বাঙালীর বোধহয় কি হবে?

লেখক
গোবিন্দ মজুমদার

স্বার্থমগ্ণ যে জনবিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে৷ কবির এই অমোঘ বানী এই মূহূর্তে বাঙালীর জীবনে কতটা  বাস্তব৷ ত্রিপুরার পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ‘‘আমরা বাঙালী’’ দল আজ মর্মে মর্মে তা উপলদ্ধি করতে পারছে৷ কাঞ্চনপুরের বাঙালীরা তিলে তিলে মরছে৷ গুলি খেয়ে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করছে৷ গুলি খেয়ে পা খুইয়েছেন একজন৷ পাম্প অপারেটর সুবল দে জি, বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ দামছড়ার অপহৃত লিটন দেবনাথ বৈরী কবলে৷ মেঘালয়ের বাঙালীদের উপর চলছে খাসিয়াদের অত্যাচার৷ সারা ভারত জুড়ে বিজেপি প্রচার চালাচ্ছে বাঙালীরাই বাংলাদেশী৷ এন.আর.সি, সি.এ.এ, সি.এ.বি এর মতো আইন পাশ করে বর্তমানের কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালীদের নাগরিকত্ব হরন করে রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্তে লিপ্ত৷ অসমে ডিটেনশান ক্যাম্পে বাঙালীকে বিভিষিকাময় জীবনযাপন করতে হচ্ছে৷ তবুও বাঙালীর বৃহত্তর অংশ এই কম্যুনিস্ট কংগ্রেস ও বিজেপি দলের হয়ে নিজ স্বার্থে গোটা জাতির সর্বনাশ ডেকে আনছে৷ খাল কেটে কুমির ডেকে আনছে৷ এই মুহূর্তে ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল বাঙালী জাতির পাশে নেই৷ এই বাঙালীদের বোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা লোকসভায় ও রাজ্যসভায় নির্যাতিত বাঙালীর পক্ষে একটি কথাও বলছে না৷ উপরন্তু বাঙালী বিদ্বেষী আইনগুলি কে সমর্থন করছে৷ এই সমস্ত ঘটনা প্রবাহ আজ বাঙালীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ‘‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে৷’’ অথচ এই বাঙালীর আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ বিপন্ন৷ এই বাঙালীদের শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে, বাঙালীর ঘরের শত্রু বিভিষণরা , রাজাকারেরা ও মির্জাফরেরা আর কিছু শহরের এলিট শ্রেণী ও আঁতলেকচুয়ালরা৷ কিন্তু এই শহরের বাবু ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারছেন না গ্রাম যদি নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায় তাহলে একদিন শহরের মানুষ ও আক্রান্ত হবে৷ গ্রামের আগুন শহর পোড়াবে৷ আত্মসুখ পরায়ন জীবন ভ্রান্ত ও নিষ্ফল৷ এই স্বার্থমগ্ণ ব্যষ্টিদের বৃহত্তর সমাজ শ্রদ্ধা করেনি, জগতের সকল মানুষের সুখ-  দুঃখের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনের সংযোগ সাধনেই পরিপূর্ণ জীবনকে লাভ করা যায়৷ কিন্তু বাস্তব সত্যিটা সংখ্যা গরিষ্ঠ বাঙালী জাতি যে দিন বুঝবেন, সে দিনই বাঙালীর ভাগ্যাকাশের কালো মেঘ কেটে যাবে ও সূর্যের আলোতে বাঙালীর গৌরবে পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষ নোতুন পথের সন্ধান পাবে৷ তবে যত বেশি দেরি হবে এরজন্য গোটা জাতিতে অনেক মূল্য দিতে হবে৷