ভারত সম্পদশালী দেশ অথচ ভারতের মানুষ গরিব

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

পূর্ব প্রকাশিতের পর,
শণ উৎপাদনেও ভারত পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য স্থানের অধিকারী৷ পৃথিবীর মোট শণের প্রায় ২৭ ভাগ উৎপাদন করে ভারত৷ রেশম উৎপাদনের পৃথিবীতে ভারতের স্থান দ্বিতীয়৷  প্রাকৃতিক রবার উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে  থাইল্যাণ্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া-র পরই ভারতের স্থান চতুর্থ৷
এরপর আসি তৈলবীজ প্রসঙ্গে৷ যেমন বাদাম৷ বাদামতেল রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়৷ বনস্পতি, সাবান ও কেশ তেল ও বাদামতেল থেকে হয়৷ তেল নিষ্কাশনের পর বাদামের খোল পশুখাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়৷ রাসায়নিক শিল্পেও চীনা বাদামের তেল ও ওষুধে কাজে লাগে৷ পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ চীনাবাদাম উৎপাদনকারী দেশ ভারত৷
নারকেল একটি অর্থকরী ফল৷ নারকেলের শাঁস থেকে  তেল নিষ্কাশন হয়৷ নারকেলের শাঁস একটি খাদ্যও বটে৷ রান্নায় নারকেল তেল ব্যবহৃত হয়৷ এছাড়া, সাবান, প্রসাধন সামগ্রী, বনস্পতি প্রস্তুত করতে নারকেল তেলের ব্যবহার হয়৷ নারকেলের ছোবড়া থেকে গদি, দড়ি, পাপোশ প্রভৃতি তৈরী করা হয়৷ নারকেলের খোল তো উৎকৃষ্ট পশু খাদ্য৷ ডাবের জল যে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর---তা কে না জানে৷ সমুদ্রতীরবর্ত্তী অধিবাসীদের নারকেল জীবিকা নির্বাহের উপায়৷ দক্ষিণ ভারতের উপকূলে প্রচুর নারকেল জন্মায়৷
তিসি তেলের ব্যবহার সাধারণতঃ শিল্পেই বেশি হয়৷ এই তেল একপ্রকার ড্রাইং অয়েল ৷ বার্ণিশ,রং, সাবান  অয়েল ক্লথ ইত্যাদি প্রস্তুত করতে এই তেল ব্যবহৃত হয়৷ এছাড়া তিসির খোল তো পশুরও খাদ্য৷ তিসি উৎপাদক দেশগুলির  মধ্যে আর্জেন্টিনা, কানাডার পরেই ভারতের স্থান৷
পিচ্ছিলকারী তেল হিসাবে আর প্রদীপ জ্বালতে রেড়ির তেল ব্যবহৃত হয়৷ সাবান, কেশ তেল, ওষুধ প্রভৃতিতে এই তেল থেকে প্রস্তুত হয়৷ তেল নিষ্কাশনের  পর রেড়ির খোল জমির সার হিসাবে কাজে লাগে৷ রেড়ি উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিলের পরেই ভারতের  স্থান৷
ভোজ্য তেল হিসাবে সরষের তেল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়৷ সরষের  খোল জমির উৎকৃষ্ট সার৷ সরষে উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান সর্বাগ্রে৷
প্রচুর প্রোটিনযুক্ত একটি সুষম খাদ্য হলো সয়াবীন৷ সয়াবীন থেকে রান্নার তেল, পুষ্টিকর দুধ আবার দুধ থেকে ছানা সন্দেশ, পনির ও দই প্রস্তুত হয়৷ সয়াবীনের  খোল যেমন পশুর খাদ্য তেমনি জমিরসারও বটে৷ তেল,  সাবান, বার্নিশ, কৃত্রিম রবার, প্লাস্টিকের জিনিস, ছাপার কালি, গ্লিসারিন ও নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য সয়াবীন তেল থেকে  প্রস্তুত হয়৷ উল্লেখযোগ্য সয়াবীন উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে ভারতেরও স্থান আছে৷ 
গবাদি পশু প্রতিপালনে ভারত পৃথিবীতে প্রথম স্থানের অধিকারী৷ পৃথিবীর মধ্যে ভারতেই গবাদি পশুর সংখ্যা সর্বাধিক৷ পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি ছাগল ভারতে পালন করা হয়৷
সম্পদ আরো আছে৷ ভারত একটি  খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দেশ৷ স্বাধীনতার পর বিরাট এই দেশের  এত দ্রুত শিল্পোন্নতির  মূল কারণ খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য৷
জ্বালানী খনিজের মধ্যে আছে--- কয়লা৷ কয়লা উৎপাদনে বর্তমানে পৃথিবীতে ভারতের স্থান তৃতীয়৷ 
বর্তমান সভ্যতার যুগে লৌহের ব্যবহার  সর্বাধিক৷ দেশের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে লৌহ ও ইস্পাত অপরিহার্য৷ ১৯৫০-৫১সালে  ভারতে লৌহ আকরিকের  উৎপাদনের পরিমান ছিল ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন৷ ১৯৯৪-৯৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫কোটি ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন৷
ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলনে ভারত পৃথিবীতে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে৷ ইস্পাত প্রস্তুত করতে এই সংকর ধাতুর প্রয়োজন৷
আর আছে বক্সাইট৷ অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান আকরিক হল বক্সাইট৷ তামা ও আছে৷ তবে ভারতে আকরিক তামার সঞ্চয় তেমন উল্লেখযোগ্য নয়৷ পৃথিবীর মোট উত্তোলনের শতকরা মাত্র ৩.৫ ভাগ তামা ভারতে পাওয়া যায়৷