বাতাসে বিষ

লেখক
মনোজ কুমার সরকার

দূষণনগরী কলকাতা---দিনে ২০টা সিগারেটের বিষ ঢুকছে  প্রতিটি  নাগরিকের ফুসফুসে৷ দূষণের  চাদরে  ঢেকে  গিয়েছে  কলকাতার আকাশ বাতাস৷ পরিস্থিতি এতটাই  বিপজ্জনক যে, শহরে শ্বাস নেওয়া মানেই দিনে  গড়ে ১৮ থেকে ২০টা সিগারেট খাওয়ার সমান বিষ আমাদের  শরীরে ঢুকে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ সিগারেট থেকে  দূরে  থেকেও  বা বাস্তবে  সিগারেট না খেয়েও আপনার অজান্তে ফুসফুসে ঢুকে যাচ্ছে  বিষাক্ত বাতাস--- যা আপনার  শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ গত ডিসেম্বরের (২০১৮) শুরুতে  কলকাতার  বাতাসে দূষণের  মাত্রা বাড়তে  শুরু করেছিল৷ ডিসেম্বরের প্রথম  সপ্তাহান্তে  দূষণের  পরিমান  অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে গিয়েছিল যখন বাতাসে ভাসমান  ধূলিকণা               (পার্টিকুলেট  ম্যাটার  বা পি এম) কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে বিপদসীমার  অনেক উপরে  পৌঁছে যায়৷

২০১৮-র ডিসেম্বরের ৭তারিখ শুক্রবার  বি.টি.রোডের  পার্শ্ববর্তী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ব-বিদ্যলয়ের  দূষণসূচক  যন্ত্রে সকাল ৯টায় বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে পি.এম ২.৫ (সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমান) ছিল ৪২৯৷ বেলা ৩টার সময় ছিল ৪৩০৷ একইভাবে তার আগের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গড়ে এই  সূচক  ৪০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল৷ ফলে উত্তর কলকাতার  বিস্তীর্ন অঞ্চলে  দূষিত বাতাস  ঢুকেছে  শহর বাসীর  শরীরে৷ আবার ঐ দিনই (৬ই ডিসেম্বর,২০১৮) শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে দূষণসূচক যন্ত্রেও ধরা পড়েছে বেহাল অবস্থা৷ বাতাসে ভেসে থাকা সেই ধূলিকণাগুলিকেই পি.এম. ২.৫ বলা হয় যেগুলির ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটার৷ এত ছোট বলেই  আমাদের  শরীরের কোষগুলিতে ঢুকে  যেতে,  পারে৷ তার প্রভাবে আমরা  শারীরিক দুর্বল হয়ে যেতে পারি৷ বিভিন্ন  রোগে  আক্রান্ত  হওয়ার  সম্ভাবনাও বেড়ে যায়৷  শিশু ও প্রবীন ব্যষ্টিরা (যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) বেশী অসুস্থ  হ’য়ে পড়েন৷ চর্মরোগ ও ফুসফুসের  সমস্যা দেখা দেয়৷

বাতাসে পি.এম ২.৫-এর পরিমান প্রতি ঘনমিটারে ৫০থেকে  ৬০ থাকলে ভাল  বলা  হয়৷ এর পরিমান  ১০০ হ’য়ে  গেলেও গ্রহনযোগ্য থাকে৷  কিন্তু  তা ২০০ পেড়িয়ে  গেলেই বিপজ্জনক  হ’য়ে উঠতে  শুরু করে৷

বাতাসের  দূষণ পরিমাপ করার জন্য আমাদের  দেশে ২০১৫ সাল থেকে National Air quality index চালু হলে Air quality index-এর সমীক্ষা অনুযায়ী দিল্লী সবচেয়ে দূষণযুক্ত শহর৷ ২০১৭ সালে দিল্লীর AQI-এর সর্র্বেচ্চ  পরিমান  ছিল ৪৬৯৷ সতর্কতামূলক  পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরে যদিও AQI  কিছুটা  কমেছিল, কিন্তু  এখনও দিল্লি ভারতের  কলকাতা শহর  দূষণের  দিক থেকে এখন আর পিছিয়ে  নেই৷ বিশেষ করে শীতকালে  কোন কোন দিন  কলকাতার Air quality index দিল্লিকেও অতিক্রম করে যাচ্ছে৷

অথচ  এই ভয়ঙ্কর  পরিস্থিতির  দিকে প্রশাসন বা পরিবেশবিদদের  কারোরই তেমন  কোন নজর নেই৷ কলকাতা শহরের গাড়ীর  ধোঁয়া আর ধূলোর  সংমিশ্রনে ক্রমবর্ধমান  এই দূষণের  মাত্রাকে  রোখার বিষয়  যদি  এখনই সচেতনতা তৈরী  না হয়  বা সদর্থক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ  না করা হয় তবে অদূর ভবিষ্যতেই  তিলোত্তমা  কলকাতার জন্য ভয়ানক  খারাপ  দিন অপেক্ষা করছে৷