ভারতের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ধনীর তোষণ আর গরিব শোষণেই সদাব্যস্ত!

লেখক
প্রভাত খাঁ

আজ ভারতের চিন্তাশীল সকল নিরপেক্ষ নাগরিককে ভাবতে হচ্ছে দেশ কোন পথে এগুচ্ছে৷ দেশের ভবিষ্যৎ-ই বা কী? এদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্যেই ছিল বিরাট পরিহাস! বিদেশী শাসকদের শোষণের হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় যাঁরা আত্মত্যাগ করেন তাঁদের মধ্যে কেউই চিন্তা করেন নি যে লক্ষ লক্ষ নিরীহ নরনারী, শিশুর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অকাল মৃত্যুর বিনিময়ে জন্মভূমিকে বিভক্ত করে এক অশুভ রাজনৈতিক স্বাধীনতা দেশের জনগণ লাভ করবে! যার অভিশাপ ৭০ বছর পরেও আমরা ভোগ করছি প্রতিদিন৷ মুসলীম লীগের শাসনকালে অখন্ড বাংলার অসহায় অমুসলমানরা পূর্ব বাংলার মাটিতে অকালে প্রাণ দেয়৷ আর ভিটে মাটি ছাড়া হয়ে দিনযাপনের গ্লানি বহন করছে৷ অসমের বাঙালী উদ্বাস্তুরা আজও নির্যাতিত হচ্ছে অমানবিক অত্যাচার ও  কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্ররোচনায় আর জঘন্য সংকীর্ণ দলীয় নীতি নির্র্ধরণে৷ ইউ এন ও-এর নির্দেশ  আছে কোন মানুষ পৃথিবীর কোন দেশেই অনাগরিক হয়ে থাকবে না৷ যাঁরা যে দেশে দীর্ঘদিন এক নাগাড়ে বাস করছেন তাঁদের সেই দেশের নাগরিকত্ব দিতে হবে যদি না তাঁরা অন্য কোন দেশের নাগরিক  হন৷ ভারতবর্ষ ভাগ করে যখন টুকরো টুকরো হয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করে তখনই দু’দেশের রাষ্ট্রনেতাগণ মেনে নেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের নাগরিকগণ যে দেশে যাবেন তাঁদের সেই দেশের নাগরিকত্ব বিনা দ্বিধায় দেওয়া হবে৷ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছেন কোথায় দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার? বিজেপির কাছে জনগণ অনেক আশা করেছিলেন কিন্তু নোতুন সরকার কোন প্রতিশ্রুতিই পালন করেছেন বলে চোখেই পড়ছে না৷ বাঙালী জনগোষ্ঠী-দিল্লী সরকারের দ্বারা আজও নির্যাতিত হয়েই চলেছেন বিশেষ করে পূর্বভারতের অসমে৷ এ কেমন গণতন্ত্র? এ কেমন গণতান্ত্রিক শাসন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের?

এদিকে ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচন হওয়ার প্রস্তুতি চলছে৷ প্রধানমন্ত্রী বেরুচ্ছেন তাঁর দলবল নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে প্রচার অভিযানে৷ পশ্চিমবাংলায় তিনি আসছেন কিছুদিনের মধ্যে৷ কিন্তু বাঙালী উদ্বাস্তুদের অসমের যে সমস্যা সেটা কবে সমাধান তিনি করবেন সেটার দিকে ভারতের বাঙালী জনগোষ্ঠী চেয়ে আছেন৷ এই সমস্যা শুধু কিছু অসহায় উদ্বাস্তুর নয় এই সমস্যা ভারতের বাঙালী জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক এক কঠিন সমস্যা৷

এই সমস্যা মানবিকতার সমস্যা, এই সমস্যা অখন্ড ভারতবর্ষের বাঙালী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সমস্যা, এই সমস্যা হলো স্বার্র্থন্বেষী রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতার মারাত্মক এক সমস্যা? এই সমস্যার সমাধান সমগ্র বাঙালী জনগোষ্ঠী দাবী করেন৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালী জনগোষ্ঠীর অবদান সবচেয়ে বেশী কিন্তু তাঁরাই আজ একনাগাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাকৃত অবহেলার শিকার হয়ে চলেছেন৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাঙালী জনগোষ্ঠী এই সমস্যার আশু সমাধান প্রার্থনা করেন৷ কংগ্রেস আমলে কংগ্রেস সরকার দলীয় স্বার্থে এই সমস্যা এড়িয়ে গেছেন, বর্তমানে বিজেপি সরকারও সমস্যা সমাধানে কালক্ষেপ করে চলেছেন৷ সংখ্যালঘু অসমীয়াদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে অগণতান্ত্রিকভাবে৷ যাঁরা গণতন্ত্রের ধারক বাহক বলে বড়াই করেন, তাঁদের এমন সংকীর্ণতা কি মানায়?

 বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতের মহিলা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা যে দিনের পর দিন অবহেলিত হচ্ছে সে বিষয়ে চিন্তিত৷ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত অনেক রাষ্ট্রের থেকে পিছিয়ে৷

বাজার দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র বা রাজ্যসরকার কোনোপক্ষই মোটেই সচেষ্ট নন! চরম বেকার সমস্যায় মানুষ দিশেহারা! ধনী আরো ধনী হচ্ছেন৷ গরিবের জীবন দিনের পর দিন অন্ধকারের পথে এগিয়ে চলেছে৷ রেশনিং ব্যবস্থা মোটেই গরিব মানুষের অভাব মেটাচ্ছে না কারণ সপ্তাহে মাত্র আধকেজি চাল ও সাড়ে সাতশ’ গমে দু’বেলা চলে না৷ তাই পূর্র্ণঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা আগের মতো ন্যায্যমূল্যে চালু হওয়া দরকার৷ দু’টাকা কেজি দরে চাল বর্ত্তমান যুগে পরিহাস মাত্র৷

মোদ্দাকথা বিজেপি কেন্দ্রে সরকার-এর দায়িত্বে এসেছেন কিন্তু আর্থিক দিক থেকে জনগণের কল্যাণে কোন কাজই হয়নি৷ সবচেয়ে দুঃখের কথা টাকার মূল্যমান কমছে দিনের পর দিন কিন্তু গরিব মধ্যবিত্ত ব্যাঙ্কে যে টাকা গচ্ছিত রেখে দিন গুজরান করেন সামান্য সুদের টাকায় সেটার পরিমাণ একেবারে হ্রাস পেয়ে চলেছে৷

অন্যদিকে ধনী যাঁরা ঋণ নেন তাঁদের উৎসাহ দিতে কোটি কোটি টাকা ঋণ মকুব হচ্ছে! এ কেমন গণতন্ত্র? এ কেমন দেশ-শাসন? অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি বলে বেড়াচ্ছেন যে তাঁরা নাকি গরিবের প্রতিনিধি! তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির আশুকর্ত্তব্য সাধারণ মানুষকে বাঁচার কিছুটা সুযোগ দান করা৷ বিরাট ভারতে যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলি শাসন চালাচ্ছেন সেটা একধরনের রাজনৈতিক মিথ্যাচারিতা ছাড়া কিছুই নয়৷ কোটি কোটি গরিব মানুষ গ্লানি বহন করে চলেছেন৷ ধনীর তোষণ ও গরিব শোষণ অবশ্যই বন্ধ হওয়া জরুরী৷