্থান রাখেন নি৷ আর ৬ষ্ঠ তপশীল অনুসারে এডিসি হবারও কথা ছিল না৷ কিন্তু নৃপেন, দশরথ, মানিক, অঘোর প্রমুখ কমরেডরা তথা সিপিএম দলই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধীকে দিয়ে সংবিধানকে সংশোধন করিয়ে তবে ত্রিপুরায় এডিসি চালু করেন৷ অবশ্য ভোট পাবার লোভে কংগ্রেসী দানবরাও এতে মদত জুগিয়েছিলেন৷ সেই এডিসিতে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ উপজাতির স্বার্থে দুই তৃীয়াংশ জমি বরাদ্দ করা হল কোন যুক্তিতে আশা করি এর ব্যাখ্যাও কেউ দিতে সক্ষম হবেন না৷ আমি সহৃদয় পাঠকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই, দয়া করে আপনারা সকলেই রাজ্যবাসীর ঘোরতর সমস্যার বাস্তব চিত্রটি একবার সরেজমিনে দেখার চেষ্টা করুণ৷ ত্রিপুরার মানচিত্রটির প্রতি চোখ খুলে তাকালেই দেখবেন, পূর্বেকার দশটি মহকুমা-সদর অঞ্চলগুলো বাদ দিয়ে বাদবাকী অধিকাংশ জায়গা ঘিরেই করা হয়েছে এডিসি৷ তাহলে, এডিসি-র বাইরের একেকটি এলাকা হয়ে রইল পারস্পরিক বিচ্ছিন্ন এক একটি দ্বীপ এলাকা৷ বলার অপেক্ষা রাখেকি এধরনের দ্বীপএলাকাগুলোর সমষ্টি নিয়ে কোনও সুষ্ঠু রাজ্য গঠিত হওয়া উচিত নয়৷ কিন্তু রাজ্যের সিপিএম সেই কাজটিই করলেন তাদের দলীয় স্বার্থে ও নিজেদের খেয়াল চরিতার্থ করতে৷ এমনকি সংবিধান প্রণেতারা সেক্ষেত্রে তঁআদের যুক্তিতে যা হতে দেননি, সেই সমস্যারই বীজ বপন করলেন সিপিএম নায়কেরা৷ ৬ষ্ঠ তপশীল মোতাবেক এডিপির হাতে সমস্ত ক্ষমতা এখন কিন্তু তুলে নিতে পারছেন না, পেছনে অনেক আশংকা রয়ে গেছে বলে৷ তবে এডিসি কে বাঙালী শূন্য করার যে সিপিএমএর চালের ঘৃন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল তারই বাস্তব রূপায়ন হয়েছিল ১৯৮০র সেই ভ্রাতৃঘাতী গণহত্যার মাধ্যমে৷ ত্রিপুরার প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী কমরেড বিমল সিনহা, তাঁর একটি মন্তব্যে স্পষ্ট বলে রেখেছেন যে ১৯৮০ সেই গণহত্যার ছক তৈরী করেছিলেন কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী৷ বলা বাহুল্য মাত্র, একই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে এবার উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাশীরামপুর কাণ্ডে৷ সেক্ষেত্রেও সামনে মিজোরাম থেকে আগত রিয়াং শরণার্থীদের শিখণ্ডীরূপে রেখে পেছন থেকে গুটি চালালেন বিপএবী বিধায়ক রাজেন্দ্র রিয়াং৷ প্রণয় ঘটিত কারণে হতাস এক রিয়াং যুবকের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে একশটি বাঙালী পরিবারের সর্বস্য সম্পদ, গবাদী পশুসহ লুট করে, তাদের বস্তুভিটে জ্বালিয়ে দিয়ে বিপন্ন করে দিয়েও তাদের সঙ্গে বহির্জগতের যোগাযোগ বন্ধ করে৷ রাখাটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয় বলবেন রাজ্য সরকার? দুষৃকতিদের গ্রেপ্তার না করে পুরস্কৃত করেন অথচ যাদের সর্বস্য পুড়ল জন্তু-জানোয়ারের চাইতেও শোচনীয় ভাবে এটা নিছক সাম্প্রদায়িকতা নয় বলবেন?
