চাই সাংস্কৃতিক আন্দোলন

লেখক
মনোজ দেব

‘‘মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনও রয়েছে৷ সকল মানুষের জীবনেই রয়েছে কতকগুলি সাধারণ ও সহজাত বৃত্তি৷ স্বভাবগত ভাবে তাদের কেউ কেউ হয়তো মানুষকে বিকাশের পথে নিয়ে যায়, কেউ বা নিয়ে যায় অবনতির দিকে৷ যে বৃত্তি মানুষকে বিকাশের পথে নিয়ে যায় তাকে আমাদের উৎসাহ প্রদান করা উচিত৷ আর যে বৃত্তি মানুষকে অবনতির পথে নিয়ে যায় তাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ এই পৃথিবীর কোথাও কোথাও মানুষকে ব্যাপক নগ্ণ চিত্র ও অশ্লীল সাহিত্যের মাধ্যমে নৈতিক অধগতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ সাধারণ প্রতিবাদের মাধ্যমে একে প্রতিহত করা যাবে না যদি না পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সক্রিয়ভাবে কিছু করি৷ যদি বাস্তবোচিত আমরা কিছু করি তবে তা মানুষের মনে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করবে৷ একমাত্র তখনই একে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত তথা প্রতিহত করা সম্ভব হবে৷ সেটাই হবে আমাদের বাস্তবোচিত কর্মধারা৷ আমাদের নতুন সাহিত্য-শিল্প-দর্শন-সংগীত রচনা করতে হবে, উদ্ভাবন করতে হবে উন্নততর বাদ্যযন্ত্রের অর্থাৎ সমাজে এক নতুন সাংস্কৃতিক আলোড়ন তুলতে হবে৷’’

 (‘অভিমত’ অষ্টম খন্ড শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার)

না, আর জি কর কে অজুহাত করে আন্দোলনরত ধান্দাবাজ সুবিধাবাদী পলিটিক্যাল উন্মাদ গ্রস্তদের জন্যে এ লেখা নয়৷ সেদিন মধ্যরাতে ওই ক্ষমতালোভী উন্মাদ গ্রস্তদের মাঝেও অনেক সাধারন মানুষ ছিলেন যারা কোন রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও শুধুমাত্র ধর্ষণ কাণ্ডের বিরুদ্ধে ও ওই অসহায় পরিবারটির প্রতি সহানুভূতিতে রাস্তায় নেমেছিলেন৷ এ লেখা তাঁদের জন্য৷ সমাজকে যদি সত্যিই অপরাধ মুক্ত করতে হয়, আর জি কর কাণ্ডের মতো পাপকে প্রতিহত করতে হয় তবে এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের উপরের লেখাটি পড়ে চিন্তা করতে অনুরোধ করব৷

আমরা জানি বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ, দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ, শরৎচন্দ্রের পথের দাবী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিল৷ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বইগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিল৷ আনন্দমঠ উপন্যাসের বিখ্যাত সংগীতের একটি শব্দ ‘বন্দেমাতারাম’ দেশপ্রেমের মন্ত্র হয়ে উঠেছিল৷ বন্দেমাতরম মন্ত্র যদি হাজার হাজার দেশপ্রেমিক তৈরি করতে পারে, আজকের বিপরীত ধর্মী নগ্ণ যৌনতা মার্কা সাহিত্য শিল্প চলচ্চিত্র সংগীত মানুষকে কি নৈতিক অধঃগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে না৷ সুশীল সমাজ একটু ভেবে দেখুন৷

আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন বড়জোর একটা সরকারকে সরিয়ে দিয়ে আর একটা সরকার এনে বসাবে৷ তাতে কি এই পাপ বন্ধ হবে? আন্দোলন চলাকালীনই বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরাখন্ডে এই জঘন্য পাপ কান্ড ঘটেছে৷ সরকার বদলালে সমাজ বদলায় না৷ এ প্রসঙ্গে এক ইংরেজ কবির কথা স্মরণ করতে হয় যার বাংলা তর্জমা করলে হয়---ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা ভিখারী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভিখারীকে চাবুক মারে৷ তারপর দিন বদলায়, ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা ভিখারী রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভিখারী ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে৷ চাবুক মারা চলতেই থাকবে৷

তাছাড়া আর.জি.কর হাসপাতালের বর্বরোচিত ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যারা নেমেছে সবার উদ্দেশ্য এক নয়৷ চামচিকে অপেক্ষায় থাকে হাতি কখন পাঁকে পড়ে৷ অনেকেই ঈর্ষায় জ্বালায় আর জি করকে অজুহাত করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শূন্যের গেরো কাটিয়ে উঠতে, কেউ বা ২০২১-২৪-এর ব্যর্থতার জ্বালা জুড়োতে৷

তাই ক্ষমতা দখলের আন্দোলন আন্দোলন খেলা যারা করছে করুক৷ যে সকল উন্নত চিন্তাশীল মানুষ, শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যারা সত্যিই সমাজ থেকে এই পাপকে নির্মূল করতে চান, সমাজের সুচিতা ফিরিয়ে আনতে চান, তাঁরা চিন্তা করুন বাস্তবোচিত কিছু করার,মানুষকে মানসিক দৈনতা থেকে, নৈতিক অধগতির পথ থেকে ফিরিয়ে এনে এক আদর্শ সমাজ গড়ার৷ এই কাজে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা দায় অস্বীকার করতে পারেন না৷