ভবিষ্যতে অসমে বাঙালীদের কর্মসংস্থানের জন্য চাতক পাখীর মতন তাকিয়ে থাকতে হবে ভারতের বহিরাগত অসমীয়াদের জন্য৷ অসমে বাঙালীরা বসবাস করে দুইটি নদী উপতক্যায়, ব্রহ্মপুত্র ভেলি ও বরাক ভেলি ধরে৷ সমগ্র অসম জুড়ে কয়েক দশক ধরে বহিরাগত অসমীয়ারা প্রথমে ব্রিটিশ পরবর্তীতে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বঙাল খেদাও নামে অযৌক্তিক, অমানবিক বাঙালী বিদ্বেষী আন্দোলনে কত বাঙালীর প্রাণ নিয়েছে, কত মা বোনদের মান সন্মান ভুলুন্ঠিত করেছে অসম সরকারের মদতে ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নীরব সাক্ষী রেখে তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না৷ কয়েক পুরুষের জন্মভিটা থাকার পরেও বহু বাঙালী উদ্বাস্তু হয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছে৷
কংগ্রেস,অগপ, সিপিএম ও বিজেপি সরকার রাষ্ট্রশক্তির অব্যবহার করে এন.আর.সি, ডি ভোটার, বাঙালী বিদ্বেষী আইনের যাঁতাকলে ফেলে বাঙালী জাতিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরে পচিয়ে মারছে৷ ব্রহ্মপুত্রের ধারে বসবাসকারি বাঙালীর বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটের মূল কারণ হলো বাঙালীর মেধা, সৃজনশীলতা, বৈপ্লবিক চেতনা, সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা তৎসহ সকলকে আপন করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা৷ তার সাথে যুক্ত হয়েছে তাঁরা সকলেই বাংলা ভাষী বাঙালী৷ অথচ সাড়ে পাঁচশত বছর আগে এই অসমীয়ারা খাদ্যের অভাবে বাঙালীস্তানে প্রবেশ করে ছিলো৷ রাজনৈতিক নেতারা সে ব্রিটিশ বা হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী হোক সকলেই জানে বাঙালী যেকোনো মূহূর্তে ব্যাঘ্রদর্পে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে৷ তাই তারা যাতে কোনমতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য বিগত সরকার বাঙলার অঞ্চল ভাগ করে অসম প্রদেশের জন্ম দিয়েছিল৷ এই অসমীয়ারা ব্রহ্মপুত্র উপতক্যায় চিরকাল সংখ্যা লঘু ছিলো৷ দেশ ভাগের পর থেকে বাঙালীদের বিভিন্নভাবে নাগরিকত্ব হরণ করা হয়৷ এমনকি বাঙলার রাঢ় অঞ্চলের বাঙালীরা কয়েক শতক ধরে চা বাগানে বসবাস করা সত্ত্বেও ভোটার লিষ্ট থেকে বাদ দিয়েছে শুধুমাত্র অসমীয়ারা যাতে সংখ্যা গুরুতে পরিণত হয় সেই কারণে৷ আজও একবিংশ শতাব্দীতেও সে অত্যাচার হয়েই চলেছে৷ এন.আর.সির নামে কয়েক লক্ষ বাঙালী আজ নাগরিকত্ব হীন৷ আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বলেছেন গত ভোটার লিষ্টে যাদের নাম ছিলো তারাও ভোটাধিকার পাবে৷ বাঙালীদের এতে আত্মহারা হওয়ার কিছুই নেই, বিজেপি সরকারের এটা একটা টোপ মাত্র৷ ভোট পেরিয়ে গেলেই যেই সরকারে আসুক না কেন তাঁরা তাদের পুরনো রূপে ফিরে আসবেই৷ বাঙালী জাতিকে বাঁচতে ও বাঁচাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই দরকার৷ কয়েক দশক ধরে ‘‘আমরা বাঙালী’’ দল এক নাগাড়ে বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে আন্দোলন করে চলেছে৷ আমরা বাঙালী