গমের সাথী ফসল হিসেবে পোস্তোর চাষও চলতে পারে৷ পোস্ত রাঢ়ের মানুষের প্রিয় খাদ্য৷ পোস্ত ফলের আঠা অহিফেন একটি সাংঘাতিক ধরণের মাদক দ্রব্য৷ অথচ এর বীজকোষের মধ্যস্থিত পোস্ত বীজ বা পোস্ত দানা একটি সাত্ত্বিক খাদ্য–রাঢ়বাসীর অতি প্রিয় ভোজ্য৷ দরিদ্র রাঢ় প্রতি বৎসর লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাইরে থেকে এই পোস্ত আমদানী করে৷ রাঢ়ের কৃষ্ণমৃত্তিকা যদিও পোস্ত চাষের পক্ষে অত্যুত্তম নয়, তবুও রাঢ়ের গমের ক্ষেতের চারিপাশে সীমান্ত রেখা হিসেবে আল বরাবর পোস্ত লাগানো যেতে পারে৷ গমের সঙ্গে বিমিশ্র ফসল হিসেবেও চাষ করা যেতে পারে৷ পোস্ত একটি আবগারি বিভাগীয় পণ্য, তাই এর চাষের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্ত্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে৷ কেন্দ্রীয় আবগারি বিভাগের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রেখে রাঢ়ে প্রয়োজনমত পোস্ত পাওয়ার জন্যে যে পরিমাণ আফিম চাষের প্রয়োজন সে পরিমাণ আফিম চাষের অনুমতি দেওয়া উচিত৷ অন্যথায় এই পোস্ত কিনতে গরীব রাঢ়ের অর্থের বহিঃস্রোত বন্ধ করা যাবে না৷ অবশ্য গরীব রাঢ়বাসী যাতে আফিমে আসক্ত না হয় সেই জন্যে এই চাষের ওপর কড়া সরকারী তদারকি থাকা দরকার৷
নাইট্রোজেন মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়, আর সব ধরণের ডাল গাছের গোড়ায় নাইট্রোজেন তৈরী হয়৷ তাই গমের চাষের সঙ্গে সঙ্গে ওই ক্ষেতে ডাল চাষও করতে হবে৷ যদি একই জমির ৯০ শতাংশে গম লাগানো হয়, আর ১০ শতাংশে ডাল লাগানো হয়, তাহলে ডাল গাছের গোড়ায় সৃষ্ট নাইট্রোজেনের প্রভাবে ১০০ক্ম গম ও ১০ক্ম ডাল পাওয়া যাবে৷ অর্থাৎ ডালটা ফাউ হিসেবে পাওয়া গেল৷
বাঙালীস্তানে ডালের মধ্যে সব থেকে বেশী হয় ছোলা, তারপর অড়হর, তারপর মুগ, তারপর মুসুর, তারপর মটর, তারপর কুর্ত্তি৷ ডালের মধ্যে ভালো খাদ্যগুণ আছে বিরিকলাই, ছোলা, অড়হর আর মুগ ডালে৷
বাঙালীস্তানে বর্তমানে ডাল উৎপাদনের পরিমাণ যা তাতে বছরের পাঁচ মাস চলে৷ বাকীটা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আনতে হয়৷ একমাত্র নদীয়া জেলাই ডাল উৎপাদনে স্বয়ম্ভর৷ মালদা আর মুর্শিদাবাদ জেলাও সব রকম ডাল মিলিয়ে কোনমতে কাজ চালিয়ে নিতে পারে৷ শুধু বিরিকলাই উৎপাদনে বীরভূম, বর্দ্ধমান, (অবিভক্ত) পশ্চিম দীনাজপুর ও কোচবিহার জেলা স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ পশ্চিমবঙ্গের সামান্য পরিমাণ বিরিকলাই পঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতেও যায়৷
আউস বা আমন ধান কাটার পর ভালো করে’ জমিতে চাষ দিয়ে বড় জাতের লালচে ছোলা, বড় জাতের মটর, আর বড় জাতের মুগের চাষ করা যেতে পারে৷ আমন ধান কাটার পর তিন থেকে চার মাস সাধারণতঃ জমিতে জল থাকে না৷ আশ্বিনের প্রথম দিকে জমিতে যখন একটু কাদা কাদা ভাব থাকে সেই সময় ছোলা, মটর, মুসুর, খেসারীর বীজ রাতভোর ভিজিয়ে রেখে তারপর অঙ্কুরিত করে’ পায়রা ফসল হিসেবে চাষ করতে হবে৷
ধানের ক্ষেতে ডালের চাষ করলে ধান কাটার সময় ডাল গাছেরও মাথা কাটা পড়বে, তাতে ডাল গাছের নোতুন শাখা গজাবে, আর উৎপাদনও ভালো হবে৷ ডালের গাছ গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে৷ ওই সময়ে নোতুন করে’ সার দিতে হবে না, কারণ ধান গাছ যে সার টানতে পারেনি সেই অবশিষ্ট সারটুকু ডাল গাছ টেনে নেবে৷ ফাল্গুন মাসে দ্বিতীয় ফসল কাটার পর সেই জমিতেই সরষে আর গ্রীষ্মের সয়াবীনের চাষ করা যাবে৷
রাজনগর, দুবরাজপুর, মামুদবাজার, মুরারই আর রামপুরহাট ৰ্লকে ধান চাষের পর ডালের চাষ হতে পারে৷
একটু উর্বর ও উঁচু জমিতে বিরিকলাই চাষ ভালো হবে৷ সাথী ফসল হিসেবে সয়াবীন, বাদাম ও সূর্যমুখীর চাষ চলবে৷ যে জমিতে বিরিকলাই হতে পারে সেখানে মুগের চাষ না করাই ভালো৷ কারণ মুগ ডালের চাষ সারা বছর ধরেই চলতে পারে, কিন্তু বিরিকলাই হবে বছরে একবার৷ তাছাড়া যে কোন ফসলেরই সাথী ফসল হিসেবে মুগের চাষ চলতে পারে৷
বর্ষা আসার আগে অড়হরের বীজ জমিতে ছড়িয়ে দিতে হয়৷ মূলতঃ দু’ধরণের অড়হর হয়–মাঘী আর চৈতী৷ নদীয়া, মুর্শিদাবাদ আর হুগলী জেলার বলাগড় মহকুমায় খুব ভালোভাবেই এই অড়হরের চাষ হতে পারে৷ জমির সবটাই যাতে কাজে লাগানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে অড়হরের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে রেড়ির চাষ হতে পারে৷ আউসের চাষও হতে পারে৷ কার্ত্তিক মাসে ওই জমিতেই শাঁখ আলু ও রাঙা আলুর চাষ একসঙ্গেই হতে পারে৷ নদীয়া জেলায় সাধারণতঃ আউস আর অড়হর একসঙ্গে চাষ হয়৷ পশ্চিম রাঢ়ের সমস্ত টাঁড় জমিতেই আউস আর অড়হরের চাষ একসঙ্গে করা যেতে পারে৷ এইভাবে সারা বছর ধরেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জমিতে কিছু না কিছুর চাষ করতে হবে৷