বৃহৎ শিল্প গড়ে সর্বসাধারণের আর্থিক মুক্তি হবে না

লেখক
পত্রিকা প্রিতিনিধি

গত ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারী নিউটাউনে বিশ্ববাঙলা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ববাঙলা বাণিজ্য সম্মেলন৷ মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াসে সম্মেলনে শিল্পপতিদের চাঁদের হাট বসেছিল৷ উপস্থিত ছিলেন জে.এস.ডব্লিউ-র সজ্জন জিনদাল, আইটিসির চেয়্যারম্যান সঞ্জয় পুরী, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, মুকেশ আমবানী, হর্ষবধন আগরওয়াল ও আরও অনেক৷ মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দিয়ে অনেকেই বাঙলায় বৃহৎ শিল্প গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ আমবানী সহ অনেকে স্বীকার করছেন পশ্চিমবাঙলায় বিনিয়োগ করার এটাই সঠিক সময়৷

প্রবীন প্রাউটিষ্ট শ্রীপ্রভাত খাঁ বলেন পশ্চিমবঙ্গে শিল্প গড়তে মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, বৃহৎ শিল্প দিয়ে পশ্চিমবাঙলার পাহাড় প্রমাণ বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷ পুঁজিপতিরা শিল্প গড়তে আসে দান খয়রাতি করতে নয়, মুনাফা লুঠতে৷ যাদের লক্ষ্যই থাকবে কম বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা৷ আজকের অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ছোট বড় যে কোনো শিল্পে শিল্পপতিরা মানব সম্পদ অপেক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যবহার করবেন৷ ফলে বৃহৎ শিল্পে কিছু মেধাবী ছাত্রের চাকরী হতে পারে৷ কিন্তু রাজ্যে সার্বিক যে বেকারের চিত্র তার সমাধান সম্ভব নয়৷

মুখ্যমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত স্বাধীনতার অর্জনের সময় শিল্পে পশ্চিমবাঙলা গুজরাট মহারাষ্ট্র থেকেও অনেক এগিয়ে ছিল৷ শুধু শিল্পই নয়, শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই বাঙলা ছিল ভারতবর্ষের পথপ্রদর্শক৷ আজ স্বাধীনতার ৭৭বছরে সর্বক্ষেত্রে বাঙলার এই অবক্ষয় ও অধঃপতনের মুলে আছে স্বদেশী পুঁজিপতি গোষ্ঠী ও কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাদের সঙ্গত দিয়েছে পশ্চিমবাঙলার শাসকদলগুলি৷ আজ রাতারাতি তারা বাঙলার বন্ধু হয়ে যাবে না৷ বিশ্ব বাঙলা বাণিজ্য সম্মেলনে যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁরা সবাই শিল্প বান্ধব এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু সবাই বাঙলার বন্ধু নয়৷ তাদের লক্ষ্যই থাকবে বাঙলার সম্পদকে লুটে নিয়ে যাওয়া৷

প্রবীন প্রাউটিষ্ট শ্রী খাঁ বলেন---অর্থনীতির বিকাশ মানে কিছু বৃহৎ শিল্প ও কিছু মেধাবী বেকারের চাকরী নয়৷ প্রাউটের দৃষ্টিতে অর্থনীতিকে হতে হবে বাস্তবমুখী স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে৷ তাই আর্থিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ থাকবে স্থানীয় মানুষের হাতে৷ কিন্তু বহিরাগত পুঁজিপতিদের দিয়ে রাজ্যে বৃহৎ শিল্প গড়ার অর্থ বাঙলার সম্পদ বহিরাগত পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া৷

শ্রীখাঁ বলেন মুখ্যমন্ত্রীর উচিত রাজ্যে শিল্প গড়ার অভিমুখ পরিবর্তন করা৷ আর্থিক বিকাশের পরিকল্পনা নীচু স্তর থেকে অর্থাৎ ব্লকস্তর থেকে৷ স্থানীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি ব্লকেই কৃষিভিত্তিক কৃষি সহায়ক ও অকৃষি শিল্প গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ বাঙলায় খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ ও কৃষিজ সম্পদ এখনও যথেষ্ট পরিমানে আছে৷ এই সব সম্পদের ওপর ভিত্তি করে ব্লকে ব্লকে গড়ে তুলতে হবে কৃষিশিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প, অকৃষি শিল্প৷ এই শিল্পগুলির পরিচালনা যেমন থাকবে স্থানীয় মানুষের হাতে৷ এবং এই শিল্পগুলিতে বহিরাগতের কোনোরকম স্থান থাকবে না৷ অর্থনৈতিক ক্ষমতা স্থানীয় মানুষের হাতে থাকবেই ও ১০০ ভাগ স্থানীয় বেকারের চাকরী হবে৷ এ প্রসঙ্গে প্রাউট প্রবক্তার সন্তুলিত অর্থনীতি অনুসরণ করা উচিত৷ তিনি তাঁর সন্তুলিত অর্থনীতিতে স্থানীয়, কৃষিজ, বনজ ও খনিজ সম্পদের ওপর ব্লকে ব্লকে কিভাবে শিল্প গড়ে উঠবে তার সুস্পষ্ট পথ নির্দেশনা দিয়েছেন৷