মানব মনের একটা চিরন্তন প্রশ্ন হচ্ছে: তুমি কোত্থেকে এসেছ?আর তুমি যখন এসেছ তখন অবশ্যই তুমি কোন একটি বিশেষ স্থান থেকে এসেছ। তাই কোত্থেকে এসেছো...... কোথায় যাবে..... কীই বা করতে হবে? আর এই সামুহিক তথা বৈয়ষ্টিক সত্তা গুলি বা কোত্থেকে আসে?তোমরা জানো তো, এই বিশ্বের কোন কিছুই বিনাশ শীল নয়। এ জগতের সমস্ত কিছুই অবিনাশী। কোন
কিছুই একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে না। যাকে ধ্বংস বলে লোকে জানে, ধ্বংস তা নয়---- আসলে তা একটি রূপান্তরণ----কোন সত্তার এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন। পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটি যখন পঁচিশ বছরের যুবকে পরিণত হয় তখন তুমি সেই পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুকে আর দেখনা। কিন্তু সেই ছোট্ট শিশুটির কি মৃত্যু হয় অথবা সে কি শেষ হয়ে যায়?---- না। সে তখনো পঁচিশ বছরের যুবকটির মধ্যেই বেঁচে থাকে---- নোতুন রূপে, পরিবর্তিত রূপে। তাহলে দেখছি এই বিশ্বে কোন কিছুই ধ্বংস হয় না ও কোন কিছুই 'কিছু না' থেকে আসে না, সবকিছুই 'কোন কিছু' থেকে আসে।
এই যে মানব জগৎ, জীবজগৎ, উদ্ভিদজগৎ----সমস্ত কিছুই এসেছে এক বিশেষ উৎস থেকে। সেই বিশেষ উৎস হচ্ছেন পরমপুরুষ, চরম সত্তা তথা পরমপিতা যাঁর সন্তান সকলেই। তিনি হলেন চরম সৃষ্টিকর্তা, পরম পিতা যিনি সব কিছুই সৃষ্টি করেন। ব্যষ্টিগত মানবজীবন বা সমষ্টিগত মানবজীবন উভয়েরই একই উৎস, একই জন্মদাতা---- পরমপুরুষ হচ্ছেন সেই জন্মদাতা...... বিশ্বপিতা।
এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে অর্থাৎ প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে---- মানুষ কোথায় থাকে?কোন কিছুকে ধারণ করতে গেলে অবশ্যই আধার দরকার। তোমরা এই যে এথেন্স শহরে রয়েছ, এই এথেন্স শহরটা হ'ল তোমাদের আধার। আবার এই এথেন্স শহরটা রয়ে গেছে গ্রীস দেশটার মধ্যে অর্থাৎ শহরটির আধার হচ্ছে এই গ্রীস দেশটা। আবার এই গ্রীস দেশটা আধৃত হয়ে আছে এই পৃথিবী নামক গ্রহের দ্বারা। এই পৃথিবী গ্রহটাও আবার আধৃত রয়েছে সৌরজগতের মধ্যে---- সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য উপগ্রহ সমন্বিত সৌরজগতের দ্বারা। আবার এই সৌরজগৎ আধারিত হয়ে আছে বা আশ্রিত হয়ে আছে পরমপুরুষ অর্থাৎ চরম সত্তার মাঝে। সুতরাং মানুষ জাতি ও অন্যান্য সকল সত্তাই এসেছে পরমপুরুষ থেকে, রয়েছেও পরমপুরুষের মাঝে ও শেষ পর্যন্ত এই পরিদৃশ্যমান জগৎ ত্যাগ করে চলে যাবে। এই কথা মানুষের জগৎ, জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যা আসে তা চলে যায়,
"য আগচ্ছতি স গচ্ছতি"----যা এসেছে তা চলে যাবে। কেউই চিরকালের জন্যে এই জগতে থাকবে না, কেন না গতিই হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূল তত্ত্ব।
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছুই চলে চলেছে। সেই সঙ্গে সমগ্র পৃথিবীও চলে চলেছে। কোন কিছুই দাঁড়িয়ে নেই। সব কিছুকে চলতে হবেই। তাই এই জগতে যারা রয়েছে তাদেরও এই চলমান জগতের সঙ্গে চলতে হবে। প্রশ্ন হ'ল তারা যাবে কোথায়? তাদের কীই বা লক্ষ্য? তাদের সেই পরমপুরুষেই ফিরে যেতে হবে যেখান থেকে তারা একদিন এসেছিল। অতএব পরমপুরুষ হচ্ছেন সকলের প্রারম্ভিক স্তর, উৎস বিন্দু ও শেষ পর্যন্ত তিনিই হচ্ছেন সকলের শেষ পরিণতি। তাই সমস্ত মানুষের মধ্যে, সমস্ত সত্তার মধ্যেই একটা সহজাত ভাতৃত্বের বন্ধন রয়েছে।
তোমরা সবাই আধ্যাত্মিক সাধক, তোমরা সবাই ভক্ত, তোমরা সকলেই সেই পরম স্রষ্টার সঙ্গে মিলেমিশে এক হতে চলেছ। মানবজাতির এই সহজাত বন্ধনকে তোমাদের মনে রাখা উচিত। তোমরা সবাই একে অপরকে যত বেশি পারো সাহায্য করার চেষ্টা কর কেননা এটাই বিধাতার ইচ্ছা। যতদূর সম্ভব সকলেই পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে চলো। যদি বিশ্বভাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে এইভাবে কল্যাণের পথে চলতে থাকো তাহলে জয় তোমাদের সুনিশ্চিত। পরমপুরুষের আশীর্বাদ সবসময়েই তোমাদের সঙ্গে রয়েছে।
(এথেন্স, ১১-৯-৭৯)