গ ঃ এই ‘গ’ ধবনিটিকে আমরা পাচ্ছি তিনটি সূত্র থেকে৷ ‘গম্’ ধাতুর উত্তর ‘ড’-প্রত্যয় করে আমরা ‘গ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ইংরেজীতে যেমন ধাতুর উত্তর er’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ৰিশেষণ তৈরী করে নিই যেমন goer, player, তেমনি সংস্কৃতে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় ‘ড’ প্রত্যয়৷ ‘গম’্ ধাতুর মানে ‘চলা’৷ তাই ‘গ’ মানে ‘যে চলে সে’ (পুংলিঙ্গে), যেমন ‘দ্রুতগ’, ‘খগ’ ‘ৰিহগ’ প্রভৃতি৷ ‘গ’ শব্দের উত্তর ‘স্ত্রিয়াম্ আপ্’ করে পাই ‘গা’৷ তার মানে হচ্ছে ‘যে নারী চলে৷’ তাই গম্ + গা= গঙ্গা, ‘গঙ্গা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে যে নারী বিস্তীর্ণা ভূমির ওপর দিয়ে চলে থাকে৷
‘গৈ’ ধাতুর অর্থ ‘গান গাওয়া’৷ ‘গৈ’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করেও আমরা ‘গ’ শব্দ পাচ্ছি, যার মানে ‘যে পুরুষ গান গায়’৷ এর স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘গা’৷
‘গণ’ ধাতুর অর্থ হ’ল ‘গণনা করা’৷ ‘গণ্’ ধাতুর উত্তর ড প্রত্যয় করেও আমরা ‘গ’ শব্দ পাচ্ছি যার অর্থ হচ্ছে ‘যে পুরুষ গণনা করে’৷ এরও স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘গা’৷ তাই ‘গ’ ধবনি বা বর্ণ সম্বন্ধে আমরা এই মানেই শেষ পর্যন্ত নিতে পারি যে, ‘যে গান গাইতে গাইতে চলেছে বা গণনা করতে করতে চলেছে’৷
গঙ্গা ঃ গম্+ গম্+ ড+ আপ৷ প্রথমের ‘গম্’টির ‘গ’-এর অর্থ ‘বিস্তীর্ণাভূমি’ আর ‘গম্’ মানে ‘বিস্তীর্ণভূমির দিকে’৷ দ্বিতীয় ‘গম্টি হচ্ছে ‘গম্’ ধাতু৷ ‘গম্’ ধাতু+‘ড’ করে আমরা ‘গ’ শব্দ পাচ্ছি৷ তার মানে হচ্ছে ‘যে যায়’৷ ‘আপ্’ প্রত্যয় করে স্ত্রীলিঙ্গ রূপ আসছে৷ তাই ‘গঙ্গা’ মানে ‘বিস্তীর্ণাভূমির দিকে যে যায়’৷ গঙ্গোত্তরী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত এই সুবিস্তীর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে যে নদী বয়ে চলেছে সে ‘গঙ্গা’৷ প্রথম ‘গম-এর ‘ম্’-টি পদান্ত ‘ম’ বলে গণ্য হৰে না কারণ ওটি দ্বিতীয়া বিভক্তির ‘ম’৷ তাই ‘গঙ্গা’ ৰানান ‘গঙ্গা’ দিয়েই লিখতে হবে, ‘গংগা’ ৰানান চলৰে না৷
গঙ্গাধর ঃ গঙ্গা+ ধৃ+ অচ্৷ ভাবারুঢ়ার্থে যে গঙ্গাকে ধারণ করেছে, যোগারূঢ়ার্থে ‘শিব’৷ পৌরাণিক গল্প অনুযায়ী স্বর্গ থেকে গঙ্গা যখন মর্ত্ত্যে অবতরণ করেন তখন সেই প্রবল জলস্রোতে ধরিত্রী বিদীর্ণা হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকায় লোকে শিবকে অনুরোধ করে যেন তিনি ওই প্রখর জলস্রোতকে নিজের মস্তকে ধারণ করে ধরিত্রীকে বিদীর্ণা হওয়া থেকে রক্ষা করেন৷ গল্প অনুযায়ী শিব তাই-ই করেছিলেন৷ তাই তিনি ‘গঙ্গাধর’৷ অনেকের মতে শিবজটা থেকে বন্ধনমুক্ত হয়ে গঙ্গা ত্রিধারায় ত্রিলোকে প্রবাহিত হয়ে যান৷ অন্য মতে ত্রিধারা নয়-চতুর্ধারা৷
‘‘স্বর্গেতে অলকানন্দা মর্ত যে ভাগীরথী
পিতৃলোকে মন্দাকিনী পাতালে ভোগবতী৷’’ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)