দলের মূল শক্তি হলো মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন যাকে বলা হয় ‘প্রাউট’৷ প্রাউটের মূল লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদে প্রতিষ্ঠা৷ তৎসহ প্রাউটের মূল শ্লোগান হলো রাজনৈতিক গনতন্ত্রের ধোঁকাবাজ নয়, চাই অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো৷ সর্বজন হীতায় সর্বজন সুখায় বা কল্যাণায়৷ প্রাউট চায় সকলের শারীরিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ৷ আজ বাঙালীর মহা সংকটের মূল কারণ হলো ঐক্যের অভাব, নীতিবাদের অভাব৷
অপরদিকে বরাক ভেলিতে অসমীয়াদের নামমাত্র সংখ্যায় খোঁজ পাওয়া যায়৷ তাঁরা মূলতঃ কর্মসংস্থানের তাগিদে এই অঞ্চলে বসতিস্থল তৈরী করলেও তারা বাঙালীদের ভাষা ও সাংসৃকতির সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবেই যুক্ত হয়ে ছিলো৷ সমগ্র অসমে বাঙালীরা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ছে রাজনৈতিক দাদাগিরির জন্য৷ বাঙালী যুবক ও যুবতীরা সরকারের নানারকমের সুযোগ সুবিধা ও কর্মসংস্থানে যে পিছিয়ে পড়ছে তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ বরাক উপতক্যা৷ সম্প্রতি অসম সরকারের গ্রাম ও পঞ্চায়েত বিভাগে ৭৮টি পদে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে৷ দুঃখের বিষয় বরাক উপতক্যায় একজন বাঙালীও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি৷ অসম সরকার এটাই প্রমান করতে চাইছে যে বাঙালীদের মেধা ও শিক্ষিতের হার নিম্নমুখী, তাই তাঁরা উপযুক্ত হতে পারেনি৷ এটা বাঙালীদের জন্য অপমান জনক৷ অসমের বিজেপি সরকার ওই পোস্টে অসমীয়া ভাষীদের নিয়োগ করে প্রমাণ করলেন তাঁরা কতটা বাঙালী বিদ্বেষী৷ অথচ পোষ্টগুলি ছিলো স্থানীয়দের জন্য৷ সম্প্রতি তৃতীয়/চতুর্থ গ্রেডের চাকুরীর ক্ষেত্রেও বরাক উপতক্যায় অসমীয়াদের নিয়োগ করা হয়েছে৷ সম্প্রতি শিক্ষা দপ্তর ৫০০০ টেট শিক্ষক নিয়োগ করা হবে ঠিক হয়ে ছিলো তাতেও বরাক উপতক্যা থেকে যোগ্য হয়েছেন মাত্র ২৫ জন৷ কথা ছিলো তিনটি জেলাতে ৮০০ স্থানীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হবে৷ নার্স নিয়োগে বরাকে ৩০০ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জন, কৃষি বিভাগে ১৬৭টি পদের মধ্যে একজনও বরাকের নেই৷ অথচ এইপদগুলো স্থানীয় মানুষদের পাওয়ার কথা ছিলো৷ বরাকের বাঙালী যুবক ও যুবতীদের আর্থিক কথা না ভেবে বহিরাগত অসমীয়াদের দিয়ে বরাক উপতক্যায় দাদাগিরি বা খবরদারি করতে পাঠানো হয়েছে৷ আমরা লক্ষ্য করছি গত পাঁচ বছরে বিজেপি সরকার বরাকের বাঙালীদের উপর সামাজিক অর্থনৈতিকভাবে চরম বৈষম্য, বঞ্চনা ও প্রতারণা করে চলেছে যাতে বাঙালীর আর্থিক মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে৷ ব্রহ্মপুত্র ভেলি কেন বলবো, বরাক ভেলিতেও কিছু বাঙালী চাটুকার ও মীরজাফরদের জন্যে অসমে বাঙালীর এই আর্থিক ও মানসিক শোষণ ও শাসনে বাঙালী জাতিগতভাবে অধোগতি ও অস্থির সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছে৷
- Log in to post comments