পূর্ব প্রকাশিতের পর
সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ধিক্কারও ওদের হিসেবে গোলমাল করে দিয়েছিল---
‘‘পাশেই থানা৷ তারা গুজবের কথা জানত, অথচ তারা প্রস্তুত ছিল না৷ নির্বিকার ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রীই পুলিশ মন্ত্রী৷ যেমন তিনি বিদ্যুৎমন্ত্রীও৷ আর কতদিক দিয়ে আমাদের জীবনে অন্ধকার নামাবেন, মুখ্যমন্ত্রী মশাই ’’? (সম্পাদকীয় আজকাল)৷
‘‘যাঁর নামে বিজন সেতুর নাম তিনি না ছিলেন বিপ্লবী, না ছিলেন মন্ত্রী, তবু মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন৷ আপনাদের নিস্ক্রিয়তায় সেই সেতু আজ কলঙ্কিত৷ ধিক্ ধিক্ ধিক্৷’’ (সম্পাদকীয় আজকাল)৷
''Within a few hours of the incidents Mr. Jyoti Basu left Calcutta presumably on an election tour—making an airport statement seemed totally inadequate, almost perfunctory. A statement by the Left Front Chairman did not so much greater awareness of what would an adequate response. On Saturday he complained about a 'motivated campaign' over the incidents, but neither the state administration nor the political leadership had done much to forestall or counter one.''
(The Statesman : Editorial, May 3)
‘‘পুলিশের দিক থেকে এ ব্যাপারে যে গাফিলতি দেখানো হয়ে তার সমর্থনেও কোনও সঙ্গত কারণ মেলে না৷.... কারণ পুলিশের হস্তক্ষেপ যথাসময়ে ঘটলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত৷ ’’ (সম্পাদকীয়, যুগান্তর৷
Rumours of child-lifting by Ananda Margis were wide-spread in the Kasba area preceding the Bijan setu tragedy, though without any foundation. But neither the local police nor the politicians took any effective measures to scotch these rumours to allay public misgivings.(The Amrita Bazar Patrika Editiorial, 3rd May).
‘আজকাল পত্রিকা’য় ‘প্রিয় সম্পাদক’ কলমে দুই অধ্যাপকের ধিক্কার প্রকাশিত হয়েছে ৭ই মে’তে ‘‘সৎ বুদ্ধিজীবি, বিবেকবান মানুষ যাঁরা, রাজনীতি করেন বা রাজনীতির উর্দ্ধে--- তাঁদের বলিষ্ঠ নৈতিক প্রতিবাদ ধিকৃত হোক এই জঙ্গলের রাজত্বের নারকীয় পরিবেশের বিরুদ্ধে৷ মানবতার বাইরে কেউ নয়, কিছু নয়, সেই মানবতা বোধ থেকে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাবার আগে একবার কিছু মিলিত কন্ঠ সোচ্চার তর্জনী তুলে বলা যাক, কলকাতা রাজা, আজ তোর পরণে কিছু নেই৷ তুই উলঙ্গ৷’’ --- (ডাঃ ক্ষেত্রপ্রসাদ সেন শর্মা, অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
‘‘জ্যোতিবাবু আর যাই করুন না কেন, পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে তিনি যেন আর বড়াই না করেন৷ প্রমোদ বাবুকেও বলি, লোক খেপান যেমন একটা আর্ট, লোক সামলানোও তেমন একটা আর্ট৷ প্রমোদবাবু প্রথমটা ভালভাবেই জানেন, দ্বিতীয়টা তিনি কবে শিখবেন?’’ ---(অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়)
এ হত্যাকান্ড যে সি.পি.এম. করেছে তা প্রমাণ করতে আর কোন তথ্য পেশের প্রয়োজন আছে কি?
(৫) কেন আনন্দমার্গীরা কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী তুলেছে?
বিশেষ বিশেষ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহল থেকে প্রশ্ণ তোলা হচ্ছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারই বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন বসিয়েছে সেখানে আনন্দমার্গীরা কেন আবার কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের দাবী তুলেছে? প্রশ্ণের উত্থাপকদের মনে করিয়ে দিতে হয় যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা করেছে ১২ই মে আর আনন্দমার্গের পক্ষ থেকে তার ৯ দিন আগেই ৩রা মে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি কোন তদন্ত কমিশন বসায় তাহলে আনন্দমার্গ সেই কমিশনের সামনে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করবে না অর্র্থৎ আনন্দমার্গ সেই কমিশনের সাথে কোন রকম সহযোগিতা করবে না৷
আনন্দমার্গ দুটি কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়োজিত তদন্ত কমিশন মানে না--- (১) নীতিগত কারণ এবং (২) ঐতিহাসিক কারণ৷
নীতিগত কারণ হচ্ছে এই যে যেহেতু সি.পি.এমের কার্য-কলাপ, প্রমোদ দাসগুপ্ত ও জ্যোতিবাবুর উক্তি সন্দেহের উর্দ্ধে নয়, সেহেতু তাদের পরিচালিত সরকারের দ্বারা, অভিযুক্তদের দ্বারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের নিয়োগ কি তামাসায় পর্যবসিত হবে না?
আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক এই মত সমর্থন করে ৪ঠা মে লিখলেন--- ‘‘নিহতদের পক্ষ থেকে যখন এই ঘটনার জন্য সি.পি. এমকে দায়ী করা হইয়াছে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ও একাধিক বিরোধী শক্তি যখন অভিযোগ তুলিয়াছেন যে ঘটনার সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার জড়িত তখন কি এই সম্পর্কে বামফ্রন্ট সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত যে কোনও তদন্ত অর্থহীন নহে? অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কি বিচারাসনে বসা শোভা পায়? তাঁদের কোন তদন্তকে কি সাধারণ মানুষ নিরপেক্ষ তদন্ত বলিয়া মানিয়া লইতে পারে?’’
আনন্দমার্গ ঐতিহাসিক কারণেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়োজিত তদন্ত কমিশন মানেন না৷ কারণ প্রথম যুক্তফ্রন্টের আমলে ১৯৬৭ সালে পুরুলিয়ার বাগলতায় আনন্দনগরে আনন্দমার্গের আশ্রমে ৫ জন সন্ন্যাসীকে কম্যুনিষ্টদের উস্কানিতেই কুপিয়ে হত্যা করার পর সি.পি.এম নিয়ন্ত্রিত তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটা তদন্ত কমিশন বসিয়েছিল কিন্তু তার একটি বৈঠকের পরই সেই তদন্ত কমিশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ স্থানীয় কম্যুনিষ্ট চেলা চামুণ্ডাদের রক্ষা করার মহান (?) উদ্দেশ্যেই সেই তদন্ত কমিশন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ অথচ শেষ পর্যন্ত আইনের লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে চেলাচামুণ্ডাদের ৮ জনের যাবজ্জজীবন সহ ১৮ জনের কারাগারে যেতে হয়৷ আর প্রমোদ দাশগুপ্ত জনগণের স্মৃতিশক্তিকে ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে ৩০ এপ্রিলের কসবা হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে বলতে থাকেন, পুরুলিয়ার আদিবাসীরাও আনন্দমার্গের সন্ন্যাসীদের ওপর ক্ষেপে গিয়ে ৬৭ সালে হত্যা করেছিল৷ ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বি.ডি.ও এবং প্রমোদ দাশগুপ্ত ‘আদিবাসী’ বললেন?
ইতিহাসের শিক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বসান তদন্ত কমিশন একটা ফাঁদ, এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আনন্দমার্গের সাক্ষ্যপ্রমাণ চিরকালের জন্য হিমঘরে পাঠান৷
এই কমিশন যে ‘টালবাহানার তদন্ত কমিশন’ তাও প্রমাণিত হয়ে গেছে৷ যখন এই তদন্ত কমিশন বসানো হয়েছিল,তখন বলা হয়েছিল দু’মাসের মধ্যে এই কমিশনের কাজ শেষ করতে হবে৷ দু’মাসের মাথায় সবাই পত্রিকা মারফৎ জানতে পারলো যে শেষ তো দূরের কথা, যে তদন্ত কমিশনে ১২ জন কর্মীর প্রয়োজন , তার মধ্যে ৭ জন কর্মীকে ২ মাসের মধ্যে নিয়োগই করা হয়নি৷ কাজেই কমিশনের কাজ শেষ করার সময় আরও ৬ মাস পেছিয়ে ৮২ থেকে ৮৩তে ঠেলে দেওয়া হল৷
‘যুগান্তর’ পত্রিকার সম্পাদকও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তদন্ত কমিশন সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে ৯ই মে ‘রবিবারের কলম’ এ লিখেছেন---‘‘তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া এক জিনিস৷ আর রায় প্রকাশ আর এক জিনিস৷’’
জর্জ ফার্ণাণ্ডেজ, পিলুমোদী ও চরণ সিং এর মক রাজনৈতিক নেতারাও কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের দাবীকে সমর্থন করেছেন৷ কোলকাতা হাইকোর্টের ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি ও এম.পি শঙ্করপ্রসাদ মিত্র, প্রখ্যাত আইনজীবি রামজেটমালানী,নাগপুর হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশনের সভাপতি আর.এস.চৌহান ও অল ইণ্ডিয়া ফ্রিডম ফাইটার, এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারী জি.এস. চৌহাান, ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান ইমাম আব্দুল বোখারী সহ শত শত বুদ্ধিজীবি ও সমাজ জীবনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও এই হত্যাকাণ্ডের কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবীকে সমর্থন করেছেন৷
অপরদিকে সি.পি.এম মহল থেকে বলা হচ্ছে তদন্ত কমিশন নিয়োগের অধিকার রাজ্যের--- কেন্দ্রের নয়৷ আনন্দমার্গের বক্তব্য এই যে, অধিকার রাজ্যের ঠিকই কিন্তু সে অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের ক্ষমতা যে কেন্দ্রের আছে তা ‘স্পিরিট কেলেঙ্কারীর’ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রায়েই প্রমাণিত হয়ে গেছে৷ তাই প্রশ্ণ--- স্পিরিট কেলেঙ্কারী থেকে এতগুলো মানুষ খুনের ঘটনা কম গুরুত্বপূর্ণ হয় কোন যুক্তিতে?
যেখানে আমাদের দেশে স্পিরিট কেলেঙ্কারী নিয়ে কেন্দ্র নিয়োজিত তদন্ত কমিশন বসতে পারে, সেক্ষেত্রে ১৭জন সর্বত্যাগীর মৃত্যুতে কী কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিশন বসতে পারে না?
- Log in to post comments