"সমস্ত দিন সংসারের ক্ষেত্রে দুঃখ দৈন মৃত্যুর আলোড়ন চলেছে, কিন্তু রোজ সকাল বেলায় একটি বাণী আমাদের এই কথাটাই বলে যায় যে, এই সমস্ত অকল্যাণই চরম নয়, চরম হচ্ছেন শিবম। প্রভাতে তারএকটি নির্মল মূর্তি কে দেখতে পাই---চেয়ে দেখি সেখানে ক্ষতির বলিরেখা কোথায়? সমস্তই পূরন হয়ে আছে। দেখি যে, বুদবুদ যখন কেটে যায় সমুদ্রের তখন কণামাত্র ক্ষয় হয় না। আমাদের চোখের উপর যতই ওলট-পালট হয়ে যাক- না তবু দেখি যে, সমস্তই ধ্রুব হয়ে আছে, কিছুই নড়েনি। আদিতে শিবম অন্তে শিবম অন্তরে শিবম।" - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
করোণা যুদ্ধে চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনো অপারগ। শিবমই মানুষের ভরসা। আনন্দমার্গ দর্শনের প্রবক্তা শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন---বিজ্ঞানী কে যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠা হতেই হবে। অর্থাৎ বিজ্ঞানকেও শিবের ওপর আস্থা রেখেই কাজ করতে হবে। নতুবা অশুভ শক্তির হাতে পড়ে বিজ্ঞান অভিশাপ হয়ে উঠবে। আজ ক্ষুদ্র এক জীবাণু যে মারণ রূপ ধারণ করেছে তার কারণ মানুষের উশৃংখল আচরণ, অসংযমী জীবনযাপন, সীমাহীন লোভ লালসা, কাঞ্চন কৌলিন্যের দর্প, ক্ষমতার আস্ফালন।
বিশ্বকবির কথাই বলি---"যখনই প্রতাপ একজায়গায় পুঞ্জিভুত হয়েছে---যখনই, কুলের, ধনের, ক্ষমতার ভাগ-বিভাগ ভেদ-বিভেদ পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান কে একেবারে দুর্লঙ্ঘ্য করে তুলেছে তখনই সমাজে ঝড় উঠেছে।"
করোণা ঝড়ের অন্যতম কারণ এটাই। বিজ্ঞানের বৈভব যতই মানুষের অঞ্জলি ভরে দিচ্ছে ততই মানুষের লোভ ক্ষুধা- নল হু হু করে বেড়ে উঠেছে। তাই শুধু করোনা নয়, এই রকম আরো অনেক মারণ রোগের জীবাণু ধেয়ে আসবে পৃথিবীর বুকে মানুষ যদি তার জীবনধারা পরিবর্তন না করে।
আনন্দমার্গ দর্শনের প্রবক্তার ভাষায়--- জীবনের দিগদর্শন হবে---Morality is the base, Sadhana is the means and life divine is the goal. আধ্যাত্বিকতার ওপর গড়ে ওঠা সংযমী সুশৃংখল সুনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা করোনার করালগ্রাস থেকে মানুষ ও তার সমাজ সভ্যতা কে বাঁচাতে পারে। বিজ্ঞান আজ নয়তো কাল এই মারণ রোগের জীবাণুর প্রতিষেধক বার করবেই। কিন্তু গত ৪০০ বছরের ইতিহাসে বারবার বিজ্ঞান কে অসহায় করে দিয়ে আসছে এই মারণ রোগের জীবাণু। আজ অর্থ বলে, অস্ত্র বলে বলিয়ান রাষ্ট্রগুলি বড় বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান তার পথে বাঁচার উপায় খুঁজুক। বিজ্ঞান কে অবহেলা নয় তবু বেঁচে থাকার পরম সার্থকতা আধ্যাত্বিক পথেই লাভ করা সম্ভব। অন্য পথ নেই।
- Log in to post comments