বিশ্ব প্রেম

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

এ বিশ্বের সামূহিক সুখই আমার সুখ, সামূহিক দৈন্যই আমার দৈন্য  সামূহিক হাসিই আমার সরসতা, সামূহিক ব্যপ্তিই  আমার বিশালতা, সামূহিক প্রীতিই আমার আত্মীয়তা, সামূহিক কল্যাণই আমার জীবনব্রত৷ এ বিশ্বের শ্রমজীবী মজুর, কর্ষক, দুঃসাহসী তেজস্বী ক্ষত্রিয়,উন্নতধী বুদ্ধিজীবী বিপ্র, বিষয়জীবী বৈশ্য, সবার শরীরেই বইছে একই রক্তধারা, সবার অন্তরেই একই মর্মবেদনা, অতৃপ্তির বেদনায় সবাই ভারাক্রান্ত, অপার ভালোবাসার স্নেহ মাধুর্যের পরশ সকলেরই কাম্য৷

ওঁদের অন্তর্দহন, দুঃখবেদন দূরীকরনার্থেই তো আমাদের  এ জীবন, আমি কি তা অস্বীকার করতে পারি? ওদের সেবাশুশ্রুষার জন্যেই তো এ জীবন উৎসর্গীকৃত --- সে দায়-দায়িত্ব থেকে নিজেকে  কি দূরে সরিয়ে রাখতে পারি? ওঁদের জাগতিক ব্যর্থতা,  মনের মলিনতা দূর করাইতো আমাদের জীবনব্রত৷ সভ্যতার উষালগ্ণে  সত্যশিবসুন্দরের  কর্মনৈপুণ্যে ওঁদের জীবন রাঙিয়ে দেওয়াই তো আমাদের একমাত্র কর্তব্য৷  ওঁদের মুখমন্ডলে পরিতৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে তোলাই তো আমাদের ধর্ম৷

সবাইকার সার্বিক বিকাশে চরিতার্থ হবে এ জীবন৷ নিঃস্ব কেহ নয়, সবাই পরম সুন্দরের অভিব্যক্তি৷ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলাতেই এ জীবনের সার্থকতা, সবার দৃষ্টিকোণ বদলে আত্মনির্ভরশীল করে তোলাতেই জাগতিক উন্নয়ন, সবাইকার মতি গতি পূর্ণত্বের পথে পরিচালনা করাই  তো সামাজিক প্রগতি৷ পরমসুন্দরের দোলায় দুলিত হওয়াতেই তো জীবন মাধূর্য৷ তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা কী যায়? মোহন মুরলীধর প্রভাত সঙ্গীতের ভাবতরঙ্গে যে তান তিনি তুলেছেন, তাকে কি অগ্রাহ্য করা যায়?

তিনি বজ্রের হুঙ্কারে, সমুদ্রের গর্জনে, নীলিমার বিশালতায়, ও অরুণ-রাঙ্গা সূর্যকিরনে, রূপালী রাতের চাঁদের জ্যোৎস্নায়, স্নিগ্দ শীতল সমীরণে, মৌন মহান পর্বতশৃঙ্গের ধবলতায়, যুগ যুগান্তরে  তপস্যালদ্ধ তাপসের নীরব ভাষায় কত ভাবে আমাদের  ডাকছেন --- তা থেকে দূরে থাকা কি যায়? সবাইকার ভাগ্য যে একই সূত্রে গ্রথিত৷  তাঁর ছন্দে ছন্দায়িত হওয়াই জীবন সাধনা৷ তার ইচ্ছানুসারে চলাতেই মেলে পরমাপ্রাপ্তি৷ আকাশ তারা, গ্রহ, নক্ষত্র, চর-অচর তাঁকে ঘিরে  সবই আবর্তিত,নৃত্যরত৷ মোহন মেলার সে রাসলীলা মাধুর্য উপভোগ করাতেই মেলে সর্বস্ব৷

পরম করুণাময় বিশ্বপিতা অপার স্নেহের হাতছানিতে সবাইকে ডাকছেন---আয়, আয়  আমার কোলে আয়৷ তোদের সুখ শান্তি সেবা-শুশ্রুষা যার জন্যে তো আমার আবির্ভাব৷ তোদের দূঃখ দুর্দশা দূরীকরণার্থেই তো  এ মিশন৷ হৃদয়ে জাগিয়ে তোল পরমপুরুষের প্রতি ভালবাসা৷ আর সমস্ত মানুষ, পশুপাখী, তরুলতা---সবার মধ্যেই তো পরমপুরুষ বিরাজিত৷ তাই সবাইকে ভালবাস৷ সবাইকে সেবা করার ভাবনা নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে চল৷