গত ১৯৯৯ সালের ১২ই জানুয়ারী ত্রিপুরা উন্নয়নের স্বর্ণযুগের কারিগর তথা মুখ্যমন্ত্রী কমরেড মানিক সরকার বললেন তেলিয়ামুড়াতে এক প্রকাশ্য জনসভায় ---স্বাধীন ত্রিপুরা গড়ার জন্য কিছু উপজাতি বিভ্রান্ত যুবক বন্দুক হাতে নিয়ে আন্দোলন করছে৷ আমি সেই যুবকদের দোষ দিচ্ছি না৷ স্বাধীনতার পূর্বে তারা ছিল সংখ্যা গড়িষ্ঠ৷ তিনিই আবার ১৯৯৯ সালের ৫ই মার্চ আগরতলায় বললেন---বেকারত্ব থেকেই ওরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে৷ আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মশায়ের চোখে সাম্প্রদায়িকতার ছানি নিয়েই হয়তো তাদের সংখ্যাগড়িষ্ঠ ছিলো বলে দেখতে পেরেছেন নতুবা, ডিরেক্টর অব্ সেনসাস, ঠাকুর সোমেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মার রিপোর্টেই উল্লেখ রয়েছে যে ১৯৩১ সালের পূর্বের জনসংখ্যা বিতর্কিত ১৯৩১ সালের জনগণনায় দেখানো হয়েছে, ওই সময় ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা ছিল ৩,৮২,৪৫০---তার মধ্যে বাঙালী জনসংখ্যা ১,৯৮,৩৩৩ এার উপজাতি জনসংখ্যা ১,৮৪,১১৭
১৯৯৯ সালের ২রা ডিসেম্বর কমরেড বাদল চৌধুরী বলেন---উগ্রপন্থীরা চাইলে তৃতীয় কোনও দেশে অলোচনায় বসতে রাজী৷ এক দেশের মানুষ চাইলে স্বাধীনতাও দেওয়া যাবে৷ তিনি জোর দিয়েই আরোও বলেন---উন্নয়নের কাজে বাঁধা না দিয়ে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে যান৷ গত ২০০০ সালের ৮ই জানুয়ারী বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে কমরেড জীতেন চৌধুরী বলেন---রাজ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন উগ্রপন্থীদের হাতে মিজোরামের ধাঁচে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজী ৷গত ২০০০ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্যাতিক মাতৃভাষা দিবসে আগরতলার উমাকান্ত ময়দানে কচি-কাঁচা সহ বিশিষ্ট ব্যষ্টিদের জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন---একসময়ে ত্রিপুরার উপজাতিরা সংখ্যাগড়িষ্ঠ ছিল৷ বাঙালী উদ্বাস্তুরা ত্রিপুরায় আসায় উপজাতি সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে৷ বাঙালী উদ্বাস্তুরা তাদের ভাষা সংস্কৃতি উপজাতিদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে৷ আর জন্যই হয়তো ত্রিপুরার মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গত ২০১০ সাল থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে বাংলা ভাষাকে এচ্ছিক বিষয় করে রেখেছে৷ উল্লেখ্য যে বাঙালী ছাত্র-যুব সমাজ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর নিকট পৃথক পৃথক ভাবে সাক্ষাৎকার চেয়ে স্মারক লিপিতে বাংলা ভাষাকে আবশ্যিক পাঠ্য রাখার দাবী জানাতে গেলে সময়টুকু পর্যন্ত দেওয়া হয়নি৷ শিক্ষায় মাতৃভাষার অধিকারকে হরণ করা মানবিকতা বিরোধী কাজ৷ তাই না?
গত ২০০০ সালের ১০ই মার্চ তখনকার শিক্ষামন্ত্রী কমরেড অনিল সরকার বলেন---ত্রিপুরার এই ভয়ানক পরিস্থিতির জন্য দায়ী পার্শ্ববর্তী রাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুরা৷ উল্লেখ্য যে নীতিগত ভাবে প্রায় দুদশকের আগের দাবী মেনে নিলেও আজ অব্দি ত্রিপুরায় প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য রাজ্য সরকার বাংলা ভাষা চালু করলেন না৷ উপরন্তু উল্লেখিতরূপে বিভ্রান্তিমূলক, উস্কানিমূলক ও ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়ে সিপিএম দলটির মহাপ্রভুরা রাজ্যের কচি-কাঁচা, কিশোর-কিশোরীসহ কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের বাবা, মা ও ভাইবোনদের অর্থাৎ আজ যারা রাজ্যের তরুণ তরুণীরা যাদের অনেকে প্রশাসনিক কাজে রত রয়েছেন, সরকারী অফিসগুলো আলোকিত করে মার্কস্বাদী সরকারের গুণ মাহাত্যে বঁুদ হয়ে রয়েছেন, তারাও কিন্তু বুঝতে ভুল করছেন---সিপিএমরা কি পরিমাণ বাঙালী বিদ্বেষী আর বাঙালী জাতিটার শত্রুতায় লিপ্ত রয়েছেন৷