বহু ভাষা কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিতে বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষ একের নির্বুদ্ধিতায় ভেঙে পড়তে পারে

লেখক
প্রবীর সরকার

ভারতবর্ষ কোন একটি ভাষাভিত্তিক কোন একটি ধর্মমতের জনগোষ্ঠীর দেশ নয়৷ নানা ভাষাভাষি কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির বৈচিত্রময় সমাবেশ ভারতবর্ষে৷ এই বৈচিত্রের বৈশিষ্ট্যকে ধবংস করে একের দোহাই দিয়ে কোন একটি ভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কেউ যদি ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায় তার পরিণতি ভালো হবে না৷ চোখের সামনেই দৃষ্টান্ত আছে বাঙলাদেশ৷ একই ধর্মমতের মানুষ হয়েও শুধুমাত্র ভাষা কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষা করতে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরী করেছে৷ ইয়ূরোপ ও আরব দেশগুলির দিকে তাকালেও দেখা যাবে একই ভাষা বা ধর্মমতের জনগোষ্ঠীগুলো একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে নি৷ আজ ভারতবর্ষের কর্ণধাররা যদি এর থেকে শিক্ষা না নেয় তবে ভারতবর্ষও একদিন হয়তো সাবেক সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের পরিণতির দিকে যাবে৷ আমেরিকার পর পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিধর রাষ্ট্রটাই মানচিত্র থেকে মুছে গেল৷

শ্রীখাঁ বলেন--- ভারতবর্ষের ভৌগোলিক-সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে অজ্ঞ রাষ্ট্র নেতারাই এক দেশ এক ভোটের, এক ভাষার চিন্তা করে৷ এদের নির্বুদ্ধিতার কারণে ভারতবর্ষ ভেঙে পড়তে পারে৷ আসলে এই অযোগ্য নেতারা নিজেদের অযোগ্যতা, অক্ষমতা ঢাকতে নির্বুদ্ধিতার পথে পা বাড়াচ্ছে প্রকৃত সমস্যার সমাধানের দিকে মন না দিয়ে৷ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান ভারতবর্ষের সমস্যা নয়৷ ভারতবর্ষের মূল সমস্যা অর্থনৈতিক বৈষম্য৷ স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও দেশের অর্দ্ধেকের বেশী মানুষ ঠিক মতো অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করতে পারে না৷ এর কারণ সম্পদের অভাব নয়, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ও রাষ্ট্রের পরিচালকের সদ্‌ইচ্ছার অভাব৷ এই দারিদ্রতার সুযোগ নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে৷ এক দেশ, এক ভাষা, এক নির্বাচন এইরকম একটি বিভ্রান্তমূলক চিন্তাধারা৷

ভারতবর্ষের সংহতি সুদৃঢ় করতে হলে রাষ্ট্র নেতাদের প্রথম কর্তব্য এই আর্থিক বৈষম্য দূর করে প্রতিটি মানুষের হাতে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার প্রাথমিক প্রয়োজনগুলি ক্রয় করার ক্ষমতা দিতে হবে৷ এর জন্য প্রয়োজন পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে প্রাউটের পথে বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ কিন্তু ভারতবষে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সমস্যা নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনাই করে না৷ এই যে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে--- নির্বাচনী প্রচারে নেতাদের ভাষণে জনগণের সমস্যা সমাধানের কোন বার্র্ত নেই৷ ভাষণে শুধু পরস্পরের প্রতি অশালীন ভাষায় খিস্তি খেউড়৷ আজ ভারতবর্ষকে নূতন করে গড়তে হলে এই নিকৃষ্ট রাজনীতির বৃত্ত থেকে জনগণকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ নূতন পথের সন্ধান করতে হবে৷